নিউজ ডেস্ক: কেটে গিয়েছে অনেকগুলো দিন, নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনও অন্ধকারেই রয়েছেন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীরা। তবে এরমাঝেই এবার হাইকোর্টের রায়ে কিছুটা স্বস্তি মিলল। বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থানরত আন্দোলনকারী এবং এফআইআর-এ নাম থাকা কোনও চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করতে পারবে না পুলিশ। তবে তদন্ত চলবে। পুলিশকে ধীরে চলো নীতি নিয়ে চলতে হবে- সম্প্রতি এমনই নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।
সেন্ট্রাল পার্কে আন্দোলন করার প্রস্তাব হাইকোর্টের
একইসঙ্গে হাইকোর্ট নির্দেশ দিল, যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ ২০১৬-র সদস্যরা সেন্ট্রাল পার্কের সুইমিং পুল লাগোয়া অঞ্চলে অবস্থান বিক্ষোভ করতে পারবেন। পর্যায়ভিত্তিকভাবে ২০০ জন ব্যক্তি থাকতে পারবেন।
এই বিষয়ে আন্দোলনকারীদের তরফে দায়বদ্ধ ১০ আন্দোলনকারীর নাম আজকের মধ্যেই পুলিশকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আদালত জানিয়েছে, আন্দোলন মঞ্চের জন্য সেন্ট্রাল পার্কে আচ্ছাদন দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে হবে। থাকতে হবে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থাপনা। পর্যাপ্ত বায়ো টয়লেটের ব্যবস্থাপনা।
একনজরে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের মন্তব্য :
আপনারা কোন নথিভুক্ত সংগঠন নন। আপনারা পরিস্থিতির চাপে পড়ে এই ধরনের আন্দোলন করছেন।
সুইমিং পুল সংলগ্ন সেন্টাল পার্ক ও বিকাশ ভবনের বিপরীতে অবস্থান করতে পারবেন।
নিজেদের মধ্যে ১০ জন প্রতিনিধিকে আপনারা ঠিক করুন। তাঁদের নাম পুলিশের কাছে জমা রাখতে হবে।
১২ ঘণ্টা করে রোটেশনালি এই ১০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে হবে।
দশজনের অধীনে ২০০ জন ওই বিক্ষোভ অবস্থান করতে পারবে।
২০০ জনের বেশি অবস্থান করতে পারবেন না। ১২ ঘণ্টা করে রোটেশনালি তারা অবস্থান করতে পারবে।
২০০ জনের বাইরে যদি কেউ উপস্থিত থাকে তিনি তাঁর নিজের দায়িত্বে থাকবে।
পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে অবস্থানরত শিক্ষকরা শান্ত থাকবেন।
উপযুক্ত পুলিশি ব্যবস্থা রাখতে হবে।
পুলিশ এসে প্রথমে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার আগে ওই ১০ জন প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
অবস্থান মঞ্চের বাইরে কেউ গণ্ডগোল করলে পুলিশ এসে জানাবে আপনাদের কিসের জন্য তারা পদক্ষেপ করছে।
কেন চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর?
সম্প্রতি চাকরিহারা শিক্ষকদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে দিনভর বিকাশ ভবনের সামনে উত্তেজনা ছড়ায়। বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত যাওয়ার পর উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে। চাকরিহারা শিক্ষকরা দাবি করেন, সব্যসাচীর অনুগামীরা এ দিন পুলিশের সামনেই আন্দোলনকারীদের মারধর করেন। একাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন। রক্ত ঝরে শিক্ষকদের। চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর লাঠিচার্জের অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধেও। একাধিক জন আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল বিকাশ ভবন চত্বরে। তবে এদিন সন্ধে গড়াতেই পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শুরু করে। সন্ধ্যা ৭.৩০ এর পর ঘটনাস্থল থেকে চাকরিহারাদের টেনে হিঁচড়ে বের করতে শুরু করে পুলিশ। তখনই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতেই পাল্টা অভিযোগ এনে বিধাননগর পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে স্বতঃ প্রণোদিত মামলা করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া এবং অবৈধভাবে সরকারি কর্মীদের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এছাড়াও একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
চাকরিহারা শিক্ষকদের শোকজ নোটিশ- মধ্যশিক্ষা পর্ষদের
এসআইআর এর পাশাপাশি এই ঘটনায় চাকরিহারা শিক্ষকদের শোকজ নোটিশ ধরানো হয়েছে পর্ষদের তরফে। সূত্রের খবর, আগামী সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। এমনও খবর, সে দিন দীর্ঘ সময় ভিতরে আটকে ছিলেন সরকারি কর্মীরা। ভাঙা হয়েছিল বিকাশ ভবনের গেট। এই ঘটনায় বেশ কয়েক জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও খবর। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা, বেআইনি ভাবে সরকারি কর্মীদের আটকে রাখার কী কারণ, তা জানতে চাওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে। তবে পুলিশের এই পদক্ষেপকে ধিক্কার জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের বক্তব্য, “আমরা কোনও ভাঙচুর করিনি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলাম। পুলিশ কয়েকটা ছবি নিয়ে এখন আন্দোলনকে বিমুখ করার চেষ্টা করছে। এভাবে আমাদের আটকাতে পারবে না। আমাদের হকের চাকরি ফিরিয়ে দিতেই হবে।”
এসবের মাঝেই এদিন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ নির্দেশ দেন, এফআইআর-এ নাম থাকা কোনও চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করতে পারবে না পুলিশ। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের শোকজ নোটিশ নিয়েও স্বস্তি পেলেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। তবে এদিন চাকরিহারা শিক্ষকদের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, “আপনাদের প্রতি সবাই সমব্যথী। আইন – শৃঙ্খলার অবনতি যেন না হয় সেটা খেয়াল রাখুন। এমন ব্যবহার করুন যাতে শিক্ষকদের সম্মান থাকে।”
উল্লেখ্য, উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে গত বৃহস্পতিবার নির্ধারিত সময়ে বিধাননগর উত্তর থানায় হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল এবং সুদীপ কোনাররা। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এদিন চাকরিহারা আন্দোলনকারী শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল বলেন, “আমাদের এই আন্দোলনকে ভাঙার চেষ্টা চলছে। মামলা মোকদ্দমা দিয়ে এই আন্দোলনকে কিছুতেই দমিয়ে রাখা যাবে না।”