নিউজ ডেস্ক: বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ঘরে ঘরে লাগানো হচ্ছে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে বিদ্যুৎ দফতর জোরকদমে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে নেমেছে। স্মার্টমিটারের অর্থ, ‘টোটেক্স মডেলে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার’। ইতিমধ্যেই এই মিটার নিয়ে বাংলার গ্রামাঞ্চলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই বিদ্যুৎ দফতরে গ্রাহকদের বিক্ষোভ, নানা ধোঁয়াশা, একাধিক প্রশ্নের না পাওয়া উত্তর, আর বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের অসহায়তার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সরকার: এই স্মার্ট মিটার স্থাপন প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় সরকারের “রিভ্যাম্পড ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কিম” (RDSS) এর আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
স্মার্ট মিটার কী?
এখন আর কারোর বাড়িতেই কাটাওয়ালা মিটার নেই। অ্যানালগ মিটার। এখন সবার বাড়িতেই নম্বর আসে অর্থাৎ ডিজিট্যাল মিটার। কিন্তু স্মার্ট মিটার হল একটি আধুনিক মিটার, যা ‘প্রিপেইড মোডে’ কাজ করে। অর্থাৎ গ্রাহককে আগে থেকে রিচার্জ করতে হবে, তারপর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন পাঁচশো টাকার রিচার্জ করলে, গ্রাহক পাঁচশো টাকারই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। যেমনটা আরকী মোবাইলে প্রিপেড সিস্টেমে হয়!
স্মার্ট মিটারের উৎপত্তি
২০২২ সালে কেন্দ্রের সরকার একটি নতুন স্কিম নিয়ে আসে, দেশের বিদ্যুৎ বণ্টন পরিষেবাকে রিফর্ম করার জন্য। রিভ্যাম রিডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কিম। আরডিএসএস। এই স্কিমের অনেকগুলোর কাজের মধ্যে একটা হল, দেশের ২৬ কোটি গ্রাহকের ঘরের মিটার বদলে ফেলতে হবে। কিন্তু অবাকের বিষয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার আগেই ২০২১ সালে ৯ জুলাই স্মার্ট মিটার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রকল্পের বাস্তবায়ন
জানা যাচ্ছে, প্রথম ধাপে সরকারি অফিস, পুরসভা, পঞ্চায়েতে বসানো হচ্ছে স্মার্ট মিটার। শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগের পর পর্যায়ক্রমে সাধারণ গ্রাহকদের মিটার বদলের লক্ষ্য। সূত্রের খবর, বিদ্যুৎ দফতরের পরিকল্পনা, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ লক্ষ স্মার্ট মিটার বসানো হবে। বাংলার ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলে পৌরসভা ও পঞ্চায়েত এলাকাগুলোতে মূলত স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।
কী ভাবে কাজ করবে এই যন্ত্র?
পোস্টপেড SIM কার্ডের মতো কাজ করবে 4G স্মার্ট ইলেকট্রিক মিটার। এই জন্য এবার থেকে আপনাকে নির্দিষ্ট প্ল্যান নিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট ক্ষমতার নির্দিষ্ট ইউনিট ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। এই জন্য আপনাকে প্ল্যান রিচার্জ করতে হবে। আগামী মাস থেকে রাজ্যে নতুন এই ইলেকট্রিক মিটার ইনস্টল শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তর প্রদেশ সরকার। প্রয়োজন মতো রিচার্জ করে সঠিক সময়ে সহজেই ইলেকট্রিক বিল জমা দেওয়া যাবে। অনেকেই বলছেন নতুন পদ্ধতি শুরু হলে ইলেকট্রিক বিল অনেকটাই কমে যেতে পারে। এছাড়াও ইলেকট্রিক চুরি এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও ইলেকট্রিক মিটারে কারসাজি করে বিল কমানো আর সম্ভব হবে না।
সাধারণ মিটারের সঙ্গে স্মার্ট মিটারের পার্থক্য কোথায়?
সাধারণ মিটার বা ঐতিহ্যবাহী মিটারের থেকে স্মার্ট মিটার উন্নত প্রযুক্তির মিটার। সাধারণ মিটার সাধারণত যান্ত্রিকভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার পরিমাপ করে, যেখানে স্মার্ট মিটার ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য সংগ্রহ করে এবং তা সরবরাহকারীর কাছে পাঠায়।
সাধারণ মিটার (ঐতিহ্যবাহী মিটার)
রিডিং পদ্ধতি: মিটারটি ম্যানুয়ালি পড়তে হয়।
ডেটা সংগ্রহ: বিদ্যুতের ব্যবহার সরাসরি মিটার থেকে পড়তে হয়।
যোগাযোগ: সরবরাহকারীর সাথে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ কম।
সঠিকতা: পরিমাপের নির্ভুলতা মানুষের ভুল বা যান্ত্রিক ত্রুটির উপর নির্ভর করে।
সময়: মিটার রিডিং নিতে বেশি সময় লাগে।
স্মার্ট মিটার
রিডিং পদ্ধতি: ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিডিং পাঠায়।
ডেটা সংগ্রহ: বিদ্যুতের ব্যবহারের তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংগ্রহ করে এবং সরবরাহকারীর কাছে পাঠায়।
যোগাযোগ: সরবরাহকারীর সাথে সরাসরি এবং দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করে।
সঠিকতা: ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, ফলে নির্ভুলতা বেশি।
সময়: রিডিং নেওয়ার জন্য সময় লাগে না, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডেটা সংগ্রহ হয়।
অন্যান্য সুবিধা: স্মার্ট মিটারে গ্রাহকের শক্তির ব্যবহার এবং বিল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়, যা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সাহায্য করে।
অন্যভাবে বলতে গেলে, স্মার্ট মিটার হলো আধুনিক এবং স্বয়ংক্রিয় একটি ডিভাইস যা বিদ্যুতের ব্যবহার পরিমাপ করে এবং সরবরাহকারীর কাছে ডেটা পাঠায়, যা গ্রাহকদের বেশি সুবিধা দেয় এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করে।
স্মার্ট মিটারে সুবিধা কী?
স্মার্ট মিটার ব্যবহার করলে বিদ্যুতের ব্যবহারের তথ্য রিয়েল-টাইমে পাওয়া যায়, ফলে গ্রাহক তার শক্তি ব্যবহার আরও ভালোভাবে বুঝতে পারে এবং সাশ্রয়ী হতে পারে। এছাড়াও, স্মার্ট মিটার ব্যবহার করলে গ্রাহকগণ ১% হারে রেয়াত (Rebate) সুবিধা পান এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ বা পুনরায় সংযোগের জন্য কোনো চার্জ দিতে হয় না। এছাড়াও, স্মার্ট মিটার ব্যবহার করলে বিদ্যুতের বিলের হিসাব সহজে করা যায়, বিলের হিসাবের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
স্মার্ট মিটারের কিছু সুবিধা:
রিয়েল-টাইম ডেটা: স্মার্ট মিটার গ্রাহকদের শক্তি ব্যবহারের রিয়েল-টাইম ডেটা সরবরাহ করে, যা গ্রাহকদের তাদের ব্যবহারের প্যাটার্ন বুঝতে এবং শক্তি সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে।
নির্ভরযোগ্যতা: স্মার্ট মিটারগুলি বেশি নির্ভরযোগ্য, কারণ সেগুলি ম্যানুয়ালি রিডিং নেওয়ার পরিবর্তে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডেটা সংগ্রহ করে।
খরচ সাশ্রয়: স্মার্ট মিটার ব্যবহারের মাধ্যমে শক্তি ব্যবহারের সঠিক হিসাব পাওয়া যায়, যা গ্রাহকদের শক্তি সাশ্রয় করতে উৎসাহিত করে এবং বিলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ ও পুনরায় সংযোগের জন্য কোনো চার্জ নেই: স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার ব্যবহার করলে গ্রাহকগণ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ বা পুনরায় সংযোগের জন্য কোনো চার্জ দিতে হয় না।
সিমুলেটেড ডেটা: স্মার্ট মিটার ব্যবহার করে গ্রাহকরা বিদ্যুতের ব্যবহার সংক্রান্ত ডেটা দেখতে এবং বিশ্লেষণ করতে পারেন।
অন্যান্য সুবিধা: স্মার্ট মিটার ব্যবহার করলে গ্রাহকরা তাদের ব্যালেন্স সম্পর্কে এসএমএস এর মাধ্যমে জানতে পারেন, যা তাদের বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
পরিবেশের জন্য উপকারী: স্মার্ট মিটার ব্যবহার করে শক্তি সাশ্রয় করা যায়, যা কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং পরিবেশকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কোম্পানির জন্য সুবিধা: স্মার্ট মিটারগুলি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কোম্পানিকে তাদের গ্রিড আরও ভালোভাবে পরিচালনা করতে এবং গ্রাহক পরিষেবা উন্নত করতে সহায়তা করে।
স্মার্ট মিটারের অসুবিধা কী?
স্মার্ট মিটারের কয়েকটি প্রধান অসুবিধা হলো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, বিল বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান হ্রাস, প্রযুক্তিগত সমস্যা এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি. স্মার্ট মিটার গ্রাহকের বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্য সংগ্রহ করে, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের কারণ হতে পারে. এছাড়াও, কিছু ক্ষেত্রে বিল বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান হ্রাস, প্রযুক্তিগত সমস্যা এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি (যেমন, রেডিওফ্রিকোয়েন্সি বিকিরণ) দেখা যেতে পারে।
এখানে স্মার্ট মিটারের অসুবিধাগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা: স্মার্ট মিটার গ্রাহকের বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের কারণ হতে পারে। ডেটা সুরক্ষিত না থাকলে, এটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
বিল বৃদ্ধি: কিছু ক্ষেত্রে, স্মার্ট মিটার ব্যবহারের কারণে বিল বৃদ্ধি হতে পারে। ডিমান্ড চার্জ, এনার্জি চার্জ, মিটারের ভাড়া এবং ভ্যাট ইত্যাদি বিলের সাথে যুক্ত হওয়ার কারণে বিল বাড়তে পারে।
কর্মসংস্থান হ্রাস: স্মার্ট মিটার ম্যানুয়াল রিডিংয়ের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দেয়, ফলে আধা-দক্ষ কর্মীদের কর্মসংস্থান হ্রাস পেতে পারে।
প্রযুক্তিগত সমস্যা: গ্রামীণ বা দূরবর্তী অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল হলে, স্মার্ট মিটার ঠিকমতো কাজ নাও করতে পারে. নেটওয়ার্কের সমস্যা বা ব্যাঘাতের কারণেও রিডিং পাঠাতে সমস্যা হতে পারে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি: স্মার্ট মিটার রেডিওফ্রিকোয়েন্সি (RF) বিকিরণ নির্গত করে, যা কিছু মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে. যদিও এটি কম শক্তির বিকিরণ এবং সরাসরি DNA-এর ক্ষতি করতে পারে না, কিছু ক্ষেত্রে তাপের কারণে সমস্যা হতে পারে।
তালিকাগত পরিবর্তন: একবার স্মার্ট মিটার ইনস্টল হয়ে গেলে, সাধারণত ঐতিহ্যবাহী মিটারে ফিরে যাওয়া যায় না।
স্মার্ট মিটারের সুবিধা এবং অসুবিধা বিবেচনা করে, প্রযুক্তিটি ব্যবহারের আগে এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলো ভালোভাবে বিবেচনা করা উচিত।
স্মার্ট মিটারে বিল বেশি আসে?
এনিয়েও ধন্দ রয়েছে অনেকের। কিন্তু, বিদ্যুৎ দফতরের দাবি, এই ধারণাও ভ্রান্ত। আসলে-
বর্তমান ইউনিট রেটেই স্মার্ট মিটারে বিল তৈরি হয়। শুধু আগে তিন মাসের বিল একবারে আসত, এখন প্রতি মাসেই অনলাইন স্টেটমেন্ট পাওয়া যাবে। হিসাব বুঝতে অসুবিধা হলে আগের ৩ মাসের বিল ৩ দিয়ে ভাগ করলেই মাসিক হিসাব মিলে যাবে। স্মার্ট মিটার প্রযুক্তির উন্নতি এনেছে, বিভ্রান্তি নয়। মধ্যরাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ভয় একেবারেই অমূলক। সরকারের পক্ষ থেকেও সাধারণ মানুষের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছে নিয়মকানুন। তাই বাড়িতে স্মার্ট মিটার লাগানো নিয়ে ভয় নয়, বরং সচেতনতা দরকার।
তবে বিল আসতেই মাথায় বাজ মধ্যবিত্তদের
স্মার্ট মিটার নিয়ে রাজ্যবাসীর এখন চরম বিভ্রান্তি। বিভিন্ন জেলায় গ্রামাঞ্চলে জোর করে স্মার্ট মিটার বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। এমনকি নতুন মিটারে বাড়ছে বিদ্যুতের বিলও! এবার এই অভিযোগ ঘিরে বিড়ম্বনায় ব্যান্ডেলের বাসিন্দারা। ব্যান্ডেল কেওটা শরৎপার্কের বাসিন্দা দম্পতি সুশান্ত জোশেফ ও পম্পা জোশেফ।তাঁদের বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসেছে গত মাসে। চলতি মাসে বিল এসেছে প্রায় বারো হাজার টাকা।
পম্পা জোশেফ বলেন, “আমরা স্মার্ট মিটার বসাতে চাইনি। জোর করে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে। এখন বিল দেখে মাথায় হাত। কী করে এক মাসে বারো হাজার টাকা দেব!” সুশান্ত গুজরাটে থাকেন। বাড়িতে দুই মেয়ে নিয়ে থাকেন। তাঁর স্বামী গুজরাট থেকে মেল করে মুখ্যমন্ত্রী, বিদ্যুৎমন্ত্রী, বিদ্যুৎ দফতরে চিঠি করে অভিযোগ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা চাই পুরোনো মিটার ফিরিয়ে দেওয়া হোক।”
আসলে গ্রাহকেরা অনেক সময় অভিযোগ করছেন, প্রিপেড স্মার্ট মিটার বসানোর পর থেকেই একাধিক গ্রাহক অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল পাচ্ছেন। টাকার অঙ্কে গরমিল, ইউনিটের হিসেব নিয়ে ধোঁয়াশা—এই সব অভিযোগ তুলে স্থানীয় বিদ্যুৎ দফতরের বিরুদ্ধেও ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন আন্দোলনকারীরা। উপভোক্তারা জানাচ্ছেন, অবিলম্বে এই প্রকল্প বাতিল করে পুরনো মিটার ব্যবস্থাকেই ফের চালু করতে হবে।
স্মার্ট মিটার নিয়ে ক্ষোভ অব্যাহত
স্মার্ট মিটার বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ চলছেই। সম্প্রতি নিউ ব্যারাকপুরে বামেরা বিক্ষোভ দেখায়। এ দিন স্মার্ট মিটার নিয়ে একাধিক অভিযোগ তুলে বিদ্যুৎ দপ্তরের সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়ে বামেরা। সেখান থেকে তারা ফের পুরোনো মিটার চালু করার দাবি তোলে। শেষ পর্যন্ত বিদ্যুৎ দপ্তরে ডেপুটেশন জমা দিয়ে বিক্ষোভ তোলে তারা। তবে স্মার্ট মিটার নিয়ে মানুষের সুবিধার জন্যই করা এ দিন সে কথা জানালেন নিউ ব্যারাকপুর বিদ্যুৎ দপ্তরের স্টেশন ম্যানেজার বাপ্পাদিত্য ঘোষ। বামেদের অভিযোগ, প্রিপেড স্মার্ট মিটার বসানোর পরে থেকেই একাধিক গ্রাহকের কাছে অনেক টাকার বিদ্যুতের বিল আসছে। অবিলম্বে এই প্রকল্প বাতিল করে পুরোনো মিটার ব্যবস্থাকেই ফের চালু করতে হবে।
স্মার্ট মিটারের নামে রাহাজানি বাংলায়
অন্যদিকে এমত পরিস্থিতিতে এবার স্মার্ট মিটার (smart meter) ইস্যুতে রাজ্যের সমালোচনায় প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ। “স্মার্ট মিটারের নামে বাংলায় নতুন রাহাজানির পথ খুলে দেওয়া হচ্ছে”, রাজ্যকে বিঁধে মন্তব্য বহরমপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদের।
কী বলেছেন অধীর চৌধুরী?
“স্মার্ট মিটার দিলে সঙ্গে সঙ্গে ইলেকট্রিকের বিল বাড়বে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিকল্পতিভাবে মানুষের কাছ থেকে রাহাজানি করার জন্য এই স্মার্ট মিটার আমদানি করেছে। সরকারে ভাঁড়ার শূন্য, ভাঁড়ার বোঝাতে সরকারের রোজগার দরকার, সেই রোজগার করতে গিয়ে একদিকে GST-এর উপরে হামলা হচ্ছে, একদিকে যানবাহনের উপর হামলা হচ্ছে। এবার স্মার্ট মিটারের নামে নতুন নতুন রাহাজানির পথ খুলে দেওয়া হচ্ছে।”
অধীর চৌধুরী আরও বলেন, “আগামী দিনে মানুষের বিদ্যুতের খরচ দিনের পর দিন বেড়ে যাবে। কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্যগুলিতে বিদ্যুতের দাম মকুব করা হয়, পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতদিন কলকাতা ভুগছিল, এখন গোটা পশ্চিমবঙ্গ ভুগবে। আমরা চাই রাজ্য সরকার মানুষের আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে বিদ্যুতের দাম মকুব করুক, যেমন ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গনা, কর্নাটক করেছে।”
কী বলছে বিদ্যুৎ দফতর?
যদিও এসবের মাঝে বিদ্যুৎ দপ্তরের দাবি, স্মার্ট মিটারের জন্য গ্রাহকদের উপকারই হচ্ছে। নিউ ব্যারাকপুর বিদ্যুৎ দপ্তরের স্টেশন ম্যানেজার বাপ্পাদিত্য ঘোষ বলেন, ‘এর আগে তিন মাস অন্তর বিল পাঠানো হতো। যার জন্য অনেক সময়ে গ্রাহকরা হিসেবে গোলমাল করতেন। কিন্তু এখন প্রতি মাসে ইউনিট অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্ল্যাবে বিল তৈরি হচ্ছে এবং তার উপর ছাড়ও থাকছে। ভুল বার্তা এবং কিছু ক্ষেত্রে গুজব ছড়ানোর ফলেই মানুষের মধ্যে এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তাই এ ধরনের সমস্যার মোকাবিলায় সচেতনতামূলক প্রচারে জোর দেওয়া হবে।’
এছাড়াও বিদ্যুৎ দফতরের বারাসত ডিভিশনের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার বাপ্পাদিত্য ঘোষ স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন—
রিচার্জ শেষ হয়ে গেলেও হঠাৎ করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে না।
প্রতিটি স্মার্ট মিটারে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বকেয়া বিদ্যুৎ ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে।
অর্থাৎ, আপনি রিচার্জ না করলেও একপ্রকার ‘ক্রেডিট ব্যালেন্স’-এ চলতে পারবেন।
কখন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে?
যখন এই বকেয়ার সীমা ৩০০ টাকা পেরিয়ে যাবে, তখনই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে, শনিবার, রবিবার ও সরকারি ছুটির দিন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে না।
প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে না।
শুধুমাত্র অফিস টাইম অর্থাৎ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যেই সংযোগ কাটা হচ্ছে।
সংযোগ কাটা গেলে কী করবেন?
আপনি নিজের মোবাইল বা কমপিউটার থেকে অনলাইন পেমেন্ট করতে পারেন।
অথবা কাছের বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে বিল মিটিয়ে দিতে পারেন।
আরও ভালো খবর— বিল মিটিয়ে দিলেই অটোমেটিক বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরে আসবে। আগের মত মিস্ত্রি এসে লাইন জোড়ার দরকার নেই।
স্মার্ট মিটার প্রকল্পে রাজ্যের অবস্থান
বর্তমানে পশ্চিম বর্ধমান, ওয়েস্ট বেঙ্গলে স্মার্ট মিটার বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত এর বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। জানা গিয়েছে রাজ্য সরকার স্মার্ট মিটার বসানোর পরিকল্পনা করেছে এবং ৩৭ লক্ষ মিটার বসানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বিভিন্ন স্থানে এই মিটার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে এবং এটি ডিজিটাল মিটারিং ব্যবস্থার একটি অংশ।
স্মার্ট মিটার বসানোর পরিকল্পনা: পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যে স্মার্ট মিটার বসানোর পরিকল্পনা করেছে। বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন, বিদ্যুৎ চুরির প্রতিরোধ এবং গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্যমাত্রা: রাজ্য সরকার ৩৭ লক্ষ স্মার্ট মিটার বসানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা প্রাথমিক পর্যায়ে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন পর্ষদের অধীনে বসানো হবে।
প্রজেক্টের অগ্রগতি: রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে এবং কিছু স্থানে পাইলট প্রজেক্টও চালু হয়েছে।
পশ্চিম বর্ধমান: পশ্চিম বর্ধমান, ওয়েস্ট বেঙ্গল স্মার্ট মিটার বসানোর পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তবে এই অঞ্চলের বিস্তারিত তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।
অন্যান্য রাজ্য: বিহার রাজ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে, এরপর আসাম এবং উত্তরপ্রদেশ রয়েছে।