নিউজ ডেস্ক: ভারত–পাক সংঘাতের আবহে কলকাতার আকাশে রহস্যময় ড্রোন। সোমবার অন্তত আট থেকে দশটি ড্রোনকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় আকাশে। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের বেশ কয়েকটি থানাকে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে লালবাজার। নজরদারি শুরু হতেই ড্রোনগুলি পালিয়ে যায় বলে লালবাজার সূত্রে খবর।
শুরু তদন্ত
রাতের আকাশে রহস্যময় আলো দেখেই কলকাতা পুলিশের কর্তব্যরত আধিকারিক লালবাজার কন্ট্রোলে ফোন করেন। লালবাজার থেকে নির্দিষ্ট করে বেশ কিছু থানাকে জানানো হয়। তারপর থানার আধিকারিকরা বিষয়টি দেখার চেষ্টা করেন। রাতে দৃশ্যমানতা কম থাকায়, বিষয়টি স্পষ্ট নয়। ড্রোনের গতিতেই বস্তগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল বলে জানা গিয়েছে। বহুতলের পিছন থেকে চলে গিয়েছে আলো। ওইগুলো আদৌ ড্রোন নাকি অন্য কিছু, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সামনে এল ভারতীয় সেনার বক্তব্য
জানা গিয়েছে, যে এলাকায় রহস্যময় ড্রোন দেখা গিয়েছে, তার আশপাশে দ্বিতীয় হুগলি সেতু ও ফোর্ট উইলিয়ামের মতো জায়গা রয়েছে। কলকাতা এই সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ড্রোন ওড়াতে হলে আগে থেকে পুলিশি অনুমতি নিতে হয়। তবে পুলিশ এই ধরনের কোনও অনুমতি দেয়নি। এই আবহে এই ড্রোনগুলি কোথা থেকে এসেছিল, তা সঠিক ভাবে জানা যায়নি। পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে এই সব রহস্যময়ী উড়োযানগুলি নিয়ে। একইসঙ্গে কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে ভারতীয় সেনার সঙ্গে কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনার পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড সূত্রে খবর, ফোর্ট উইলিয়াম (বর্তমান নাম বিজয় দুর্গের) মধ্যে ড্রোন টার্গেট করা বা সেগুলোকে ট্র্যাক করার যন্ত্র রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ফোর্ট উইলিয়ামের সেই আধুনিক ব্যবস্থার মধ্যে ড্রোনের উপস্থিতি মেলেনি। তবে সেনা সূত্রে এও দেখা হচ্ছে, ড্রোন যদি সত্যি উড়ে থাকে, তাহলে ঠিক কোন দিক দিয়ে গিয়েছে। কারণ গোটা বিষয়টি নিয়ে এখনও ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতরের সেনাকর্তারা। তবে ইতিমধ্যেই ফোর্ট উইলিয়ামের তরফে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। মূলত কোন দিক থেকে উড়ে এসেছিল এবং কোন সময় দেখা গিয়েছে সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অন্তত ৪৫ মিনিট ধরে এই ড্রোনের ঘোরাফেরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে লালবাজার, সেনা ও বায়ুসেনা। এই বিষয়ে কেন্দ্র রিপোর্ট চেয়েছে কলকাতা পুলিশের কাছে। পুলিশ সূত্রে খবর, রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে কেন্দ্রকে পাঠানোর জন্য। এরপরেই সেনা সূত্রে জারি করা হয় এক বিবৃতি৷ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকে আমরা কলকাতার আকাশে কিছু ড্রোন দেখতে পাওয়ার গিয়েছে৷ আমরা ঘটনার সত্যতা যাচাই করে দেখছি৷ খুব তাড়াতাড়িই আমরা বিষয়টি নিয়ে জানাব৷ ততক্ষণ অনুরোধ, কোনও রকমের জল্পনা বা গুজব না ছড়াতে আবেদন জানাচ্ছি৷ সরকারি তথ্য পাওয়ার পর্যন্ত অপেক্ষা করুন৷’’
তবে কি এবার কলকাতাকে টার্গেট করছে পড়শি দেশ?
কিছুদিন আগেই কাশ্মীরে ড্রোনের মাধ্যমে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। তারা সফল হয়নি। তাই রাতের অন্ধকারে কলকাতার আকাশে অজানা ড্রোনের এই বিচরণের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে লালবাজার। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারাও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। যেহেতু ফোর্ট উইলিয়ামের কাছে এই ড্রোনগুলিকে উড়তে দেখা গিয়েছে, তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন ইস্টার্ন কম্যান্ডের আধিকারিকরাও।
কোন পথে উড়ল রহস্যময় ড্রোনগুলি?
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, সোমবার বেশি রাতে মহেশতলা ও বেহালার দিকে থেকে পর পর সাতটি ড্রোনকে আসতে দেখা যায়। সেগুলি প্রথমে হেস্টিংস এলাকায় ঘোরাঘুরি করে। এর পর ড্রোন চারটি ময়দানের উপর দিকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কাছে যায়। সেখান থেকে সেগুলি কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে জওহরলাল নেহেরু রোডের উপর একটি বহুতলের আশপাশে। এর পর পাঁচটি ড্রোন চলে যায় পূর্বদিক, অর্থাৎ পার্ক সার্কাসের দিকে। অন্য দু’টি ড্রোন উড়ে যায় উত্তর কলকাতার দিকে। প্রথম হেস্টিংস থানার পুলিশ এই ড্রোনগুলিকে উড়তে দেখে লালবাজারকে জানায়। এর পর সতর্ক করা হয় ময়দান-সহ অন্যান্য থানাগুলিকেও। কেউ রাতে ড্রোনগুলির সাহায্যে গোপনে কোনও ছবি তুলছিল কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। যদিও শেষ পর্যন্ত সেগুলি কোথায় পালিয়েছে, সেগুলি জানার জন্য কলকাতা পুলিশের এসটিএফ ও গোয়েন্দা বিভাগও তদন্ত করছে। এই ড্রোন পাঠানোর পিছনে চরবৃত্তির উদ্দেশ্য ছিল কি না, তাও জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নেপথ্যে কোন অভিসন্ধি?
উল্লেখ্য, ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনার সময়ই দেশের সব রাজ্যের সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল। পাকিস্তান মূলত ড্রোন হামলার চেষ্টা করেছিল বলেই জানিয়েছিল ভারতীয় সেনা। বর্তমানে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি রয়েছে। তবে ফের হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না ভারত সরকার।
যদিও বর্তমানে বহু ক্ষেত্রেই ড্রোনের ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ক্যামেরাবন্দি করতে ড্রোন ওড়ানো হয়, এমনকি পুলিশ-প্রশাসনও নজরদারি চালাতে ড্রোনের ব্যবহার করে। সোমবার রাতের ড্রোনগুলি ঠিক কী ধরনের, সেটাই বড় প্রশ্ন।