নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের পাশাপাশি এরাজ্যেও হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। তাই এবার তৃণমূল শাসিত পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে, তার প্রতিবাদে পোস্টার পড়ল বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে। লখনউ শহরের একাধিক জায়গায় বিশ্ব হিন্দু রক্ষা পরিষদ নামে একটি সংগঠনের তরফে এমনই পোস্টার দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুরা বিপন্ন, এই অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার ওই সংগঠনের তরফে জন আক্রোশ যাত্রার ডাক দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব হিন্দু রক্ষা পরিষদ সূত্রে খবর, লখনউ থেকে মিছিল শুরু হয়ে তা পৌঁছবে বাংলায়।
এই যাত্রাপর্বে হিন্দু সুরক্ষায় একটি হেল্পলাইন ঘোষণার কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংগঠন সূত্রে খবর, শুধুমাত্র হিন্দু হওয়ার জন্য কেউ যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তাহলে ওই হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানানো যাবে। লখনউয়ে দেওয়া পোস্টারে লেখা হয়েছে, এবার থেকে মুর্শিদাবাদেও হিন্দুরা সুরক্ষিত থাকবে। লখনউ থেকে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত সনাতন ফৌজ তৈরি। ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। রাজ্যে বিজেপির তরফে জন আক্রোশ যাত্রা কর্মসূচিকে স্বাগত জানানো হয়েছে। অন্যদিকে বিষ ছড়ানোর রাজনীতি বলে পাল্টা কটাক্ষ করেছে তৃণমূল।
রাজ্যে হিন্দুদের উপর হামলা
বাংলায় হিন্দুদের উপর বার বার হামলায় শাসকদলের কোনো সরব প্রতিবাদ নেই, নেই আপনি নিরাপত্তার জোঁ।সার্বভৌম রাষ্ট্রে কতদিন আর ভুগতে হবে হিন্দুদের? বিরোধীদের অভিযোগ, এ রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চলছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার এই হিংসা নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। হিন্দুদের উপাসনালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর এবং হামলার ঘটনা ঘটছে। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ মালদার মোথাবাড়ি। অভিযোগ, সেখানে পুলিশ গিয়ে হিন্দু মহিলাদের বলছেন শাঁখা-পলা খুলে ফেলতে, কালো কাপড়ে মুখ ঢাকতে। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষণ নীতি, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা এবং হিংসা মোকাবিলায় ব্যর্থতার কারণে পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।
ওয়াকফ বিল পাশের প্রতিবাদে অশান্ত মুর্শিদাবাদ- সিএএ পাশ হওয়ার পর বেলাগাম হিংসার স্মৃতি ফিরল মুর্শিদাবাদে। সম্প্রতি ওয়াকফ বিল পাশের প্রতিবাদের নামে জেলার রঘুনাথগঞ্জ থানা এলাকার উমরপুরে বেলাগাম তাণ্ডব চালায় উন্মত্ত জনতা। ঘটনায় পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্তত ২ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। ওয়াকফ প্রত্যাহারের দাবিতে বিগত কিছুমাস আগেই উত্তেজনায় ফুটছিল জঙ্গিপুর। সুতি, সামশেরগঞ্জ, রঘুনাথগঞ্জ এলাকায় দফায় দফায় বিক্ষোভ চলছিল। কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছিল পুলিশ। জানা গিয়েছে, ১৪৪ ধারা জারি ছিল এলাকাতে। তবে তা অমান্য করেই চলে বিক্ষোভ। নিমেষের মধ্যেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। অবস্থা সামাল দিতে লাঠি নিয়ে ধাওয়া করে পুলিশ। অবস্থা সামাল দিতে এলাকায় পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। বিক্ষোকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। তারপরেই জনতার সঙ্গে কার্যত খণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট বৃষ্টি শুরু হয়। বাধ্য হয়ে পুলিশ একাধিক কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায়। এরপর ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুন লাগানো হয় একটি বেসরকারি গাড়িতেও। পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হন বলে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ পিছু হটলেও পরে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে অবস্থা সামাল দেয়।
মুর্শিদাবাদের ওয়াকফ অশান্তি- ওয়াকফ বিল পাশের প্রতিবাদে আবারও অশান্ত মুর্শিদাবাদ
বেলাগাম হামলার মুখে মুর্শিদাবাদ ছেড়ে পালাচ্ছেন হিন্দুরা
ওয়াকফ বিরোধী আন্দোলনের নামে মুর্শিদাবাদে হিন্দু নিধন যজ্ঞ চলছে বলে দাবি করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ধর্মীয় কারণে নিপীড়নের অভিযোগ তুলে নিরীহ হিন্দুরা কী ভাবে মুর্শিদাবাদ ছেড়ে পালাচ্ছেন তার ভিডিয়ো সম্প্রতি প্রকাশ করেছিলেন তিনি। একই সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য তিনি দায়ী করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষণ রাজনীতিকে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ছবি ও ভিডিয়ো প্রকাশ করে শুভেন্দুবাবু দাবি করেছেন, প্রাণ বাঁচাতে মুর্শিদাবাদ ছেড়ে পালাচ্ছেন হিন্দুরা। তিনি লিখেছেন, ‘ধর্মীয়ভাবে প্ররোচিত ধর্মান্ধদের ভয়ে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে ৪০০ জনেরও বেশি হিন্দু নদী পার করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। মালদার বৈষ্ণবনগরে অবস্থিত দেওনাপুর- শোভাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পার লালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। বাংলায় ধর্মীয় নিপীড়ন এখন বাস্তব। তৃণমূল কংগ্রেসের তোষণের রাজনীতি উগ্রপন্থীদের মদত দিয়েছে। হিন্দুদের শিকার করা হচ্ছে, মানুষ তাদের নিজের দেশে তাদের জীবন বাঁচাতে দৌড়াচ্ছে! আইনশৃঙ্খলার এই অবনতি ঘটতে দেওয়ারজন্য রাজ্য সরকারকে ধিক্কার। আমি জেলায় মোতায়েন কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী, রাজ্য পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করছি যে তারা এই বাস্তুচ্যুত হিন্দুদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করুন এবং এই জেহাদি সন্ত্রাস থেকে তাদের জীবন রক্ষা করুন। বাংলা জ্বলছে। সামাজিক কাঠামো ছিন্নভিন্ন। যথেষ্ট হয়েছে।’
মালদার মোথাবাড়িতে হিন্দুদের দোকান-বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ- ২৭ মার্চ মোথাবাড়ি গ্রামে ব্যাপক হিংসা হয়। অভিযোগ, মুসলিম জনতা হিন্দুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িগুলিকে টার্গেট করেছিল। বিজেপি নেতা অচিন্ত্য মণ্ডলের শেয়ার করা একটি ভিডিও-সহ প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এক হিন্দু মহিলা ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, “মুসলিমরা হিন্দুদের বাড়িঘর ধ্বংস করেছে।ভয়ে আমরা লুকিয়েছিলাম।” তাঁর অভিযোগ, বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করার পর টাকা-পয়সা ও জিনিসপত্রও লুট করা হয়েছে। তিনি বলেন, “পুলিশ তাদের প্রাণ নিয়ে দৌড়েছে। তারা আমাদের বাঁচায়নি।” আর এক হিন্দু মহিলার দাবি, তাঁদের ধর্মীয় পরিচয় গোপন করতে বাধ্য করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমাদের শাঁখা-পলা খুলে হিজাবের মতো মাথা ঢাকতে হচ্ছে। আমরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও তা করতে বাধ্য হচ্ছি।” তাঁর অভিযোগ, নারীদের অপহরণ ও নির্যাতন করা হচ্ছে। হিন্দুদের বাড়ি লক্ষ্য করে অবিরাম পাথর ছোড়া হচ্ছে। হিন্দু নারীরা কোনও দাবি মানতে না চাইলে শিশুদের অপহরণ ও হত্যার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
ঝাউবোনায় হিন্দুদের ওপর অত্যাচার- সম্প্রতি বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এক্স হ্যান্ডেলে কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করে মুর্শিদাবাদের ঝাউবোনায় হিন্দুদের ওপর হামলার অভিযোগ তোলেন। তাঁর দাবি, হিন্দুদের মালিকানাধীন সুপারি বাগানে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং দোকান লুট করা হয়েছে। এই ঘটনাগুলিকে তিনি জিহাদি মবস দ্বারা সংঘটিত হিংসা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ট্যুইট-বার্তায় তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষণ নীতির অধীনে হিন্দুদের ওপর আর একটি ভয়ঙ্কর হামলা! মোথাবাড়ি হাঙ্গামার পর জিহাদি মবস ঝাউবোনা, নওদা (মুর্শিদাবাদ)-এ সন্ত্রাস ছড়িয়েছে। অন্ধকারের আড়ালে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে হিন্দুদের সুপারি বাগানে আগুন ধরিয়ে দেয়, ঝাউবোনা ও ত্রিমোহিনী বাজারের দোকান লুটপাট করে এবং নিরীহ হিন্দুদের আক্রমণ করে।”
নওদায় হিন্দুদের দোকান ও সম্পত্তি ভাঙচুর- এছাড়াও এবছরেই মুর্শিবাদের নওদায় হিন্দুদের দোকান ও সম্পত্তির ওপর হামলা হয়। গত ৯ মার্চ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এক্স হ্যান্ডেলে জানান, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার নওদা ব্লকের পাটিকাবাড়ি বাজারে হিন্দুদের দোকান ও সম্পত্তিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ট্যুইট-বার্তায় তিনি লেখেন, “কয়েক ঘণ্টা আগে, অপরাধীরা মুর্শিদাবাদ জেলার নওদা ব্লকের পাটিকাবাড়ি বাজারে হিন্দুদের দোকান ও সম্পত্তি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়।” তিনি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ও মুখ্য সচিবের হস্তক্ষেপ চেয়ে দ্রুত শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শুভেন্দু বিএসএফ মোতায়েনের দাবিও জানান। তিনি বলেন, “যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে আমি অনুরোধ করব, মাননীয় রাজ্যপালকে বিএসএফ পার্সোনাল মোতায়েনের অনুরোধ করুন, যাতে শীঘ্রই আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যায় এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা যায়।”
হিন্দু নির্যাতনের পাশাপাশি রাজ্যে বাড়ছে মন্দির-মূর্তি ধ্বংসের ঘটনা
বারুইপুরে মূর্তি পোড়ানোর অভিযোগ- গত মার্চ মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর শহরে মা শীতলার মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। পরে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। খবরে প্রকাশ, শেখ ইন্দু নামে এক ব্যক্তি মূর্তিটি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা গিয়েছে, মূর্তিটি পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে। যে মন্দিরে মূর্তিটি ছিল, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটিও। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযুক্ত শেখকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ তাকে নিয়ে যায়। এদিনই এক ট্যুইট-বার্তায় বারুইপুর পুলিশ জানায়, আটক ব্যক্তি বহিরাগত। তার মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা রয়েছে। ওই ট্যুইটে তাকে অসুস্থ মস্তিষ্কের ব্যক্তি বলে উল্লেখ করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মামলা দায়ের হয়েছে। শুরু হয়েছে তদন্ত।
বসিরহাটে কালী মন্দিরে হামলা- ৯ মার্চ উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট শহরের শাঁখচূড়া বাজারে একটি কালী মন্দিরে হামলার খবর প্রকাশিত হয়। এক্স হ্যান্ডেলে এ নিয়ে একটি পোস্ট করেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তার পরেই ঘটনাটি আসে প্রকাশ্যে। তিনি জানান, হিন্দু দেবতার মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতা শাহানূর মণ্ডলের নেতৃত্বে ওই মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে। এর ঠিক কয়েক ঘন্টা পরেই পুলিশের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়, এই ঘটনায় কোনও সাম্প্রদায়িক ব্যাপার নেই। কালী মূর্তি ভাঙচুরের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে।’
মালদার রতুয়ায় মন্দির ভাঙচুর- এ মাসেই মালদার রতুয়া বিধানসভার অন্তর্গত দুর্গাপুরের দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্মিয়মান মন্দিরে ইটবৃষ্টি হয় – এমনটাই অভিযোগ বিরোধী দলের। বিজেপির দাবি, সেখানে নির্মাণাধীন একটি হিন্দু মন্দির ও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও দোকানে আচমকা ইটবৃষ্টি শুরু হয়। শুধু তাই নয়, গোয়াল থেকে গরু লুঠের অভিযোগও উঠেছে।
হালিশহরের হিন্দু মন্দিরে দুষ্কৃতী হামলা- রাতের অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে শিব মন্দিরে হামলা চালালো অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতীরা। শিবলিঙ্গ ভাঙচুর করার পাশাপাশি মন্দিরের ভেতরে থাকা পূজার উপাচার তছনছ করা হলো। গত ২৩শে মে রাতে ঘটনাটি ঘটে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অন্তর্গত হালিশহরের বৈদ্যপাড়ায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ অর্থাৎ ২৪শে মে সকালে বৈদ্যপাড়া ঘাটে অবস্থিত শিব মন্দিরটিতে গিয়ে দেখা যায় যে মন্দিরের ভেতরে থাকা শিবলিঙ্গটিকে ভাঙ্গা হয়েছে। স্থানীয়দের অনুমান ভারী কোন বস্তু দিয়ে শিবলিঙ্গের উপরে বারংবার আঘাত করে ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে পাথরের তৈরি হওয়ায় শিবলিঙ্গটিকে পুরোপুরি ভেঙে ফেলতে পারেনি ওই দুষ্কৃতীরা। এদিকে ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় অনেকেই এই ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের অবিলম্বী চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছেন। তবে শেষ পর খবর অনুযায়ী এখনো পর্যন্ত এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
নন্দীগ্রামে মন্দিরে মূর্তি ভাঙচুর- গত ১৪ মার্চ পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের কামালপুরের একটি হিন্দু মন্দিরে দেবদেবীর মূর্তি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র অমিত মালব্য এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টের মাধ্যমে ঘটনাটি জনসমক্ষে আনেন। ওই পোস্টে ভাঙচুর করা মূর্তির একটি ভিডিও-ও জোড়া ছিল। মালব্যর অভিযোগ, কিছু ব্যক্তি পূজা ও রাম নারায়ণ কীর্তন সহ্য করতে না পেরে মন্দিরে ভাঙচুর চালায় এবং মূর্তির অবমাননা করে। তিনি পরিস্থিতির গুরুত্বও তুলে ধরেন। পোস্টের ওই ভিডিওয় দেখা যায়, এক ব্যক্তি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলছেন যে তারা কিছুই করছে না। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ভাঙচুর করা মূর্তির ভিডিও যিনি বানাচ্ছিলেন, একজন পুলিশ অফিসার তাঁকে ভয় দেখাচ্ছেন।
দক্ষিণ দিনাজপুর মন্দিরে ভাঙচুর- এ বছর ৩০ মার্চ সুকান্ত ফের এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি দক্ষিণ দিনাজপুরের কেশবপুর গ্রামের একটি হিন্দু মন্দিরে ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবিগুলিতে দেখা গিয়েছে, মন্দির চত্বরে শীতলা মায়ের মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে। ট্যুইট-বার্তায় তিনি লেখেন, “দক্ষিণ দিনাজপুরের জাহাঙ্গিরপুর অঞ্চলের কেশবপুরে শ্রী শ্রী শীতলা মায়ের মন্দিরের ধ্বংসস্তূপ দেখুন। রাতের আড়ালে মন্দিরটি ভাঙচুর করা হয়েছে। মায়ের মূর্তিটি এমনভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে যা বাংলাদেশের মৌলবাদী জিহাদিদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।”
বিরোধী দলের অভিযোগ
একের পর এক এমন হামলার ঘটনা ঘটলেও রাজ্য সরকার চুপ করে রয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছেনা না। কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে রাজ্যের নিরাপত্তা ? এই ঘটনার পর রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সরব হন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী
এ প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে কয়েকদিন আগেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী লিখেছিলেন, ‘আবারও রাতের অন্ধকারে মালদা জেলার রতুয়ায় জেহাদিদের দ্বারা আক্রান্ত হলেন সনাতনীরা। মন্দির বানানোর ‘অপরাধে’ চলল ইটবৃষ্টি। নির্বিচারে মুড়ি-মুড়কির মতো পড়ল ইট। যথারীতি আক্রমণ চলাকালীন পুলিশের দেখা মেলেনি, মিলবেই বা কী করে? তখন এসে পড়লে যাদের ধরতে হতো তারা তো আবার মাননীয়ার স্নেহধন্য।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আমি এই জেহাদিদের ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের মনে করিয়ে দিতে চাই, মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী শুধু মাত্র মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান বা সামসেরগঞ্জে মোতায়েন করার নির্দেশ দেননি, পশ্চিমবঙ্গের যেখানে প্রয়োজন সেখানে মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, আপাততঃ এই নির্দেশ ৩১ শে জুলাই অবধি লাগু হলেও, মেয়াদ বৃদ্ধির সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে, এবং প্রয়োজন পড়লে তা বাড়ানো যেতে পারে ও ভবিষ্যতে উত্তপ্ত এলাকায় স্থায়ী কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্যাম্প রেখে দেওয়া নিয়েও আলোচনা চলছে। তাই পুলিশ প্রশাসন তৎপর হয়ে এই ঘৃণ্য ঘটনা গুলো আটকান ও দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতার করুন। নইলে আপনাদের এই সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করার অধিকার না চলে যায় কোনো দিন।’
রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার
অন্যদিকে, সর্বসমক্ষে এরূপ বারংবার হামলায় প্রশাসন ও শাসকদলের হেলদোল না থাকায় রাজ্যের বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন, ‘ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রীর নির্লজ্জ তোষণের রাজত্বে জেহাদি তাণ্ডবের কোনও লাগাম নেই! মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান, সামশেরগঞ্জের পর এবার মালদার রতুয়া বিধানসভার অন্তর্গত দুর্গাপুরে দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় রাতের অন্ধকারে আবার হিন্দুদের বাড়িঘর, দোকান লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোঁড়া হল, নিরীহ হিন্দুদের হুমকি দেওয়া হল। এলাকায় একটি মন্দির নির্মাণকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি একাধিক সময় হুমকির অভিযোগ আসছিল। গতকাল রাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিশেষ স্নেহধন্য’ মৌলবাদী জেহাদিদের আক্রমনে ওই এলাকায় প্রচুর বাড়ি, দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুর্শিদাবাদের কায়দায় হিন্দুদের বাড়ির গোশালা থেকে গরু, বাছুর উধাও করে দেওয়ার অভিযোগও এসেছে। আর নির্লজ্জতার চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করা প্রশাসনের ভূমিকা?’
পুলিশের ভূমিকায় নিন্দা বিরোধী দলের
এদিনের ঘটনায় পুলিশে তৎপরতা এবং পদক্ষেপ নিয়ে নিন্দায় মুখর সুকান্তবাবু আরও লিখেছেন, ‘মমতাময়ীর কৃপার পাত্র অপদার্থ মেরুদণ্ডহীন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়া তো দূর অস্ত, এত বড় জেহাদি তাণ্ডব চলছে দেখেও অন্ধের ভূমিকা পালন করেছে! সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের ঘটনায় আদালতের একের পর এক থাপ্পড় খেয়েও কোনও বদল নেই রাজ্য প্রশাসনের! যদি এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত প্রতিটি মৌলবাদী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে বাকিটা বৃহত্তর আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বিজেপি বুঝে নেবে। নিরীহ হিন্দু ভাই-বোনেদের উপর নির্বিচারে আক্রমণ আমরা কোনওভাবেই মুখ বুজে সহ্য করব না।’
একের পর এক এই হিন্দু নির্যাতনের ঘটনার প্রভাব সুদূরপ্রসারী
সম্প্রতি হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যা ৩৫ শতাংশ। এমনকী কয়েক বছরের মধ্যে মুসলিমরা পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবে বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেন তিনি। এদিন শুভেন্দুবাবু বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা হিন্দুদের সরকার তৈরি হয়েছে। তারা শুধু ওখানে হিন্দু নিধন ও ৬০০ হিন্দু মন্দির ভেঙেছে তাই নয়, তারা হিন্দুদের অস্তিত্ব বাংলাদেশ থেকে মুছে ফেলতে চায়। আপনারা ৫১ সালের জনগণনার তথ্য তুলনা করলে বুঝতে পারবেন, কী ভাবে আমাদের দেশে ও আমাদের রাজ্যে জনবিন্যাস বদল করা হচ্ছে। দেশ ভাগের সময় পূর্ব পাকিস্তানে ৩৩ শতাংশ হিন্দু ছিল। ৭১ সালে বাংলাদেশ গঠনের সময় সেখানে ২২ শতাংশ হিন্দু ছিল। আজকে সেই সংখ্যা কমে রয়েছে ৭.৫ শতাংশ।’
তিনি বলেন, ‘আমেরিকা যে ভাবে লাদেনকে খতম করেছে। ইজরায়েল যে ভাবে ভিতরে ঢুকে হামাসের প্রধানকে খতম করে দিয়েছে। ঠিক একই ভাবে এই জঙ্গিগুলোকে, এই অর্বাচিন সরকারকে উৎখাত করার জন্য বিশ্বসমুদায় এগিয়ে আসবে এই আবেদন করব।’এর পরই রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ে ফিরহাদের মন্তব্যকে কটাক্ষ করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে জনাব ফিরহাদ হাকিম বললেন, ভারতে আমরা ১৭ শতাংশ, আর পশ্চিমবঙ্গে ৩৩ শতাংশ। জানলেন কী করে ৩৩ শতাংশ? ২০১১ সালে শেষ জনগণনা হয়েছে। সেই জনগণনা অনুসারে বাংলায় মুসলিম ২৭ শতাংশ। আর উনি বলছেন ৩৩ শতাংশ। হ্যাঁ, আমরাও চোখে দেখতে পাচ্ছি। ৩৩ কেন ৩৫ শতাংশ ওরা হয়ে গেছে। তিনি বলছেন, এত জনসংখ্যা বাড়াও যাতে এই রাজ্যেও আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হই। আর ভারতেও আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হই।’