নিউজ ডেস্ক: প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ২ বছরের মধ্যেই বাস্তব রূপ পেল অমৃত ভারত স্টেশন।২০২৩ সালের আগস্টেই এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আর আজ নতুন রূপে খুলে গেল ১০৩টি অমৃত ভারত রেলওয়ে স্টেশন। এগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে আছে ৩টি স্টেশন।
বাংলার কোন ৩ স্টেশন?
বাংলার ৩টি স্টেশন জায়গা পেয়েছে এবারের উদ্বোধনে। এগুলি হল পানাগড়, কল্যাণী ঘোষপাড়া এবং জয়চণ্ডী পাহাড় স্টেশন। বৃহস্পতিবার বিকানের থেকে ভারতজুড়ে ১০৩টি পুনর্নির্মিত অমৃত ভারত স্টেশনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।এই নতুন বা পুনর্গঠিত স্টেশনগুলি দেশের ১৮টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৮৬টি জেলায় অবস্থিত। গোটা প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পানাগড়, কল্যাণী ঘোষপাড়া এবং জয়চণ্ডী পাহাড় এই তিন রেল স্টেশন। পানাগড় এবং কল্যাণী ঘোষপাড়া পূর্ব রেলওয়ের আওতায়। জয়চণ্ডী পাহাড় দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের অংশ।এই স্টেশনগুলিতে এখন উন্নত যাত্রী সুযোগ-সুবিধা, প্রবীন নাগরিকদের জন্য সুবিধা প্রদান, আধুনিক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে। স্টেশনগুলিতে আধুনিকতার সঙ্গে মিশে গিয়েছে স্থানীয় সংস্কৃতি।
পানাগড় স্টেশন
রাজ্যের তিনটে রেল স্টেশন অমৃত ভারত প্রকল্পের (Amrit Bharat Scheme) আওতায়। তার মধ্যে পড়ে পানাগড় রেল স্টেশন। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের মত পানাগড়ে রয়েছে বিভিন্ন শিল্পতালুক। এর সঙ্গে সামরিক বাহিনীর ঘাঁটি, বিমান ঘাঁটি। প্রচুর মানুষের যাতায়াত এই পানাগড় রেল স্টেশন দিয়ে।
এই স্টেশনটি পশ্চিম বর্ধমান জেলায় অবস্থিত এবং এটি আশপাশের অঞ্চলের বাণিজ্য ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। অমৃত ভারত প্রকল্পের আওতায় পানাগড় স্টেশনে আধুনিক টিকিট কাউন্টার, প্রতীক্ষাগার, পরিচ্ছন্ন শৌচাগার, এবং উন্নত প্ল্যাটফর্মের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়াও, যাত্রীদের সুবিধার জন্য ওয়াই-ফাই, ডিজিটাল তথ্য প্রদর্শনী বোর্ড এবং লিফট ও এসকেলেটরের মতো আধুনিক সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। স্টেশনের সৌন্দর্যায়নের জন্য স্থানীয় শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে, যা পানাগড়ের ঐতিহ্যকে তুলে ধরবে।
কল্যাণী ঘোষপাড়া স্টেশন
অমৃত ভারত প্রকল্পের অধীনে সেজে ওঠা কল্যাণী ঘোষপাড়া স্টেশনে যাবতীয় পরিষেবার উদ্বোধন হল। ভার্চুয়াল মাধ্যমে এর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কল্যাণী ঘোষপাড়া স্টেশনটি কল্যাণী থেকে কল্যাণী সীমান্ত স্টেশনের মাঝে অবস্থিত। সারাদিনে ১৪টি করে আপ ও ডাউন ট্রেন কল্যাণী ঘোষপাড়া স্টেশন দিয়ে চলাচল করে। এই স্টেশনের পাশেই রয়েছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কল্যাণীর সরকারি আইটিআই। প্রচুর পড়ুয়া, অধ্যাপক, অধ্যাপিকারা এই স্টেশন ব্যবহার করেন। এছাড়া সতীমায়ের মেলার জন্যও পরিচিত এই স্টেশন। শিয়ালদহ ডিভিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, স্টেশন ভবনের পরিকাঠামো বদল, বিশ্রামাগার, শেডের উন্নয়ন, জিপিএস ঘড়ি, শৌচাগার, বসার আসন, পানীয় জল সবই আধুনিক মানের করে তৈরি করা হয়েছে। এই ডিভিশনে মোট ১৮টি স্টেশন আধুনিক করা হচ্ছে। তার মধ্যে এই স্টেশনটি অন্যতম। এরমধ্যেই এই স্টেশনটি সতীমায়ের নামে করার দাবি উঠেছে।
জয়চণ্ডী পাহাড় স্টেশন
পুরুলিয়ার জয়চণ্ডী পাহাড় স্টেশন যাত্রী এবং মাল পরিবহনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে কাজ করে। উন্নত যাত্রী সুবিধা প্রদানের জন্য আদ্রা বিভাগের স্টেশনের পুনর্নির্মাণ রেকর্ড সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। পুরুলিয়ায় যাঁরা বেড়াতে যান, তাঁরা এই স্টেশনের সুবিধা পাবেন। সেই সঙ্গেই এলাকার উন্নয়নও সম্ভব হবে।
জয়চণ্ডী পাহাড় স্টেশনে লিফট, সংস্কার ও উন্নত স্টেশন কনকোর্স, বিশ্রাম কক্ষ, ডরমেটরি, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ওয়েটিং রুম , গ্রানাইট দিয়ে উন্নত প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদি আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
১১০০ কোটি টাকায় ১০৩ স্টেশন
রাজস্থানের বিকানেরে এক অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১০৩টি অমৃত রেলওয়ে স্টেশন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ১৮ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৮৬টি জেলায় অবস্থিত এই স্টেশনগুলি ১,১০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে। অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্পের অধীনে আঞ্চলিক স্থাপত্য প্রতিফলিত করে এবং যাত্রী সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ডিজাইন করা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সহ ১,৩০০ টিরও বেশি স্টেশন পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেল মন্ত্রকের মুখপাত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজস্থানের বিকানেরে দেশনোকে রেল স্টেশনের উদ্বোধন করেন, যা ABSS-এর অধীনে পুনর্নির্মিত এবং স্টেশন থেকে বিকানের-মুম্বাই এক্সপ্রেস ট্রেন পরিষেবা (২১৯০৩) চালু করেন। স্টেশনটি এখানে করণী মাতা মন্দিরে আসা তীর্থযাত্রী এবং পর্যটকদের জন্য বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা নেবে বলেই বিশ্বাস। শুধু তাই নয় এই স্টেশনটির নির্মাণকাজ মন্দির স্থাপত্য দ্বারা অনুপ্রাণিত, যার একটি খিলান এবং স্তম্ভের আদলের থিমে তৈরি।
অমৃত ভারত স্টেশন স্কিম কী?
অমৃত ভারত স্টেশন স্কিম হল ভারতীয় রেলওয়ের একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প যার লক্ষ্য সারা দেশের ১,৩০০ টিরও বেশি রেলওয়ে স্টেশনের রূপান্তর ঘটানো। এই স্কিমটি আধুনিক সুযোগ- সুবিধা, আঞ্চলিক স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য এবং যাত্রী-কেন্দ্রিক পরিষেবাগুলিকে একীভূত করার উপর নজর দিচ্ছে। ফলে স্টেশনগুলি হয়ে উঠছে শহরগুলির প্রবেশদ্বারও। অমৃত ভারত স্কিমে স্টেশন পুনর্নিমাণের পাশাপাশি বাস এবং মেট্রোর মতো অন্যান্য পরিবহন পদ্ধতির সঙ্গে একত্রিত করার উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা রাখা, স্টেশনকে পরিবেশ বান্ধব করে তোলা, শব্দদূষণ মুক্ত ট্র্যাকের উপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে এই স্কিমে।এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল ভারতজুড়ে স্টেশনগুলিকে আরও পরিষ্কার, আরও আরামদায়ক এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহজ করে তোলা। এরমধ্যে প্রবেশ এবং প্রস্থান, ওয়েটিং রুম, শৌচাগার, প্ল্যাটফর্ম উন্নত করা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাছাড়া, যেখানে প্রয়োজন সেখানে লিফট, এসকেলেটর এবং বিনামূল্যে ওয়াই-ফাইয়ের মতো সুযোগ সুবিধা পাওয়া হবে। কিছু স্টেশনে এক্সিকিউটিভ লাউঞ্জও রাখা হবে। এই প্রকল্পে মোট ৩৭টি স্টেশন পেতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ । রাজ্যের ১২টি জেলার কোনও না কোনও স্টেশন এই প্রকল্পের আওতায় থাকছে।