নিউজ ডেস্ক: গত সোমবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে কলকাতার আকাশে একাধিক জায়গায় অজানা উড়ন্ত বস্তু দেখতে পাওয়া গিয়েছে। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর সেগুলো ড্রোন ছিল। এবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো গঙ্গাসাগরেও।
গঙ্গাসাগরের আকাশে রহস্যজনক আলো
বুধবার রাতে যেগুলিকে দেখা গেল, সেগুলি ড্রোন কি না, জানা না গেলেও পুলিশ সূত্রে খবর, এদিন দু’ দফায় মোট ৫টি এমন উড়ন্ত বস্তু দেখা গিয়েছে। রাতে ঝড়-বৃষ্টির আগে ও পরে দু’দফায় দেখা যায় এই ড্রোন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই সেই ড্রোন দেখতেও পায়। এরমধ্যে ৩টি আকারে বড়। ইতিমধ্যে উপকূল রক্ষী বাহিনী ও নৌবাহিনীর নজরে আনা হয়েছে বিষয়টি। সুন্দরবন পুলিশ জেলা ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়েছে।
বুধবার ঝড়-বৃষ্টির রাতেই সেগুলি আকাশে উড়ছিল বলে সুন্দরবন পুলিশ জেলার গোয়েন্দা দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে। এগুলি প্রথম দেখা যায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ। তারপর ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। দ্বিতীয় দফায় সেগুলিকে আবার দেখা যায় রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ। এর মধ্যে ৩টি আকারে বড় ছিল বলে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই সুন্দরবনের সব উপকূল থানাকে সতর্ক করা হয়েছে এই বিষয়ে। আকাশ ও জলপথে সন্দেহজনক কিছু দেখলে পুলিশ সুপারের অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
স্থানীয়দের প্রাথমিক অনুমান, এটি ড্রোনের আলো। এমনকী, গঙ্গাসাগর এলাকার কপিলমুনি মন্দিরের ওপর বেশ কয়েক মিনিট এই রহস্যময় ড্রোনগুলিকে দেখা যায়। এই রহস্যময় আলো দেখে এলাকাবাসীরা ছবি মোবাইল বন্দি করেন। গঙ্গাসাগর ছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল তীরবর্তী এলাকায় অস্বাভাবিক ড্রোনের গতিবিধি লক্ষ করা গিয়েছে।
তদন্ত শুরু পুলিশের
অন্যদিকে এই ড্রোনগুলি ফ্রেজারগঞ্জ থেকেও দেখা গিয়েছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলির উপর এই ড্রোন দেখা যাওয়ায় অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এই ঘটনা কারা ঘটাল তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। তদন্তের পর জানা যাবে এই ঘটনার প্রকৃত কারণ। আপাতত ঘটনা নিয়ে সতর্ক সুন্দরবন পুলিশ জেলার পুলিশ।
রহস্যময় ড্রোন হানায় রাতবিরেতে আতঙ্ক
এ বিষয়ে এলাকাবাসীরা সুন্দরবন পুলিশ জেলার পুলিশকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সুন্দরবন পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘এরকম একটি খবর পাওয়া গিয়েছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’ এই বিষয়ে পরিবেলা গিরি নামে এক বৃদ্ধ মহিলা জানান, ‘গতকাল রাতে গঙ্গাসাগরে কপিলমুনি মন্দিরের পাশে বেশ কয়েকটি রহস্যময় আলো আমরা দেখতে পাই। আমরা প্রথম ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আলোটি উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে সরে যাচ্ছে। কিসের আলো আমরা বুঝতে পারিনি।’ এ বিষয়ে আরও এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সংঘাতের মধ্যে এই রহস্যময় আলো দেখলাম। আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে। সম্পূর্ণ বিষয় নিয়ে আমরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে জানিয়েছি। কিসের আলো আমরা বুঝতে পারছি না। সাগরদ্বীপের বাসিন্দারা কিছুটা হলেও আতঙ্কে রয়েছে এই আলোর গতিবিধি নিয়ে।’
কলকাতার আকাশে রহস্যময় ড্রোন
তবে গঙ্গাসাগরেই প্রথম নয় এর আগে সোমবার অন্তত আট থেকে দশটি ড্রোনকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় কলকাতার আকাশে। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের বেশ কয়েকটি থানাকে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে লালবাজার। নজরদারি শুরু হতেই ড্রোনগুলি পালিয়ে যায় বলে লালবাজার সূত্রে খবর। রাতের আকাশে রহস্যময় আলো দেখেই কলকাতা পুলিশের কর্তব্যরত আধিকারিক লালবাজার কন্ট্রোলে ফোন করেন। লালবাজার থেকে নির্দিষ্ট করে বেশ কিছু থানাকে জানানো হয়। তারপর থানার আধিকারিকরা বিষয়টি দেখার চেষ্টা করেন। রাতে দৃশ্যমানতা কম থাকায়, বিষয়টি স্পষ্ট নয়। ড্রোনের গতিতেই বস্তগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল বলে জানা গিয়েছে। বহুতলের পিছন থেকে চলে গিয়েছে আলো। ওইগুলো আদৌ ড্রোন নাকি অন্য কিছু, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, যে এলাকায় রহস্যময় ড্রোন দেখা গিয়েছে, তার আশপাশে দ্বিতীয় হুগলি সেতু ও ফোর্ট উইলিয়ামের মতো জায়গা রয়েছে। কলকাতা এই সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ড্রোন ওড়াতে হলে আগে থেকে পুলিশি অনুমতি নিতে হয়। তবে পুলিশ এই ধরনের কোনও অনুমতি দেয়নি। এই আবহে এই ড্রোনগুলি কোথা থেকে এসেছিল, তা সঠিক ভাবে জানা যায়নি। পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে এই সব রহস্যময়ী উড়োযানগুলি নিয়ে।
শিলিগুড়িতেও রাতের অন্ধকারে ড্রোনের হানা
ভারত–পাক সংঘাতের আবহে একের পর এক জায়গায় রাত বাড়লেই হানা দিচ্ছে রহস্যময় ড্রোন। সম্প্রতি শিলিগুড়িতেও রাতের অন্ধকারে নজরে এসেছে ড্রোনের হানা। রাতের অন্ধকারে এই ড্রোন হানা মূলত নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণ, কারণ এতে বিভিন্ন ধরণের উদ্দেশ্য থাকতে পারে যেমন- গুপ্তচরবৃত্তি, অথবা অন্য কোনো খারাপ কাজের জন্য এটি ব্যবহার করা হতে পারে।
কেন বারবার রাতের অন্ধকারে এই ড্রোন হানা?
রাতের অন্ধকারে ড্রোন ব্যবহারের কিছু সম্ভাব্য কারণ-
গুপ্তচরবৃত্তি: রাতের অন্ধকারে সহজে চোখে না পড়া এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হতে পারে।
সন্ত্রাসবাদ: কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রাতের অন্ধকারে ড্রোন ব্যবহার করে বোমা বা অন্যান্য বিস্ফোরক দ্রব্য সরবরাহ করতে পারে, অথবা হামলা চালাতে পারে।
অন্যান্য খারাপ কাজের জন্য: রাতের অন্ধকারে ড্রোন ব্যবহার করে মাদক দ্রব্য পাচার, বা অন্যান্য অবৈধ কাজের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে।
নিরাপত্তা পরীক্ষা: অনেক সময় সরকারি সংস্থাগুলি রাতের অন্ধকারে ড্রোন ব্যবহার করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাচাই করে।
তবে এই ধরনের ঘটনাগুলো শুধুমাত্র শিলিগুড়ি বা কলকাতাতেই নয়, বিভিন্ন স্থানে দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হল, রাতের অন্ধকারে ড্রোন ব্যবহার করা খুবই সহজ এবং এতে ঝুঁকিও কম থাকে। তাই, এই ধরনের ঘটনাগুলো খুবই উদ্বেগের কারণ, এবং এর পেছনে কারা জড়িত, যত দ্রুত সম্ভব তা খুঁজে বের করা জরুরি।
সেনা বাহিনীর তরফে কী জানানো হল?
অপারেশন সিন্দুরের সময় থেকেই আকাশে ড্রোনের কার্যকলাপের ওপর বিশেষ নজর রেখেছে সেনা। ভারতীয় সেনার তরফে অফিসিয়াল বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কলকাতায় ড্রোন দেখার খবর পাওয়া গেছে এবং বর্তমানে তা তদন্তাধীন। এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। ড্রোন গুলির সিগন্যাল এবং কার্যকারিতা অ্যানালিসিস করছে কলকাতা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর আধিকারিকরা। তবে কেউ ব্যক্তিগত কাজে সেই ড্রোন উড়িয়েছে নাকি এর পিছনে রয়েছে নাশকতা, সে বিষয়টি আগে নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। যেকোনো পরিস্থিতিতে কোন নাশকতামূলক কাজকে রুখতে প্রস্তুত সেনাবাহিনী ও কলকাতা পুলিশ। ঘটনার সত্যতা জানা গেলে সেই সংক্রান্ত তথ্য সবাইকে অফিসিয়ালি জানানো হবে। এই মুহূর্তে, এই ড্রোন ওড়া নিয়ে বাড়তি জল্পনা-কল্পনা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেছে সেনা।