নিউজ: ৫ জুন ২০২৫, নাগপুরে আরএসএস-এর সদর দপ্তরে হল এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই প্রথমটি ‘কার্য বিকাশ বর্গ বর্গ-দ্বিতীয় সমাপনী সমারোহ’ক পরিচিত, যা আরএসএস-এর স্বয়ংসেবকদের তিন বছরের শিক্ষা পর্বের সমাপ্তি অংশ হয়। ১২ মে থেকে শুরু রাষ্ট্রীয় স্বয়ংশেবকদের স্বেচ্ছাসেবকদের সংগঠিত করার জন্য ২৫ প্রশিক্ষণ শিবির শেষ হল ৫ জুন। ৮৪০ জন সংগ্রামী অংশ বলে খবর। আসন উপস্থিত ছিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। এছাড়াও এই দলের প্রধান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- রাজ লোয়া, মহানগর সংলক, প্রধান প্রধান শ্রী অরবিন্দরম, সমীর কুমার মহান্তি – প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের গঠনারি, শ্রী দীপক তমশেট্টিওয়ার, প্রন্ত সংঘচালক ও বিদার প্রন্ত।
আজ সভা থেকে কী কী বললেন আরএসএস প্রধান ওয়েব নিন এক নজরে-
পেহেলগাঁও স্বাধীনতা সংগ্রাম জাতীয় ঐক্য ও প্রতিপক্ষ সমর্থনের আহ্বান
নাগপুরে বক্তৃতা শুরু করে মোহন ভাগবত পহেলগাঁওর প্রসঙ্গ তোলে। তিনি বলেন, “পহেলগামে যে ঘোষণা, যথেষ্ট ছিল এক নৃশংস যুদ্ধ। দেশ। বৃহৎ মনোভাব, শক্তির আত্মপক্ষের পার্টির পক্ষ থেকে ঐক্যের পক্ষ থেকে প্রতিপক্ষের পক্ষ থেকে, তা মনে হয়। এই ঐক্য শুধু পরিস্থিতি অনুযায়ী না হয়, চলতে থাকে দীর্ঘস্থায়ী হয়—সেই আশা করি৷
তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধের সময়ে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে—কে আমাদের বন্ধু আর আমাদের বিপক্ষ, প্রশ্ন আর বাকি থাকবে না। অহিংসার পথ অনুসরণ করে, কিন্তু দুনিয়ায় এখনো অনেক দুষ্টতা আছে, যা মোকাবিলা করার জন্য আমাকে করতেই হবে।
মোহন ভাগবতার বলেন, “যে পরিবেশ পরিবেশ আমরা এখন দেখছি, আশা করি পরিপক্ক। একত্রিত হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণও। যদি এই বিপদতা ধরে রাখা যায়, তাহলে তা জন্য এক বড় শক্তি উৎসারিত হবে।
তিনি যোগ করেন, “এখন জাতীয় স্বার্থে প্রতিদ্বন্দ্বীতাও উল্টিও উল্টো প্রার্থী যারা উল্টো প্রতিদ্বন্দ্বী আমরা তারাও এখন আরও কাজ করছে। ঐক্য বজায় রাখুন।
তবে তিনি এখনও সতর্ক করেন, “সব সমস্যার সমাধান হবে না। খোলা হয়েছিল, তারাই এখন অশান্তি ছড়াচ্ছে। এই দ্বিচারিতা যতদিন, ততদিন বিপদও থাকবে।
যুদ্ধের ধরণ বলে গেছে তিনি। “যেহেতু তারা প্রচার যুদ্ধ করতে পারছে না, তাই অন্য রাস্তা নিচ্ছেন—সন্ত্রাসবাদ, সাইবার যুদ্ধ, ‘হাজার কাট’ বিরোধিতা ইত্যাদি আমাদের প্রচার করার চেষ্টা করার মাধ্যমে, এটা প্রক্সি যুদ্ধ, যেটা বন্দুক এবং থামছে না—বিশ্বের অনেক নিন্দা, বলেন মোহন ভাগবত।
এই এককে ভাগাভাগির মূল বার্তা ছিল—জাতিগত ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে, আত্মভরতাকে রক্ষা করতে হবে, এবং যত বাধাই আসুক না কেন, সমাজ ও দেশের স্বার্থকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে।
ভারতা ও প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভর গুরুত্ব
মোহন ভাগবত বলেন, এখন যুদ্ধের ধরন বদলে গেছে। এটা আর আগের মতো মুখোমুখি দাঁড়িয়ে লড়াই করে জেতার বিষয় নয়। এখন তো বাড়িতে বসেই একটা বোতাম টিপলেই যুদ্ধ চালানো যায়—দূর থেকে মিসাইল ছোড়া যায়। যুদ্ধের টেকনোলজিও অনেক এগিয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে, বিশ্বজুড়ে যেসব দেশ নিজেদের অবস্থান নিয়েছে, তারও পরীক্ষা হয়ে গেছে—কে সত্য আর সততার পক্ষে দাঁড়ায়, আর কে কেবল নিজের স্বার্থ দেখে। এমনও অনেক আছে, যারা বাইরে থেকে বন্ধুর মতো, কিন্তু আসলে নিজেদের স্বার্থের জন্যই সব করে। এই যুদ্ধ পরিস্থিতিই সবার আসল চেহারা সামনে নিয়ে এসেছে।
তাই এটা এখন একেবারে পরিষ্কার, আমাদের দেশের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের আর কাউকে ভরসা করে বসে থাকলে চলবে না—নিজেদের ওপরই ভরসা করতে হবে, নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হবে। আমরা অহিংস আর সত্যনিষ্ঠ একটা জাতি—কাউকে শত্রু বলে মনে করি না। কিন্তু এই দুনিয়ায় এখনো অনেক খারাপ লোক আছে, যারা কারণ ছাড়াই হামলা চালাতে পারে। তাই আমাদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে, তৈরি থাকতে হবে।
ভাগবত আরও বলেন, আমাদের দেশে যেন এক শ্রেণির মানুষের সঙ্গে আরেক শ্রেণির লড়াই না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। নিজেদের মধ্যে সদ্ব্যবহার বজায় রাখা খুবই জরুরি। আবেগের বশে উগ্রভাবে আচরণ করা, কারও উপর ঝাঁপিয়ে পড়া, নিজেদের হাতে আইন তুলে নেওয়া—এসব একেবারেই ঠিক নয়। বরং আমাদের একে অপরের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলা, মিলেমিশে থাকা, আর একে অপরকে সাহায্য করা—এইগুলিই আজকের দিনে সবচেয়ে দরকারি।
রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ
আমাদের দেশ অনেক বৈচিত্র্যে ভরা। মোহন ভাগবত তাঁর বক্তৃতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা তুলে বলেন, “বৈচিত্র্যের ভেতরেও একতা সম্ভব, আর একতার হাত ধরেই এই বৈচিত্র্যকে সুন্দরভাবে এক ছাদের নিচে আনা—এই কাজটাই আসল ধর্ম।” তিনি আরও বলেন, “আমরা একে অপরের সঙ্গে সৌহার্দ্য আর সদ্ভাব নিয়ে থাকলে তবেই সমাজ এবং দেশ ভালোভাবে চলবে। কারণ দেশ আর সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা সবাই এক, একসঙ্গে জড়িত।”
তিনি বলেন, একটা দেশের আসল শক্তি হলো তার সমাজ। সেই সমাজের শক্তিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ভারত এমন একটা দেশ যেখানে ভাষা, জাত, বিশ্বাস, খাওয়া-দাওয়া—সবকিছুতেই ভিন্নতা আছে। আর এই ভিন্নতার মাঝেই অনেক সময় অনেক সমস্যা থাকে। একজনের লাভ যেটা, সেটা অন্যজনের ক্ষতি হতে পারে। কারও সমস্যা হয়তো আরেকজন বুঝতেই পারে না।
এই জটিলতা সত্ত্বেও দেশের জন্য একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, একসঙ্গে চলতে হয়—যেটা অনেকটা দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটার মতোই কঠিন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কিছু অসন্তোষ থাকে সমাজে। কিন্তু এসব ক্ষুদ্র অসন্তোষকে যদি বড় করে দেখি, তাহলে তা দেশের বৃহত্তর স্বার্থের ক্ষতি করে। তাই মোহন ভাগবতের বক্তব্য, দেশের মঙ্গলের কথা ভেবে, আমাদের এই ছোটখাটো অভিযোগ-অসন্তোষ পেছনে রেখে সামনে এগোতে হবে।
সামাজিক ঐক্য ও পারস্পরিক সৌহার্দ্যের আহ্বান
যে কোনও পরিস্থিতিতে সমাজের এক শ্রেণির সঙ্গে আরেক শ্রেণির সংঘাত যেন না হয়, সেটা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। একে অপরের সঙ্গে সৌহার্দ্য বজায় রাখা খুবই জরুরি। অহেতুক জায়গায় রাগ দেখানো, গণ্ডগোল তৈরি করা, বা প্রতিক্রিয়ায় আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া—এসব একেবারেই ঠিক নয়। এক সময় ছিল যখন আমরা পরাধীন ছিলাম, তখনকার শাসকেরা আমাদের মধ্যে বিভাজন চাইত। ফলে নির্দোষ লোকজনও ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ত। কিন্তু এখন আমরা স্বাধীন, দেশ চলে সংবিধান অনুযায়ী, তাই এভাবে হঠকারী আচরণ একদমই চলবে না।
শান্ত মাথায় ভাবা দরকার। সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা উসকানি দেয়, নিজেকে ভিক্টিম বানায়, ঘৃণার ভাষা ছড়ায়। ওদের ফাঁদে পা দিলে চলবে না। কেউ কেউ নিজের স্বার্থে সমাজে বিভেদ ছড়াতে চায়, কেউ আবার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এই পথ একেবারে এড়িয়ে চলতে হবে। এখন সমাজে যা সবচেয়ে দরকার তা হলো—সৌহার্দ্য, ভালো ব্যবহার, শুভবুদ্ধি আর পারস্পরিক সহযোগিতা।
আমরা আজ নিজেদের হিন্দু বলি—কিন্তু আমরা কীভাবে হিন্দু হলাম? সেটা ভাবা দরকার। আমরা সমাজকে নিজের অংশ বলে মনে করি, তাই সবটুকু মন দিয়ে সমাজের জন্য কাজ করি। আমরা কোনও ঠিকাদার না—মানে, কাজটা একতরফা করি না। আমরা কাজ করি একসঙ্গে—যারা উপকার পায়, তারাও আমাদের সঙ্গী হয়। তাই ভাগ্য গড়ার জন্য নিজেদেরও এগোতে হবে। বড় নেতা, স্লোগান, নীতি, সরকার—সবই সহায়ক হতে পারে, কিন্তু নিজেদের উদ্যোগ ছাড়া এগোনো সম্ভব না। এই কথাটা আজকের জন্য না—চিরকালীন সত্য।
সব পরিবর্তনের কেন্দ্রে থাকে সমাজ। তাই আমাদের আচরণ দিয়ে, নিজেদের উদাহরণ দিয়ে সমাজে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে সমাজ নিজেই বদলাতে পারে। তখন নীতিগত পরিবর্তনও আপনাতেই আসবে। এর জন্য ধৈর্য লাগবে। হাজার বছর পরাধীন থাকার ফলে আমরা প্রতিবাদে, লড়াইতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি—তখন সেটা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এখন দেশ আমাদের, সরকার আমাদের। তাই ধৈর্য ধরে কাজ করতে হবে। পরিবর্তন আসবেই।
আমরা আগেও বলেছি, “নিশ্চিত হোগা পরিবর্তন, জাগ রাহা হ্যায় জন গণ মন”—এই পরিবর্তনের জন্য দেশজুড়ে নিবেদিত কর্মীর দরকার, আর সেটাই সংঘের কাজ। আমরা নিজের পদ্ধতিতে, নিজের শক্তিতে কাজ করি। কাউকে ডাকি না, কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় আসে, তাকে স্বাগত জানাই। সবাইকে সাহায্য করি, তাই আমাদের গতি একটু ধীর। তবে এখন গতি বাড়াবো। অবশ্যই, সাইকেলের গতি গাড়ির মতো হতে পারে না—তবু এগিয়ে যেতেই হবে।
আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলছি—যদি আমরা সবাই মিলে দেশের ভবিষ্যতের জন্য একসাথে কাজ করি, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে, এবং সঠিক পথে হবে। ধৈর্য ও নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সংঘ সেই উদ্দেশ্যেই কাজ করে এবং আগামীতেও করবে।
নাগপুরে যে শিবির হয়, সেটি ৯৮ বছর ধরে চলছে—শুরু হয়েছিল ১৯২৭ সালে। এখন ফর্ম্যাট বদলেছে, কিন্তু উদ্দেশ্য এক। দেশজুড়ে কর্মীরা এখানে আসে, এবং তাদের মাধ্যমে জাতির মানসিকতায় পরিবর্তন আসে। ১৯২৫ সালে সংঘ গঠনের সময় সমাজ কেমন ছিল, আর আজ যখন ১০০ বছরের দোরগোড়ায়, পরিবেশ কত বদলেছে!
সাভারকর একবার বলেছিলেন—ঝড়-বৃষ্টির মতো কাজ করলে কিছুক্ষণ পরে সব শুকিয়ে যায়, ফসল হয় না। কিন্তু সংঘের কাজ মৃদু বৃষ্টির মতো—যা মাটির গভীরে ঢুকে বীজকে জাগায়, ফলন দেয়। এইভাবেই আমরা কাজ করি।
অনেকেই ভাবেন, আরও কিছু করা দরকার। কিন্তু আমি বলি, আমাদের কার্যকরী কমিটি নিজের কাজ করে, আলাদা করে আর কমিটি গড়ার দরকার নেই। সৌভাগ্যবশত, আমাদের সব কমিটিতে সক্রিয় লোকজন আছেন—তাঁরা শুধু নামেই নেই, সত্যিই কাজ করেন। ওদের সঙ্গেই মিলে সব এগিয়ে যাবে।
তাই চিন্তার কিছু নেই। আমরা সবাই একসঙ্গে আছি। কিন্তু এই কাজ গোটা সমাজজুড়ে করতে হবে। আর তা করতে গেলে এমন কর্মী দরকার যারা মন থেকে সমাজকে ভালোবাসে, সবাইকে নিজের মানুষ মনে করে, বৈষম্য ছাড়াই কাজ করে। সংঘ সেইরকম কর্মী গড়ে তোলে। আপনি যা দেখলেন, সেটা তারই একটা ছোট্ট উদাহরণ।
ধর্মান্তরণ ও সংস্কৃতির রক্ষার আহ্বান
আলাদা আলাদা পথে ভিন্নতা থাকতেই পারে। আসলে রুচির নামই তো ভিন্নতা—কেউ সোজা পথে চলে, কেউ বাঁকা পথে, কারও আবার নিজের মতো একটা পথ থাকে। কিন্তু লক্ষ্যটা সবারই এক—সত্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
পুজোর রীতি, খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস, সংস্কৃতি—এসবেতেও তাই পার্থক্য দেখা যায়। এটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ মানুষের রুচি, স্বভাব, পরিবেশ, চিন্তাভাবনা একরকম হয় না। কিন্তু যদি উদ্দেশ্যটা ঠিক থাকে, নিজের স্বার্থ নিয়ে না ভাবা হয়, কিংবা অন্যকে প্রভাবিত বা ব্যবহার করার ইচ্ছে না থাকে, তাহলে আলাদা পথ হলেও সবাই একই লক্ষ্যে পৌঁছায়।
এই যদি সত্যি হয়, তাহলে ধর্মান্তর বা কনভার্সনের প্রয়োজনই বা কেন? একবার কিছু মিশনারি গুলাবরাও মহারাজজিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “যদি সব পথই সঠিক হয়, তাহলে খ্রিস্টান হওয়া উচিত নয় কেন?” উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “যদি সব পথই সঠিক হয়, তাহলে খ্রিস্টান হওয়ার দরকারই বা কী?”
কেউ যদি নিজের ইচ্ছায়, নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী, নিজে থেকে পুজোর পদ্ধতি বা বিশ্বাস বদলায়, তাহলে আমাদের এতে কোনো আপত্তি নেই। আমরা সেটাকে সম্মান করি। যেমন ধরুন, রণনারায়ণ ভামন তিলক নিজের বিশ্বাস বদলেছিলেন, সেটাও সম্মানজনক ভাবেই গ্রহণ করা হয়েছিল।
কিন্তু যদি কাউকে লোভ দেখিয়ে, ভয় দেখিয়ে, বা জোর করে ধর্ম পরিবর্তন করানো হয়—যদি বলা হয়, “তোমার পথ ভুল ছিল, তোমার পূর্বপুরুষরা ভুল ছিলেন, আমরা তোমাকে ঠিক করছি”—তাহলে সেটা অপমানজনক। এটা একরকম হিংসার কাজ। আর আমরা কখনওই এই রকম ধর্মান্তরকে সমর্থন করি না।
আমাদের কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায়ের প্রতি বিরোধ নেই। যিশু খ্রিস্ট হোন বা পয়গম্বর সাহেব—সব ধর্মগুরুর প্রতিই আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা আছে।
সংঘের ভূমিকা ও সমাজ পরিবর্তনের আহ্বান
আপনি যখন আইন বা কোড নিয়ে কথা বলছিলেন, তখন বলেছিলেন—এত ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও আমরা এক। এটা একদম ঠিক। এত পার্থক্য, এত রকম বৈচিত্র্য থাকার পরেও সমাজের দৃষ্টিতে আমরা সবাই একসঙ্গে জড়িত। যদি সমাজ সত্যিই এক হয়, তাহলে আলাদা করে বলার দরকার হয় না—‘আমাদের সাহায্য করুন’। কারণ সংঘের কাজই হল—সমগ্র হিন্দু সমাজকে একত্রিত করা। আমরা সবার জন্য কাজ করি, সবার অস্তিত্বকে সম্মান করি। আমি এখন কোনও আইনগত দিক বা টেকনিক্যাল বিষয়ের কথা বলছি না—ওগুলো আলাদা প্রসঙ্গ। কিন্তু সমাজের এই অংশটাও আমাদেরই অংশ। ওদের সমস্যায় আমরা যতটা পারি, পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।
আমাদের কাজ করার একটা নির্দিষ্ট উপায় আছে। আপনি সরকারের বা প্রশাসনের কথা তুলেছিলেন—আপনার কথাগুলো নিশ্চয়ই সরকারের কাছে পৌঁছাবে। কিন্তু সরকার নিজের মতো করে কাজ করে, আর সেটা ঠিক কেমনভাবে হয়, আপনি সেটা জানেন, কারণ আপনি সেই অভিজ্ঞতার মধ্যে ছিলেন। আমরা জানি, অনেক সময় ওখানে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়, আর সব দিক একসাথে বিবেচনা করা খুব কমই হয়।
তবুও আমরা বলি—সরকার বা প্রশাসনের শক্তি আসলে কোথা থেকে আসে? সমাজ থেকেই তো আসে। তাই প্রশাসন যদি কথা না শোনেও, সমস্যা নেই, কারণ আমাদের তো সমাজ আছে। আপনি পেশা সংক্রান্ত আইনের কথা বলেছিলেন—সেই আইন যেন এমনভাবে প্রয়োগ হয়, যাতে কারও মনে না হয় যে কারও প্রতি আলাদা আচরণ হচ্ছে বা পক্ষপাত নেওয়া হচ্ছে। যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ হয়, তাহলে ঠিকভাবেই হবে।
চাইলে আপনি এর উদাহরণও দেখতে পারেন। আমাদের স্বয়ংসেবকরা বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে—যেমন নাসিক জেলায়। সেখানে কীভাবে আইন প্রয়োগ করা উচিত, তার একটা সুন্দর দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে। আমি আগেই আপনাদের চেতনরামজি পাওয়ারের কথা বলেছিলাম। বেতুল এবং তার আশেপাশেও এভাবেই পরিকল্পিতভাবে কাজ হচ্ছে। ছত্তিশগড়ের বস্তার এলাকায়ও এমন উদ্যোগ চলছে।
আমরা তো আছিই, আপনাকে অনুরোধ করতে হবে না। আমি আমি অনেক, আমাদের মধ্যে একটি দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলেছেন। আমরা যেখানেই প্রকাশ করতে পারি, সেখানেই এই ধরনের কাজ। এখন আমাদের সেই দৃশ্যটা আরও বাড়ানো দরকার—এটাই কথা।
আপনি আলোচনা বিষয়বস্তু দিয়েছেন, আমরা আমাদের বোঝার উপায়, যতটুকু সম্ভব, তার সবটা করব।
আমাদের সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যৎ বা বিরোধিতা করতে হবে—শুধু নিজের সদস্য ভবিষ্যৎ নয়, দেশ ভবিষ্যৎ। সেই ভবিষ্যৎ গঠনের কাজ বর্ণনাই। তাই শুধু ইউজার থেকে কৌতূহল নিয়ে ভর্তিই হবে না, সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে। দেশ স্বার্থ সংঘের স্বয়ংসম্পূর্ণ যে কাজ করছেন, আপনি আপনার সক্রিয় অংশগ্রহণ খুব জরুরি। এই কথাটা আমি তোমার কাছে অনুরোধ হিসাবে, বর্তমান শেষ করছি।