নিউজ ডেস্ক: পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার যোগ্য জবাব দিয়েছে ভারত। কীভাবে সেই অভিযান চালিয়েছিল দেশের তিন বাহিনী, আজ তা-ই খোলসা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২২ এপ্রিলের হামলার জবাব দিয়েছি ২২ মিনিটে। রাজস্থানে এক জনসভায় এসে এমনটাই দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
অপারেশন সিঁদুরের পর প্রকাশ্য জনসভা মোদীর
উল্লেখ্য, বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের পর প্রকাশ্যে প্রথম জনসভা করেছিলেন রাজস্থানের বিকানেরে। অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তানকে তছনছ করে দেওয়ার পরও সেই রাজস্থানের বিকানের থেকেই প্রকাশ্য জনসভা শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বৃহস্পতিবার রাজস্থানের বিকানেরে এক জনসভা থেকে ভার্চুয়ালি ১০৩টি অমৃত ভারত স্টেশন উদ্বোধন করেন মোদী। ওই জনসভাতেই মোদী বলেন, ‘যাঁরা ভারতের মা–বোনেদের মাথার সিঁদুর মুছে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তাঁদের মোক্ষম জবাব দেওয়া হয়েছে। ২২ এপ্রিলের হামলার জবাব দেওয়া হয়েছে মাত্র ২২ মিনিটে।’
পাকিস্তানকে হুঙ্কার মোদীর
‘সন্ত্রাসবাদ’ জারি রাখলে যে ভুগতে হবে, তা আগেই বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। পহেলগাঁও হামলার পর যোগ্য জবাব দেওয়ার সেই দৃশ্যও দেখেছে দেশবাসী। তবে ফের এমন হলে, তা নিছকই আক্রমণেই থেমে থাকবে না। কারণ এর দেশবাসীর ভাবাবেগও জড়িয়ে রয়েছে। অপারেশন সিঁদুরের পর রাজস্তানের বিকানেরে এসে স্পষ্ট করলেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, ‘মোদীর শিরায় রক্ত নয়, গরম সিঁদুর বয়ে যাচ্ছে..ভারতমায়ের সেবায় বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকব! এটা শুধু আক্রোশ নয়, গোটা ভারতের রুদ্ররূপ, এটাই ভারতের আসল স্বরূপ। এটা শোধ বা বদলার খেলা নয়, এটাই ন্যায়ের স্বরূপ।” প্রধানমন্ত্রীর সাফ কথা, “পরমাণু বোমার হুমকিতে ভারত ভয় পায় না।” পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে এদিন ফের হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
‘২২ এপ্রিলের হামলার জবাব ২২ মিনিটে’: মোদী
এদিন মোদী আরও বলেন, “২২ এপ্রিল জঙ্গিরা ধর্ম জেনে আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছে দিয়েছিল। পহেলগাঁওয়ে গুলি চলেছিল, কিন্তু সেই গুলি ১৪০ কোটি মানুষের হৃদয় ফুঁড়ে দিয়েছিল। দেশবাসী চেয়েছিল তাদের এমন শাস্তি দেওয়া হোক, যা কল্পনারও বাইরে হবে। আপনাদের আশীর্বাদে ও সেনা বাহিনীর শৌর্যে আমরা সবাই সেই জবাব দিয়েছি। আমাদের সরকার তিন সেনাকেই খোলাছুট দিয়েছিল। তিন সেনা মিলে এমন চক্রব্যূহ তৈরি করেছিল যে পাকিস্তান মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে। ২২ তারিখের হামলার জবাবে জঙ্গিদের ৯টা বড় ঠিকানা ২২ মিনিটে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব ও দেশের শত্রুরা দেখেছে, সিঁদুর বারুদ হয়ে গেলে, তার ফল কী হয়।”
মুখ থুবড়ে পড়েছে পাকিস্তান
প্রতিটা সন্ত্রাসবাদের জন্যে পাকিস্তানকে বড় মূল্য দিতে হবে। পাকিস্তানের সেনাদেরই এর ভরপাই করতে হবে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মেটাবে। প্রধানমন্ত্রী এও বলেন, দিল্লি থেকে রাজস্তানের যে বিমানবন্দরে তিনি নেমেছন, এটিও নিশানা করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু সফল হয়নি। সামান্যটুকুও ক্ষতি করতে পারেনি। তিনি পাক প্রধানমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দেন, এখান থেকে কিছু দূরেই রয়েছে পাকিস্তানের এয়ারপোর্ট! ইতিমধ্যেই ICU -তে পড়ে রয়েছে বলে কটাক্ষ করেন তিনি।
সন্ত্রাস বন্ধ না করলে পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসা বা অন্য কোনও আলোচনা হবে না: মোদী
এদিন মোদী রীতিমতো হুঙ্কার দিয়ে জানান সন্ত্রাস বন্ধ না করলে পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসা বা অন্য কোনও আলোচনা হবে না। মোদী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সামনাসামনি লড়াই হলে পাকিস্তান কোনওদিনই জিতবে না। মোদীর কথায়, ‘যাঁরা নিজেদের অস্ত্র নিয়ে গর্ব করত, তাঁরা আজ হতাশায় ভুগছে।’ মোদীর সাফ কথা, “গোটা বিশ্বে পাকিস্তানের মুখোশ খোলা হবে। কোনটা স্টেট অ্যাক্টর কোনটা নন স্টেট অ্যাক্টর এসব চলবে না। ওদের সঙ্গে ট্রেন নয়, ওদের জল দেওয়া নয়, কোনওরকম কোনও আলোচনা নয়।”
প্রসঙ্গত, অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন নিয়মিত দিল্লিতে সক্রিয় ছিলেন মোদী। প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখতেন প্রতিরক্ষামন্ত্রক, বিদেশমন্ত্রক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, তিন বাহিনী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আধিকরিকদের সঙ্গে। এর আগে জাতির উদ্দেশে ভাষণেও ভারত সরকারের অবস্থান তুলে ধরেছেন। তবে রাজস্থানের সভায় রীতিমতো আগ্রাসী মেজাজে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রীকে।