নিউজ ডেস্ক: বড়বাজারের হোটেলের পর এবার আগুন দক্ষিণ কলকাতার শরৎ বোস রোডের একটি হোটেলে। ৪৪ এ শরৎ বোস রোডে পাঁচতলা এক হোটেলে ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড। জানা গিয়েছে, গতকাল রাত ১টা নাগাদ হোটেলের ওপর তলায় কনফারেন্স রুমে আগুন লাগে। সেই সময় হোটেলের একাধিক রুমে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন। আগুন লাগার খবর পেয়েই হোটেল রুম থেকে সবাইকে নিরাপদে বাইরে বের করা হয়। খবর দেওয়া হয় দমকলে। খবর পেয়ে প্রথমে দমকলের দুটি ইঞ্জিন কাজ শুরু করে। কিন্তু যত সময় পার হয়, ততই আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকে। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আরও ৩টি ইঞ্জিন আসে। মোট ৫টি ইঞ্জিন মিলে ঘণ্টা খানেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বিপদ এড়াতে ডিএমজি তরফে কনফারেন্স রুমে সব জানলার কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয়। যদিও হতাহত কোনও খবর নেই। প্রাথমিক ভাবে অনুমান, কনফারেন্স রুমের এসি থেকে শর্ট সার্কিট হয়েই আগুন লেগেছে।
তবে এই ঘটনা প্রথম নয়, বাংলার বুকে বারবার ঘটে গিয়েছে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।
বড়বাজারে অগ্নিকাণ্ড থেকে স্টিফেন কোর্ট অগ্নিকাণ্ড- ফিরে দেখা ১০ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা-
বড়বাজারে অগ্নিকাণ্ড:
গত মে মাসে আচমকা বড়বাজারের মদন মোহন মেছুয়াবাজার ফলপট্টির একটি হোটেলে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের ১০টি ইঞ্জিন। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরুর চেষ্টা করেন কর্মীরা। জানা যায়, হোটেলে কমপক্ষে ৪২ টি ঘর ছিল। দমকল কর্মীদের ভিতরে প্রবেশে হিমশিম দশা হয়। প্রায় আট ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। হাইড্রোলিক ল্যাডার দিয়ে ২৫ জনকে উদ্ধার করা হয়। তবে মৃত্যু হয় ১৫ জনের। আর বড়বাজারের এই ঘটনা ফের সামনে আনল প্রশাসনিক গাফিলতি। প্রশাসনের নজরদারি যে কোথাও নেই, তা একটার পর একটা ঘটনায় সামনে আসছে। এসি হোটেলে কেন অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা থাকবে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে জলের ব্যবস্থা নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে, যে হোটেলে বহু মানুষের থাকার ব্যবস্থা, সেখানে একটাই বেরোবার পথ কেন? কেন ৬২ জন কর্মী থাকা সত্ত্বেও রান্নাঘর থেকে আগুন লাগার সময় কাউকে সতর্ক করা গেল না! ছাদে উঠে বেশ কিছু মানুষের প্রাণ বেঁচেছে। তা নিয়েই বড়াই করছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তিনি একবারও ভেবে দেখছেন না, রাজ্যটা কীভাবে চলছে! কেন কেউ নিয়ম মেনে চলে না! এই কলকাতাতেই গত ৬ মাসে ১৩ট জায়গায় আগুন লেগেছে। কিন্তু কোথাও সতর্কতা নেই।
আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু রোডে বহুতলে আগুন:
মিন্টো পার্কে একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের ছয় তলায় আগুন লেগেছিল। এই ঘটনায় দমকলের ৬টি ইঞ্জিন আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিয়েছিল।
কালিকাপুরে বিধ্বংসী আগুন:
ইএম বাইপাস সংলগ্ন কালিকাপুরে একটি বাড়িতে আগুন লাগে। এই অগ্নিকাণ্ডে চারটি ঝুপড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, এবং পাশে থাকা একটি পাকা বাড়ির একাংশেও আগুন লাগে।
নারকেলডাঙার বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড:
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নারকেলডাঙা থানার সামনে বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১ জনের মৃত্যু হয়। দমকলের ১৬টি ইঞ্জিন আগুন নেভাতে কাজ করেছে। এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে বস্তির প্রায় ২৫ শতাংশ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং অনেক মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে।
তারাতলার সিপিটি কলোনিতে অগ্নিকাণ্ড:
নারকেলডাঙার পাশাপাশি ফেব্রুয়ারি মাসেই তারাতলাতেও আগুন লাগে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় পরিত্যক্ত সিপিটি কোয়ার্টার্স লাগোয়া এলাকা। ভস্মিভূত প্রায় ২৫টি ঝুপড়ি। প্রাথমিক অনুমান করা হয়েছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।
সেক্টর ফাইভে অগ্নিকাণ্ড:
ফেব্রুয়ারির পর মে মাসেও সেক্টর ফাইভের একটি রাসায়নিক কারখানায় আগুন লাগে। প্রায় ঘণ্টা তিনেকের চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকলকর্মীরা। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায় কারখানার বাইরে থেকে। তবে কী কারণে বিস্ফোরণ, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আগুন লাগার খবর পাওয়ামাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় দমকলের একাধিক ইঞ্জিন। প্রথমে দমকলকর্মীরা বাইরে থেকে হোসপাইপের মাধ্যমে জল ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা শুরু করেন। দমকল সূত্রে খবর, আগুনের তীব্রতা এতটাই যে, কারখানার ভিতরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনার পরই ভিতরে প্রবেশ করেন দমকলকর্মীরা। দমকলের ১১টি ইঞ্জিন ঘণ্টা তিনেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু এবং বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার মুকেশ। দমকলের মতে, ওই কারখানায় অনেক পরিমাণে দাহ্য পদার্থ মজুত ছিল। তাই দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।
নিউ কয়লাঘাটা বিল্ডিংয়ে অগ্নিকাণ্ড:
২০২১ সালের ৮ মার্চ স্ট্র্যান্ড রোডে নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ে আগুন লাগে। ২টি লিফটে আটকে ঝলসে মৃত্যু হয় ৯ জনের। ১৩ তলা এই বিল্ডিংটি ছিল পূর্ব রেলওয়ে-র সিগন্যালিং এবং টেলিযোগাযোগ দপ্তরের সদর দফতর। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ আগুন লাগে বিল্ডিংয়ের একটি অফিস ঘরে।আগুন ছড়িয়ে পড়ে উপরের তলাগুলিতে। ভবনের লিফট তখন চলছিল। আগুনের সময় ৯ জন লিফট ব্যবহার করছিলেন। তাঁরা ভিতরে আটকে পড়েন। পরে ঝলসে মারা যান। মৃতদের মধ্যে ছিলেন ৪ জন রেলকর্মী, ১ জন কলকাতা পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর, ১ জন ফায়ার অফিসার ও ৩ জন দমকল কর্মী।
বাগরি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড:
২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বাগরি মার্কেটের ৬ তলা বাড়িতে বিধ্বংসী আগুন লাগে। বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় কোটি কোটি টাকার জিনিস। ওই বাড়িতে হাজারেরও বেশি দোকান ও গোডাউন ছিল। গভীর রাতে আগুন লাগে। তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা ভবনে। কেমিক্যালস, কাগজ, প্লাস্টিক, পারফিউমের মতো দাহ্য বস্তু থাকায় আগুন নেভাতে কালঘাম ছুটে যায় দমকল বাহিনীর। মার্কেট বন্ধ থাকায় কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়।
আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড:
স্টিফেন কোর্ট কাণ্ডের ঠিক এক বছরের মাথায় বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে। ২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বরের ওই ঘটনায় অসহায়ভাবে ছটফট করতে করতে মৃত্যু হয় ৮৯ জনের। দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায় অবস্থিত AMRI হাসপাতালে ঘটে যাওয়া বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ভারতের হাসপাতালের ইতিহাসে অন্যতম কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। ভোরবেলা ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন মূলত হাসপাতালের বেসমেন্টে থাকা অপ্রচলিত ও দাহ্য কেমিক্যাল, বর্জ্য, এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের মধ্যে থেকে ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত আগুন পৌঁছে যায় রোগী ভর্তি উপরতলার ইউনিটে। ৮৯ জন রোগীর মৃত্যু হয়। ঘুমন্ত অবস্থাতেই বেশিরভাগ রোগী দমবন্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
স্টিফেন কোর্ট অগ্নিকাণ্ড:
২০২৩ সালের ২৩ মার্চ। দুপুর দুটো নাগাদ পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেন কোর্টের একটি অংশে আগুন লাগে। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে উপরতলা পর্যন্ত। পুরনো কাঠের সিঁড়ি ও সেসময়ের তারের জটিল ব্যবস্থার কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগুন। এটি শহরের নিরাপত্তা, পুরনো ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ, এবং অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার ঘাটতির এক জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে রয়েছে। দমকলকে খবর দেওয়া হলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বহু সময় লেগে যায়। প্রাণে বাঁচতে উপর থেকে নীচে ঝাঁপিয়ে পড়েন অনেকে। ঘটনায় ৪৩ জনের মৃত্যু হয়। দরজা বন্ধ থাকায় ছাদেও যেতে পারেননি কেউ। ফলে গেটের কাছে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় অনেকের।
এরপরও একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে শহরে। গত বছর কসবার অ্যাক্রোপলিস মল, তার আগে সূর্যসেন লেনের মার্কেট, তারও আগে স্ট্যান্ড রোড এবং শিয়ালদহ মার্কেটেও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। শহরবাসীর মতে, প্রতিটি ঘটনার পর অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থায়ি নিয়ে পদক্ষেপের কথা বলাও হলেও বাস্তবে তা কার্যকরী হয় না কেন?
বারবার এমন অগ্নিকাণ্ডের কারন কী?
শহরে বারবার অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ হলো অসতর্কতা, নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার, এবং অগ্নি নিরাপত্তা বিধি-নিষেধের প্রতি অবজ্ঞা। এছাড়াও, ঘিঞ্জি পরিবেশ, অপরিকল্পিত নগরায়ন, এবং দুর্বল অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
অসতর্কতা: বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরো, অসাবধানে রান্না করা, বা অসতর্কভাবে আগুন জ্বালানো অগ্নিকাণ্ডের একটি বড় কারণ।
নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম: পুরনো এবং নিম্নমানের বৈদ্যুতিক তার, সংযোগ, এবং অন্যান্য সরঞ্জাম শর্ট সার্কিট এবং অগ্নিকাণ্ডের কারণ হতে পারে।
অগ্নি নিরাপত্তা বিধি-নিষেধের অবজ্ঞা: অগ্নি নিরাপত্তা বিধি-নিষেধের প্রতি অবজ্ঞা, যেমন – হুকিং, খোলা তার, বা ক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যবহার অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
ঘিঞ্জি পরিবেশ: ঘিঞ্জি পরিবেশ এবং পুরনো ও দুর্বল অবকাঠামো অগ্নিকাণ্ডের দ্রুত বিস্তার ঘটায়।
অপরিকল্পিত নগরায়ন: অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে দুর্বল রাস্তা, পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস না থাকা, এবং অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার অভাব অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়ায়।
দুর্বল অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা: দুর্বল বা অপ্রতুল অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা অগ্নিকাণ্ডের দ্রুত বিস্তার ঘটায়, এবং অগ্নিনির্বাপণে সমস্যা তৈরি করে।
অন্যান্য কারণ: কিছু ক্ষেত্রে, অগ্নিকাণ্ডের কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন – বিদ্যুতের ঝলকানি, বা কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগাতে পারে।
এই সমস্যাগুলি মোকাবেলা করতে, শহরগুলোতে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার উন্নতি, অগ্নি নিরাপত্তা বিধি-নিষেধের কঠোর প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি, এবং অগ্নি নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
কীভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এড়ানো যাবে?
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এড়াতে কয়েকটি সাধারণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যেমন: নিয়মিত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং তারের পরীক্ষা করা, রান্না করার সময় চুলা থেকে দূরে না যাওয়া, এবং দাহ্য পদার্থ থেকে খোলা আগুন দূরে রাখা. এছাড়াও, জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত এবং সঠিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র এবং অ্যালার্ম সিস্টেমের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
অগ্নিকাণ্ড এড়ানোর জন্য আরও কিছু টিপস-
বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা: ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক তার এবং আউটলেটগুলি মেরামত বা পরিবর্তন করুন।
অতিরিক্ত লোড হওয়া সকেট ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
পুরাতন এবং ক্ষতিগ্রস্ত তারের পরিবর্তে নতুন এবং নিরাপদ তার ব্যবহার করুন।
কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা: কর্মীদের অগ্নি নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দিন এবং তাদের অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার সম্পর্কে জ্ঞান দিন।
নিয়মিত অগ্নি নিরাপত্তা পরিদর্শন করুন এবং ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করুন।
জরুরি অবস্থার জন্য একটি স্পষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করুন।
আগুন লাগলে তা সহজে আয়ত্তে আনা যায় না কেন?
দমকল সূত্রের খবর, কর্মীর সংখ্যা কম আর নজরদারির অভাবে এই পরিস্থিতি। দমকলে স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা কমে গিয়েছে। সেইসঙ্গে শূন্য পদে নিয়োগ হচ্ছে না। ফলে কাজে অনেক সমস্যা হচ্ছে। দমকলের নিয়ম অনুসারে নিচু তলা থেকে পদোন্নতি পেয়ে ধাপে ধাপে ওপরে উঠতে হয়। কারণ নিচু স্তরে কাজ না শিখে ওপরের তলায় পদোন্নতি দেওয়া যায় না। ওপরের পদে সরাসরি নিয়োগের ব্যাবস্থা নেই বললেই চলে। যেহেতু নিচু তলায় অনেক শূন্যপদ, তাই ওপরেরর তলায়ও ফাঁকা রয়ে যাচ্ছে। দমকলের ফায়ার অফিসার পদে পুরোটাই সরাসরি নিয়োগ করা যায়। ২০১১ সালে শেষ বার এই পদে নিযোগ করা হয়েছিল। তবে তাঁরা কেউই পদোন্নতি পাননি। এরপর রয়েছে লিডার। সেখানে সরাসরি নিয়োগের কোনও ব্যবস্থা নেই। তার পরের ধাপ হল সাব অফিসার। এ ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশে সরাসরি নিয়োগ করা যায়। এর পরের ধাপ স্টেশন অফিসার সেখানেও সরাসরি নিয়োগের কোনও নিয়ম নেই। সেখান থেকে পদোন্নতি পেয়ে ডিভিশনাল অফিসার হওয়া যায়। এই পদে ২৫ শতাংশে সরাসরি নিয়গ করা যেতে পারে। সমস্যা হল ফায়ার অফিসার বা সাব অফিসার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যত থমকে রয়েছে। তাই পরের ধাপগুলিতেও শূন।পদের সংখ্যা যথেষ্ট।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কী বলছে শহরবাসী?
কলকাতা শহরে সাম্প্রতিক কিছু অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে শহরবাসী বেশ উদ্বিগ্ন। বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের পর, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং এর বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি উঠেছে।
বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের কী পদক্ষেপ?
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি শহরের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে সম্প্রতি বৈঠক থেকে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কলকাতা পুরসভা, কলকাতা পুলিশ এবং দমকল ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গড়ে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। তারপরও নজরদারিতে যে গাফিলতি ছিল তা স্পষ্ট বলেই মনে করছেন শহরবাসীর একাংশ।
অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় নয়া নির্দেশ
তবে মূলত বড়বাজার কাণ্ডের পরেই টনক নড়ল রাজ্যের। কলকাতা পুরসভার (KMC) টাস্ক ফোর্সের বৈঠকে রেস্তোঁরা, শপিংমল নিয়ে নজরদারির নির্দেশ, থার্ড পার্টি দিয়ে অডিট করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমস্ত বিভাগকে নিয়ে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে ক্যাবিনেটে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডে রাশ টানতে ২২ মে রাজ্যস্তরের কমিটি গঠন করে নবান্ন। দমকল, বিদ্য়ুৎ, পুরসভা, বিপর্যয় মোকাবিলা, ও পঞ্চায়েত পাঁচ দফতরের মন্ত্রী ও সচিব, পুলিশ আধিকারিক সহ ১৫ জনের কমিটি গড়া হয়। এক সপ্তাহের মধ্য়েই সেই কমিটির বৈঠক হল কলকাতা পুরসভায়। উঠে এল আগুন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নানা পরামর্শ। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আমরা নিজেদের মতামত খসড়া নিয়ে আলোচনা হল সেই অনুযায়ী আমরা এটাকে ক্য়াবিনেটে পাঠাব। আমাদের কাছে ৩০ দিন সময় আছে। ৩০ দিনের মধ্য়ে ক্যাবিনেটে পাঠিয়ে দেব।”
২৯ এপ্রিল বড়বাজারের বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ১৪টা তাজা প্রাণ। হোটেল-রেস্তোরাঁ পরিদর্শনে যান খোদ মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই কলকাতার ‘রুফ টপ রেস্তোরাঁ’ ভাঙার নির্দেশ দেন মেয়র। সেই মামলা গড়িয়েছে আদালতে। এদিনের বৈঠকে রুফটপ রেস্তোঁরা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। কলকাতার পাশাপাশি জেলাতেও রেস্তোরাঁ গুলিতেও নজরদারি চালানো নিয়ে আলোচনা হয়। পঞ্চায়েত মন্ত্রীর উপস্থিতিতে এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, রুফটপ বা ছাদ বিক্রি করা যাবে নারেস্তোরাঁ গুলিকে থার্ড পার্টি দিয়ে অডিট করাতে হবে। দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর নজরদারি চালাবে। জেলার ক্ষেত্রে নজরদারিতে দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলাশাসককে। রাজ্যস্তরের পাশাপাশি জেলাস্তরেও ডিএম ও পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি রিপোর্ট দেবে রাজ্যের কমিটিকে। এখন দেখার কতটা কার্যকরী ভূমিকা নেয় এই কমিটি।
পার্ক স্ট্রিটের রুফটপ রেস্তোরাঁ ভাঙার ক্ষেত্রে মৌখিক স্থগিতাদেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশে শুনানি বৈঠক হয় কলকাতা পুরসভায়। এই শুনানি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার নামী ৩টি রুফটপ রেস্তোরাঁর কর্ণধার-সহ একাধিক রেস্তোরাঁর কর্মী ইউনিয়নের সদস্যরা। বৈঠকে রাতারাতি রেস্তোরাঁ ভেঙে ফেলার বিষয়টি মানবিকতার দিক থেকে দেখার আর্জি জানান রেস্তোরাঁর কর্ণধারেরা। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, এই শুনানির জন্য পুরসভার তরফে গঠন করা হয়েছে একটি আলাদা পরিচালন কমিটি। কলকাতা পুরসভার পাশাপাশি সেই কমিটিতে রয়েছেন কলকাতা পুলিশ, দমকল ও আবগারি দফতরের আধিকারিকও। মঙ্গলবার, সেই কমিটির তরফে রেস্তোরাঁগুলির কাছে চাওয়া হয় সমস্ত বৈধ কাগজপত্র। চাওয়া হয় রেস্তোরাঁর অনুমোদিত নকশার নথি। যদিও, রেস্তোরাঁর তরফে দেওয়া নথিতে সন্তুষ্ট হয়নি পুরসভা কর্তৃপক্ষ। ১১ জুন ফের শুনানি বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেখানেই রেস্তোরাঁগুলির সমস্ত দাবি লিখিত আকারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা পুরসভা।