নিউজ ডেস্ক: ঘরে ফিরছে ঘরের ছেলে। অবশেষে দেশে ফেরার ৯ দিন পর নিজের বাড়ি ফিরছেন পাকিস্তানে বন্দি বিএসএফ জওয়ান। শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটের পর হাওড়া স্টেশনের ১৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পৌঁছন পূর্ণম কুমার সাউ। আর কিছুক্ষণের মধ্যে হুগলির রিষড়ার বাড়িতে পৌঁছনোর কথা তাঁর। বাড়িতে অপেক্ষায় তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। বলছেন, “ঠিক যেন রাম আসছেন।”
পাক রেঞ্জার্সের হাতে আটক বাংলার বিএসএফ জওয়ান
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে বৈসরন ভ্যালিতে জঙ্গি হামলায় মারা যান ২৬ পর্যটক। ঠিক তার পরেরদিন পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে ভারত–পাক সীমান্তে ডিউটি করার সময় অসাবধানতাবশত পাক ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েন ২৪ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের বিএসএফ কনস্টেবল পূর্ণম কুমার সাউ। গাছের তলায় বিশ্রাম নেওয়ার সময় পাক রেঞ্জার্সের হাতে বন্দি হন তিনি। সেই থেকে পাক রেঞ্জার্সদের হাতে ২২ দিন আটকে ছিলেন পূর্ণম। এরপর পূর্ণমকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বারবার ফ্ল্যাগ মিটিং হয়েছিল। তাও ছাড়েনি পাকিস্তান। গায়ের জোরে বিএসএফ জওয়ানকে আটকে রেখেছিল। অত্যাচার করেছিল। স্নান করতে দেয়নি। জল পান করতে দেয়নি। এমনকী খাবারও দেয়নি বলে ছাড়া পেয়ে অভিযোগ করেছিলেন বিএসএফ জওয়ান।
বিএসএফের পক্ষ থেকে পূর্ণমের পরিবারকে আশ্বস্ত করা হয় যে কোনও মূল্যে তাঁকে দেশে ফেরানো হবে। পূর্ণম আটক হওয়ার কয়েকদিন পরেই পাঠানকোট গিয়ে হাজির হন তাঁর স্ত্রী রজনী সাউ সহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য। ঠিক এই সময়েই জঙ্গি হামলার বদলা নিতে অপারেশন সিঁদুর শুরু করে ভারত। পাকিস্তান ভূখণ্ডে থাকা নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় বায়ুসেনা। পাল্টা প্রত্যাঘাত হানার চেষ্টা করে পাকিস্তান। যদিও তারা ব্যর্থ হয়। এদিকে ভারত–পাকিস্তান সংঘাতের আবহে বিএসএফ জওয়ানের পরিবারে উৎকণ্ঠা এবং উদ্বেগ বাড়তে থাকে। এরপর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি একাধিকবার পূর্ণমের স্ত্রীকে ফোন করে আশ্বস্ত করেন। শ্রীরামপুরে সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জিও বিএসএফের ডিজির সঙ্গে কথা বলেন। এর পরপরই পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা হয়। দুই দেশের ডিজিএমওদের মধ্যে হট লাইনে মিটিং হয়। এরপরে নতুন করে পূর্ণম সাউয়ের মুক্তির ব্যাপারে আশার আলো দেখে পরিবার। অবশেষে গত ১৪ মে পূর্ণম সাউকে মুক্ত করে পাক রেঞ্জার্স। ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরেন বীর জাওয়ান।
যদিও পূর্ণমকে সঙ্গে সঙ্গেই বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়নি। কিছু স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়। অবশেষে এক মাস পর শুক্রবার রিষড়ার বাড়িতে ফিরছেন বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম সাউ।
কী বললেন জওয়ানের স্ত্রী ও মা?
ছেলে ঘরে ফেরার খবরে সকাল থেকেই খুশির হাওয়া বাড়িতে। পূর্ণমকে স্বাগত জানাতে তাঁর বাড়ি তো বটেই, গোটা রিষড়া আলোয় সেজে উঠেছে৷ রিষড়া স্টেশন রোড জুড়ে পূর্ণম কুমার সাউয়ের বড়-বড় পোস্টার৷ বিএসএফ জওয়ানকে স্বাগত জানাতে আতশবাজির ব্যবস্থাও করা হয়েছে৷ রান্না হচ্ছে পূর্ণমের প্রিয় লুচি-তরকারি। এসেছে প্রিয় দই-মিষ্টি। বাড়ি ভর্তি আত্মীয়-পরিজনে। ঘর সাজিয়ে স্বামীর প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছিলেন স্ত্রী। বাড়ি ফেরার খবরে স্ত্রী রজনী বলেন, “আজকে তেইশ তারিখ৷ ঠিক একমাস আগে পূর্ণম পাকিস্তান রেঞ্জার্সের হাতে আটক হয়েছিলেন৷ আজ আমাদের কাছে দীপাবলির মতোই আনন্দের দিন৷” এখন স্বামীর বাড়ি ফিরে আসার পথ চেয়ে আছেন তিনি। বাবা–মা বলছেন, ছেলে তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে আসুক। তবে পূর্ণমের বাবা–মা আগেই জানিয়ে রেখেছেন ছেলেকে আবার দেশরক্ষার কাজে পাঠাবেন।
এত বড় বিপদের পরেও নিজের কর্তব্যে অনড় পূর্ণম
তবে এত বড় বিপদের পরেও নিজের কর্তব্যে অনড় পূর্ণম। তিনি যে অকুতভয় তাও বললেন সোচ্চারে। বীরদর্পে বলে উঠলেন, “ফের কাজে যাব। আগেও কখনও ভয় পাইনি, এখনও পাচ্ছি না, পরেও পাব না।”