নিউজ ডেস্ক: সামনের বছরেই বিধানসভা ভোট, আর তার আগেই ফের একবার শিরোনামে এল ভুয়ো ভোটারের প্রসঙ্গ। ভুয়ো ভোটার নিয়ে বিতর্কের এই আবহেই সামনে এসেছে আরেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। ইতিমধ্যেই মধ্যেই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে জমা পড়েছে রিপোর্ট। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, পাসপোর্ট বাংলাদেশের হলেও পশ্চিমবঙ্গের ভোটার, এমন অন্তত ৫০ জনের নাম মিলেছে। ঘটনা সামনে আসতেই ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারদের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন CEO।
হাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট অথচ পশ্চিমবঙ্গের ভোটার
সূত্রের খবর, এই নথিতে দেখা যাচ্ছে কারও কাছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট, অথচ ভোটার কার্ড পশ্চিমবঙ্গের ঠিকানায়। কেউ হয়তো বাংলাদেশের নাগরিক, অথচ আধার কার্ডের ঠিকানা এ রাজ্যের। সূত্রের খবর, মূলত দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া-এই ৩ জেলা থেকেই সবথেকে বেশি অভিযোগ এসেছে। আশ্চর্যের বিষয় হল, অনুসন্ধানের জন্য ডেকে পাঠালেও, বেশিরভাগ ব্যক্তিরই কোনও হদিশ মিলছে না। এ যেন যথার্থই ভূতুড়ে ভোটার।
ভুয়ো ভোটার
তবে এই ঘটনা প্রথম নয়, এর আগেও ভুয়ো ভোটার ইস্যুতে বারবার তোলপাড় হয়েছে এ রাজ্যের রাজনীতি। সর্ষের মধ্যেই কি লুকিয়ে আছে ভূত? সম্প্রতি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় একজন সরকারি অফিসারের সাসপেন্ড হওয়ার ঘটনা এই প্রশ্নটাই তুলে দিয়েছে। ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস থেকে প্রায় প্রতিদিনই মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে তথ্য পাঠানো হচ্ছে।
তবে প্রশ্ন হল এই ভুয়ো ভোটারদের ভোটার তালিকায় ঢুকিয়েছিল কারা? এরা ভোটার তালিকায় ঢুকলে কাদের লাভ? কী উদ্দেশ্য এই ভূতুড়ে ভোটারদের? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত,ক’দিন আগেই নদিয়ার শুধুমাত্র কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকা থেকেই বাদ পড়েছে প্রায় ৬ হাজার নাম। যার মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ জনই মৃত। দু’জায়গায় নাম ছিল ১৬ জনের। ২ হাজার ৩৯৪ জন ওই ঠিকানাতেই আর থাকেন না। তাই ভুয়ো ভোটারের সমস্যা দূর করতে ২০২৩ এর পর অনলাইনে ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে যত কাজ হয়েছে তার সবিস্তারে রিপোর্ট চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আসলে ভোটার কার্ড হল, নাগরিকদের সচিত্র পরিচয়পত্র। যা নিয়ে দেশের যে কোনও জায়গায় ঘোরা যায়। সেই পরিচয়পত্র জঙ্গিদের হাতে, কিংবা সাম্প্রতিক আবহে কোনও পাকিস্তানি নাগরিকদের হাতে সেই নথি পৌঁছে যাওয়া যে ভয়ঙ্কর, সেকথা এক বাক্যে স্বীকার করছেন সকলে। কিন্তু, এরকমটা ঘটল কীকরে? পশ্চিমবঙ্গে জাল ভোটার কিংবা জাল আধার তৈরি করা কি এতই সহজ? কোথায় কারা এই চক্র চালাচ্ছে পুলিশ কি জানে না? এ ধরনের ঘটনা ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়ে গেছে।
নিয়ম না মেনে এখনও ভারতে লুকিয়ে কারা?
প্রসঙ্গত, এমাসের শুরুতে ৫ জন বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করা হয় অসমে। অসমের সালমারা জেলায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছিলেন তাঁরা। অন্যদিকে, গত মাসে দিল্লি পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৬ জন অবৈধ অনুপ্রেবশকারীকে গ্রেফতার করে। এই ৬ বাংলাদেশী মানবপাচারের সঙ্গেও যুক্ত ছিল। বাংলাদেশ থেকে এদেশে এসে পাচার করত। কোনও বৈধ নথি ছাড়াই তাঁরা এদেশে বাস করছিল। পাশাপাশি এপ্রিল মাসে গুজরাত থেকে একদিনে এক হাজার বাংলাদেশী অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করা হয়। একইসঙ্গে আমেদাবাদ পুলিশ গ্রেফতার করে ৮৯০ জনকে। সুরাত পুলিশ গ্রেফতার করে ১৩৪ জন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে।
ফেরত পাঠানো হবে বহু বাংলাদেশিকে
এ ঘটনার পর এবার দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশী অনুপ্রেবশকারীদের ওদেশে ফেরাতে চায় ভারত। সংশ্লিষ্টরা আদৌ সেদেশের নাগরিক কিনা যাচাইয়ের জন্য ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে প্রক্রিয়া শুরুর আবেদন জানিয়েছে ভারত।
এদিন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, ভারতে যাঁরা অবৈধভাবে রয়েছেন, তাঁরা বাংলাদেশী হোন বা অন্য দেশের নাগরিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী নাগরিক যাঁরা ভারতে রয়েছেন, তাঁদের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। তাঁদের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কথা বাংলাদেশকেও বলা হয়েছে। ২৩৬০ থেকেও বেশি নাগরিককে নির্বাসিত করার প্রয়োজন রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ জেল খেটেছেন। কারও আবার নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রক্রিয়া ২০২০ সাল থেকে স্থগিত রয়েছে।