নিউজ ডেস্ক: ব্যর্থতার অন্ধকারে ঢেকে শেষে ইস্তফা দিতে চলেছেন ইউনূস? তিনি বুঝে গেছেন যে বাংলাদেশে যা চলছে, তাতে আর কিছুদিনই মাত্র আর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন? সেনাপ্রধানের ডেডলাইনের পর এবার চাপ আসছে বিএনপি-র কাছ থেকে। সবমিলিয়ে পদত্যাগের চিঠি তৈরি করে ফেলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা!
ইস্তফার ইচ্ছা কাদের কাছে?
কো-অপারেটিভ চালানো আর দেশ চালানো যে এক নয়, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন মুহম্মদ ইউনূস। চারদিকে হাওয়া গরম হচ্ছে বুঝেই তিনি পদত্যাগ করতে চাইলেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় বসেন ইউনূস। সেখানেই তিনি ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।জানান, চারদিকে যা চলছে, তাতে তিনি হতাশ। সংবাদমাধ্যমের কাছে একথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছাত্র আন্দোলনের নামে শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়া করে এঁরাই ইউনূসকে মুখ্য উপদেষ্টা পদে বসান। উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে ইউনূস প্রস্তাব দেন, নতুন করে আর একটি অন্তর্বর্তী সরকার গড়তে। বলেন, তিনি আর থাকতে চান না। প্রশাসন চালাতে কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে, তা জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানাতেও চান ইউনূস। তবে সকলের আর্জিতে সেই ভাষণের ইচ্ছা আপাতত চেপে রেখেছেন। তবে, পদত্যাগ করার জন্য তাঁর ইস্তফাপত্র যে তৈরি, সেকথাও জানিয়ে দিয়েছেন।
কী বলছে বিএনপি?
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। এটিই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
কী বার্তা সেনাপ্রধানের?
প্রশাসনের উপদেষ্টা মণ্ডলীর বৈঠকের আগেই ইউনূসকে কড়া বার্তা দেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান। ঢাকায় সেনা দরবার ডেকে ইউনূসকে পাশে বসিয়ে তিনি স্পষ্ট করে দেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন করতে হবে। নতুন সরকারই দেশের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে। তার আগে দেশের বাইরে থেকে যারা বাংলাদেশে কলকাঠি নাড়ছে, তা বন্ধ করতে হবে। সেনাপ্রধান বলেন, প্রথম দিন থেকে১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। সেটাই করতে হবে। চলতি বছরের মধ্যেই ভোটপর্ব মিটিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে।
সেনাপ্রধান আরও বলেন, এই সরকারের ব্যর্থতায় এক দিকে দেশে অরাজক অবস্থা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে একের পর এক পোশাকের কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোনও ভ্রুক্ষেপই নেই সরকারের। চট্টগ্রাম বন্দরের বার্থগুলি বিদেশি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার এক্তিয়ার এই সরকারের নেই। কিন্তু তারা সেটাই করছে। এই সরকার দ্রুত নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিক। সেদিকে মন দিক। দ্বৈত নাগরিকের নামে বাংলাদেশে যারা অস্থিরতা ছড়িয়ে রাখছে, তাদেরও কড়া বার্তা দেন সেনাপ্রধান।
ইউনূসের স্বপ্নভঙ্গ !
ইউনূস একাধিক বার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। কিন্তু এই নির্বাচন নিয়েও বৃহস্পতিবারের বৈঠকে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। দেশের যা পরিস্থিতি, তাতে নির্বাচন হলে তা আদৌ অবাধে এবং সুষ্ঠু ভাবে হবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নন খোদ প্রধান উপদেষ্টাই। সূত্রের খবর, ভোটে ব্যালট ছিনতাই আটকানো যাবে কি না, পুলিশ আদৌ ব্যালট ছিনতাই আটকাতে পারবে কি না, ইউনূস নিজেই তা নিয়ে সন্দিগ্ধ। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে ব্যর্থতা, কাঙ্ক্ষিত সংস্কারে ব্যর্থতার দায় তিনি নিতে চান না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
কী বলছে এনসিপি?
জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি-র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম চাইছেন, বাংলাদেশের সবকটি রাজনৈতিক দল যেন ইউনূসের পাশে দাঁড়ায়। কারণ, ইউনূস বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর যেভাবে তাঁকে আনা হয়েছিল, সেই পরিবর্তন বা সংস্কার হয়নি। এর জন্য তাঁকেই সবাই দায়ী করছে। এভাবে তিনি কাজ করতে পারবেন না। এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে এনসিপিও। তারা বুঝতে পারছে, বিদ্রোহ করা আর দেশ চালানো এক জিনিস নয়। তাই সব রাজনৈতিক দলের কাছেই সহযোগিতার আর্জি জানিয়েছে তারা।
কোন পথে খালেদার পার্টি?
বিএনপি এরমধ্যেই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে তারা সমর্থনের বিষয়টি চিন্তাভাবনা করবে। এরমধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে তারা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণের প্রতিবাদে, বিএনপি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের ইস্তফার দাবি জানায়।এই দাবির প্রতিক্রিয়ায়, জাতীয় নাগরিক পার্টির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টাকে ‘বিএনপির মুখপাত্র’ হিসেবে উল্লেখ করে পদত্যাগে বাধ্য করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওই তিন উপদেষ্টা হলেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। নিরাপত্তা উপদেষ্টা খালিলুর রহমানেরও পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি।
বিএনপিকে সমর্থন আওয়ামি লিগের?
বাংলাদেশ সূত্রে যা ইঙ্গিত মিলছে, তাতে সেদেশের নির্বাচনে বিএনপিকে বাইরে থেকে সমর্থন করতে পারে আওয়ামি লিগ। সেদেশে এখন আওয়ামি লিগ নিষিদ্ধ। তাই তারা ভোটে লড়তে পারবে না। সেক্ষেত্রে পুরনো দুই দলের যদি জোট হয়, তাহলে চাপে পড়ে যাবে এনসিপি। সেই ভয়েই কি এখন থেকে পদত্যাগ পত্র লিখে রাখছেন মুহম্মদ ইউনূস? রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে।