নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে কি সেনা অভ্যুত্থান আসন্ন? সেখানকার হালচাল দেখে এমনই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বুধবারই সেনা দরবারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে মুহম্মদ ইউনূকে। তিনি যে নিছকই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান, তা তাঁকে মনে করিয়ে দিয়েছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান। কঠোর বার্তা দিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এবছরের মধ্যেই বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন করে সরকার বানাতে হবে।
ঢাকায় সেনা দরবার
ঢাকায় সেনা দরবার। এই দরবারে সেনা প্রধান কী বলেন, সেদিকে নজর ছিল সবপক্ষেরই। সেনা প্রাঙ্গনে হাজির ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূস। এদিন সেই ইউনূসকেই চরম বার্তা দেন সেনাপ্রধান ওয়াকার। বলেন, প্রথম দিন থেকেই ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। সেটাই করতে হবে। চলতি বছরের মধ্যেই ভোটপর্ব মিটিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে।
ডেডলাইন ডিসেম্বর
ডেডলাইন ৩১ ডিসেম্বর। বার্তা স্পষ্ট। এবছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন করতে হবে। এই দাবি তুলেছে সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলিও। কিন্তু নানা বাহানা করে তা পিছিয়ে দিচ্ছেন মুহম্মদ ইউনূস। এবার দরবার ডেকে সেকথাই অন্তবর্তী উপদেষ্টাকে মনে করিয়ে দিলেন ওয়াকার উজ জামান। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদায়ের পরই দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার নিদান দিয়েছিলেন ইউনূস। বলেছিলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের পরিবেশ গড়ে তুলবে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু তাঁর কথা কথাই থেকে গেছে। অবস্থার পরিবর্তন তো হয়ইনি, উল্টে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েছে। ঘরে বাইরে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ইউনূস। এদিন তাই ডিসেম্বের মধ্যেই নির্বাচন করার কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন সেনাপ্রধান।
ইউনূসের ‘কামরুল’ চাল
ক্ষমতায় এসেই লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসানকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছিলেন ইউনূস। সেই কামরুল চাইছিলেন সেনাপ্রধান ওয়াকারকে সরাতে। এই পরিকল্পনায় আমেরিকায় গিয়ে ঘুঁটি সাজান তিনি। নিজেই হতে চান সেনাপ্রধান। কিন্তু তা জানতে পেরে কামরুলকে উপদেষ্টা পদ থেকে সরাতে চান ওয়াকার। তা আটকে দেন ইউনূস। এভাবে শীর্ষ স্তরে বাদানুবাদ শুরু হয়। ছাত্রনেতাদের দিয়ে ওয়াকারের অপসারণের দাবি তোলেন ইউনূস। জামাত ঘনিষ্ঠ ফয়জুর রহমানকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল করে ওয়াকারকে চাপে ফেলা হয়। রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠিয়েও সেনাপ্রধানকে সরানোর আর্জি জানায় সরকার।
ইউনূসকে তির সেনাপ্রধানের
প্রশাসক ইউনূসের এই চাল বুঝেই এদিন পাল্টা তির ছোঁড়েন সেনাপ্রধান। অভ্যুত্থানের পথে আপাতত না হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তবে প্রবল সমালোচনা করেছেন অন্তবর্তী সরকারের। কামরুলের নাম না করেই ওয়াকার বলেন, বিদেশি নাগরিকরা বাংলাদেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ওই রাস্কেলরা দেশবিরোধী কাজকর্ম শুরু করেছে। আমি সেনাপ্রধান থাকতে ওদের সেকাজ করতে দেব না।
ইউনূসের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ৫ আগস্টের পর আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে আপনাদের ক্ষমতায় বসালাম, আর আমাকেই খুনের জন্য বিদেশি লোক আনলেন!
সেনাপ্রধান আরও বলেন, এই সরকারের ব্যর্থতায় এক দিকে দেশে অরাজক অবস্থা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে একের পর এক পোশাকের কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোনও ভ্রুক্ষেপই নেই সরকারের। চট্টগ্রাম বন্দরের বার্থগুলি বিদেশি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার এক্তিয়ার এই সরকারের নেই। কিন্তু তারা সেটাই করছে। এই সরকার দ্রুত নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিক। সেদিকে মন দিক। দ্বৈত নাগরিকের নামে বাংলাদেশে যারা অস্থিরতা ছড়িয়ে রাখছে, তাদেরও কড়া বার্তা দেন সেনাপ্রধান।
সবচেয়ে চমকে দিয়েছিল বিডিআর বিদ্রোহীদের মুক্তি। মনে আছে ২০০৯ সালের সেই রক্তাক্ত বিদ্রোহ? যেখানে ৫৭ জন সেনা অফিসার-সহ ৭৩ জন খুন হয়েছিলেন। সেই ঘটনার দোষীদেরই একে একে জেল থেকে ছাড়তে শুরু করেন ইউনূস।
তার উপর, প্রায় ৪০০ কট্টর ইসলামপন্থী, যাঁদের মধ্যে আছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেতাও—তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। হিজবুত তাহরিরের মতো দল, যাদের সঙ্গে ইউনূস সরকারের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলেই শোনা যাচ্ছে, তারাও এই মুক্তিকে স্বাগত জানায়। সেনাবাহিনীর কাছে এ একেবারে ‘লাল কাপড় দেখানোর মতো’। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হল, যখন ইউনূসের সামরিক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসান গোপনে মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে নাকি আমেরিকার কাছে নতুন সেনাপ্রধান হওয়ার অনুমোদন চাইলেন! সেনাপ্রধান ওয়াকার সেটা জানতে পেরে তাঁকে সরানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু ইউনূস তা আটকে দেন।
করিডোরে আপত্তি সেনাপ্রধানের
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ পর্যন্ত করিডর তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে মহম্মদ ইউনুসের সরকারের। তবে এই করিডোরের মাধ্যমে উত্তরপূর্ব ভারতে অশান্তি ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধান বলেন, এটা ব্লাডি করিডর। অশান্তি জিইয়ে রাখতে মার্কিনি চাল। এখানে কোনও করিডর তৈরি করতে দেবে না বাংলাদেশ সেনা।
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপকে আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়ার প্রচেষ্টাতেও আপত্তি জানিয়েছেন সেনাপ্রধান। তাঁর মতে, এটা অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার হলেই, এনিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকাকে খুশি করতে চট্টগ্রাম করিডর বানাতে চাইছে বাংলাদেশ। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ তুলে দিতে চাইছে ট্রাম্পকে। আমেরিকার বদান্যতায় যাতে নির্বাচন না করিয়েই বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকা যায়, সেই চেষ্টা করছেন ইউনূস। কিন্তু তাঁর সেই সাধে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন সেনাপ্রধান।
ইউনূসকে আল্টিমেটাম
সেনাপ্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে দেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসককে এভাবেই নিজের মত বুঝিয়ে দিয়েছেন সেনাপ্রধান। ইতিহাসের কথা মনে রেখে নিজের হাতে শাসন ক্ষমতা তুলে নেওয়ার বিপক্ষে ওয়াকার। কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে যে কোনও মুহূর্তে পরিস্থিতি ঘুরে যেতে পারে। ওয়াকার জানিয়েছেন, এবছরের মধ্যেই সাধারণ নির্বাচন করতে হবে। এব্যাপারে একমত দেশের রাজনৈতিক দলগুলিও। কিন্তু আওয়ামি লিগকে আবার নিষিদ্ধ করেছে সেদেশের সরকার। এনিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। জটিলতা তৈরি হয়েছে আমেরিকায় বসে ইউনূসের সঙ্গে কলকাঠি নাড়ানো লোকজনদের নিয়েও। তাই ওয়াকার ইউনসূকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, কোন পথে তাঁর হাঁটা উচিত। বেগতিক দেখলে পরিস্থিতিও যে বদলাবে, তার ইঙ্গিত স্পষ্টই।