নিউজ ডেস্ক: দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে তপ্ত রবীন্দ্রনগর। থমথমে গোটা এলাকা। গোটা এলাকায় পড়ে ইটের টুকরো। তাণ্ডবের ছাপ কার্যত স্পষ্ট। বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছেন বিশাল পুলিশ। বস্তুত, গতকাল দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সন্তোষপুর-রবীন্দ্রনগর এলাকা। আক্রান্ত হন একাধিক পুলিশ। ইটের আঘাতে আহত এক মহিলা পুলিশকর্মীও। কলকাতা পুলিশ ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ মিলে গোটা ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে গতকালই কলকাতা পুলিশ চোদ্দ জনকে গ্রেফতার করেছিল। আর পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষ থেকে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মহেশতলায় ধুন্ধুমার
বুধবার দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মহেশতলায়। তাণ্ডবের চিত্র দেখা গিয়েছে সেখানে। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। নাগাড়ে ইটবৃষ্টি আর পাথর ছোড়া হয়েছে পুলিশদের উপর। রক্তাক্ত হয়েছেন একাধিক পুলিশকর্মী। শুধু যে পুলিশকর্মীরা আহত হয়েছেন তা নয়, রবীন্দ্রনগর থানার সামনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের একটি বাইকে। ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশের গাড়ি। পাথর, ইট ছুড়ে ভাঙা হয়েছে পুলিশের গাড়ির কাচ।
পাশাপাশি বাড়িতেও হামলা চালানো হয়। দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। প্রথমে পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকায় সাময়িক ভাবে পিছু হটতে কার্যত বাধ্য হয় পুলিশ বাহিনী। পরে অতিরিক্ত ফোর্স আসায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে অগ্রসর হয় পুলিশ।
ঠিক কী ঘটেছিল?
স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, বুধবার বাজার চলাকালীন কয়েকশো মানুষ আসেন। অভিযোগ করা হয়, স্থানীয় এক মন্দির কমিটির জমি ঘিরে বিবাদের জেরে স্থানীয়দের একটি গোষ্ঠী চড়াও হয় অন্য এক পক্ষের ওপরে। মন্দির কমিটির জমিতে ভাঙচুর চলে। একটি গোষ্ঠীর মালিকানাধীন দোকানপাট, বাড়িঘরেও হামলা চালায় অপর পক্ষ। পুলিশ আটকাতে গেলে পুলিশকেও মার খেতে হয়েছিল। এখনও তার ছাপ স্পষ্ট। এমনকী সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙা হয়েছে। লুঠ হয়েছে দোকানে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে রয়েছে র্যাফ, রয়েছে কমব্য়াট ফোর্সও। পুলিশের তরফে এলাকায় জমায়েত করতে নিষেধ করা হচ্ছে।
অশান্তির নেপথ্যে তুলসী মঞ্চ?
পুলিশ জানিয়েছে, যেখানে একজন ফল বিক্রেতা আম বিক্রি করতেন, সেখানে তুলসী মঞ্চ তৈরি নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। ফল বিক্রেতা কয়েকদিনের জন্য কোথাও গিয়েছিলেন। এর মধ্যে ওই জায়গায় তুলসী মঞ্চ তৈরি করা হয়। আজ ফল বিক্রেতা ফিরে এসে তুলসী মঞ্চ দেখে রেগে যান। ক্রমেই এই বিবাদ আরও তীব্র হয়ে ওঠে এবং দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে পরিণত হয়। প্রথমে পর্যাপ্ত পুলিশ বাহিনী ছিল না। কয়েকশো জনতাকে সামলাতে পারেনি মাত্র কয়েকজন পুলিশকর্মী। পুলিশের দিকে পাথর ও ইট ছোঁড়া হয়।
এলাকাজুড়ে জারি ১৬৩ ধারা
গতকালের এই ঘটনার পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে দেখা গেল রবীন্দ্রনগর থানা এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে একাধিক দোকানপাট। রাস্তায় মানুষের আনাগোনা খুবই কম। বলাই যায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে গোটা এলাকাজুড়ে। এলাকাজুড়ে জারি রয়েছে ১৬৩ ধারা।
সংঘর্ষে গ্রেফতার ৪০
মহেশতলার রবীন্দ্রনগরের সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেফতার করা হল ৪০ জনকে। তার মধ্যে ১৮ জনকে ধরা হয়েছিল গতকালই। জানা গিয়েছে, গতকালই কলকাতা পুলিশ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছিল হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে। এদিকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ গ্রেফতার করেছিল ৪ জনকে। পরে আরও ২৪ জনকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ।
ঘটনার প্রতিবাদে সরব বিরোধী দলনেতা
মহেশতলার এই ঘটনায় এবার সরব হলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বললেন, ”মহেশতলার মেটিয়াবুরুজ। পুলিশের গাড়িও ভেঙেছে। প্রচুর পুলিশ রক্তাক্ত। হিন্দুরা রক্তাক্ত। আমি এবং আমার ৫ কলিগ দেখা করতে এসেছিলাম মহামান্য ডিজি- র সঙ্গে। উনি থেকেও মিট করেননি। মিট করেননি মমতার নির্দেশে। কারণ আমরা জানি সবাই ল্যাম্পপোস্ট। একটা পোস্ট। হিন্দু বিরোধী সরকার। মুসলিম লিগের সরকার। অত্যাচারীর সরকার। ধূলিয়ান, শামসেরগঞ্জ, মোথাবাড়ির পরে কলকাতার কাছে ১০ কিলোমিটার দূরে অত্যাচার। আগামীকাল বিধানসভা চলতে দেওয়া হবে না। কোয়েশ্চেন-অ্যানসারের পরে বিধানসভা চলতে আমরা দেব না।”
একইসঙ্গে আধাসেনা মোতায়েনের দাবি জানান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, পুলিশ ফেল, মমতা ফেল। রাজ্য পুলিশের ডিজির সঙ্গে দেখা করার জন্য ভবানী ভবনে আসেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে ডিজির সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। তাঁর দাবি ডিজি দেখা করেননি। শুভেন্দু বলেন, ৩৫জন পুলিশ মার খেয়েছে। ১২টা পুলিশের গাড়ি ভেঙেছে। এটা জেহাদিদের সরকার। মমতা মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না। লিখে রাখুন। আমার পুলিশ ভাইরা মার খাচ্ছে। তুমি ফেল করলে প্যারামিলিটারি চাও, এটা বলা আছে। প্রতেকটা বাড়ি থেকে এফআইআর করানো, নিরাপত্তা দেওয়া, হিন্দুদের জন্য আমরা আছি। কাল বিধানসভা উত্তাল হবে। ধুলিয়ান, শামসেরগঞ্জ, মোথাবাড়িতেও যা করেছি, এখানেও তাই করব।বলেন শুভেন্দু অধিকারী।”
শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ডাক শুভেন্দুর
মহেশতলার ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদের ডাক দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার রাতে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে শুভেন্দু জানান, শান্তিপূর্ণভাবে এই ঘটনার প্রতিবাদ করবেন তাঁরা৷ দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে বুধবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা এলাকা। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। মহেশতলায় হিন্দুদের উপর অত্যাচার হয়েছে বলেই অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মহেশতলায় তুলসি মঞ্চ উপড়ে ফেলে দেওয়া নিয়ে অশান্তির সৃষ্টি হয় বলেও দাবি করেছেন শুভেন্দু। এরপ বুধবার রাতে সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো বার্তা পোস্ট করে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান বিরোধী দলনেতা।
ভিডিয়ো বার্তায় বলেন, “ডায়মন্ড হারবার লোকসভার মেটিয়াবুরুজ বিধানসভার মহেশতলা পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে, রবীন্দ্রনগর থানার কাছে যা হয়েছে তা পুরো পশ্চিমবঙ্গ দেখল যে কীভাবে হিন্দুদের উপর আক্রমণ হল ৷ তুলসি মঞ্চকে তুলে ফেলে দিয়ে তুলসিমা’কে অপমান করেছেন। তারই প্রতিবাদে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের এবং সনাতনীদের গেরুয়া পতাকা হাতে নিয়ে এই ঘটনার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ করার জন্য বিনম্র আবেদন জানাচ্ছি।”
মহেশতলায় যেতে চেয়ে DGPকে ই-মেইল শুভেন্দুর
গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত মহেশতলায় যেতে চেয়ে রাজ্যের ডিজি ও ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপারকে ই মেইল করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় সেকথা জানিয়ে চিঠির প্রতিলিপি প্রকাশ্যে এনেছেন শুভেন্দুবাবু। মহেশতলা হিংসার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবারই বিধানসভা অচল করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। এবার সেখানে যেতে চেয়ে প্রশাসনের ওপর চাপ বাড়ালেন বিরোধী দলনেতা।
এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে শুভেন্দুবাবু লিখেছেন, গতকাল জেহাদি হামলায় আক্রান্ত হিন্দু পরিবার ও হিন্দু দোকানদারদের সঙ্গে দেখা করে তাদের সমবেদনা জানাতে আমি সঙ্গে একজন বিধায়ককে নিয়ে মহেশতলায় যেতে চাই। আমি আজ রাজ্যের ডিজিপি ও ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছি। তাদের কণ্ঠ শুনতে ও তাদের অভিযোগগুলি বুঝতে আমার এই সিদ্ধান্ত। আশা করি প্রশাসন আমার সফরে বাধা দেবে না।
শুরু তৃণমূল-বিজেপি তরজা
যদিও গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে এদিন মহেশতলার অশান্তি প্রসঙ্গে পুর ও নগরোয়ন্ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বাংলা কখনই গুজরাট হবে না। এখানে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ছিলাম, আছি, থাকব। পুলিশ পুলিশের কাজ করবে। আমাদের বাংলায় হিংসার কোনও জায়গা নেই। দুষ্কৃতীরা শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করলে আইন কঠোরভাবে তার প্রতিরোধ করবে। কড়া শাস্তি হবে।”
উর্দিধারীদের উপর আক্রমণের প্রতিবাদ করে ফিরহাদ আরও বলেন, “পুলিশের উপর আক্রমণ হলে আইনে যে প্রভিশন আছে, সেই অনুযায়ী শাস্তি হবে। কাউকে ছাড়া যাবে না। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।” এরপর গেরুয়া শিবিরকে বিঁধে তিনি আরও বলেন, “বিজেপি কী বলল সেটা দিয়ে কিছু যায় আসে না। কারণ, এরা নিজেরা সন্ত্রাসবাদী। এরা নিজেরা অশান্তি করে। এরা উসকানি দিয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে। আমাদের বাংলা সংহতি, সম্প্রীতির সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। এবং তা চালিয়ে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
তবে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা এই প্রথম নয়, এর আগেও রাজ্যে বহুবার বিভিন্ন সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে-
স্ট্র্যান্ড রোডে পুলিশের উপর হামলা
কলকাতার স্ট্র্যান্ড রোডে শনিবার রাতে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। দুই পুলিশকর্মীর উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় এক ব্যক্তি। পরে জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি আসলে বাংলাদেশের নাগরিক এবং সে ভারতে রয়েছে অবৈধভাবে। ধৃত বাংলাদেশি নাগরিকের নাম সুলতান। বর্তমানে সে পুলিশি হেফাজতে রয়েছে।
শনিবার রাতে স্ট্র্যান্ড রোডে এক কনস্টেবলের চোখে পড়ে, এক ব্যক্তি লোহার রড হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ফুটপাথে। সন্দেহজনক আচরণ দেখে ওই কনস্টেবল রডটি কেড়ে নেন। এরপর থানার ভিতর থেকে ডিউটি শেষ করে বেরোচ্ছিলেন এএসআই পার্থ চন্দ ও কনস্টেবল সুখেন্দু মাঝি।সেই মুহূর্তে আচমকাই সুলতান ছুরি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে দু’জনের উপর। পুলিশ সূত্রে খবর, ছুরির কোপে পার্থবাবুর মুখে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং সুখেন্দু মাঝিও আহত হন। দুই পুলিশকর্মীকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।ধস্তাধস্তির সময় সুলতান নিজেও সামান্য জখম হয়েছে। তাঁকেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য, তারপর পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
সিউড়িতে দুই দুষ্কৃতীকে ধরতে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশ
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি হাতিয়া গ্রাম সংলগ্ন অমৃতবাঁধ এলাকায় টহল দিচ্ছিল লাভপুর থানার পুলিশ। ওই এলাকাতেই নকল কয়েনের ব্যবসা চলছে বলে খবর মেলে। সঙ্গে সঙ্গেই তল্লাশি অভিযানে যায় পুলিশ। অভিযোগ, সেই সময় অন্তত ২০ জন নকল কয়েন ব্যবসায়ী পুলিশকে তাড়া করেন। ধাওয়া করে এসে হাতিয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকেন তাঁরা। সেই ইটের ঘায়ে ভাঙে পুলিশের গাড়ির কাচ। আহত হন এক পুলিশকর্মীও।
রামপুরহাট পুলিশের উপর হামলা গ্রামবাসীদের
ভিন রাজ্যে অভিযুক্তকে পাকড়াও করতে গিয়ে ঘটল বিপত্তি। বাংলার পুলিশের উপর হামলা চালালেন ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা। এমনকী পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। কয়েকজনকে মারধরও করার অভিযোগ। জানা গেছে, বীরভূমের রামপুরহাট থানার পুলিশ পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডের পাকুর জেলার মহেশপুর থানা এলাকার গদরপাড়া গ্রামে এক অভিযুক্ত মহিলাকে পাকড়াও করতে যায়। সেই সময় অভিযুক্ত মহিলার পরিবারের সদস্যরা ও গ্রামবাসীরা আদালতের গ্রেপ্তার করার বৈধ কাগজ দেখতে চান। কিন্তু রামপুরহাট থানার এসআই স্বপন কুমার ঘোষ কোনও কাগজ দেখাননি গ্রামবাসীদের।
এরপরই ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা বাংলার পুলিশের উপর হামলা চালায়। বাঁশ, লাঠি হাতে করে রামপুরহাট থানার পুলিশকে তাড়া করেন গ্রামের বাসিন্দারা। রামপুরহাট থানার পুলিশ কর্মীদের মারধরের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ভাঙচুর করা হয় রামপুরহাট থানার পুলিশের গাড়িটি। পুরো ঘটনার ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিকাশ ভবনে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা
এসব ছাড়াও সম্প্রতি বিকাশ ভবনে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। চাকরিহারা শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের আন্দোলন চলাকালীন, পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি ও লাঠিচার্জের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে, তারা কেবল বিকাশ ভবনের কর্মীদের উদ্ধারের জন্যই বলপ্রয়োগ করেছে। তবে আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে, পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পুলিশ তাদের উপর ইচ্ছাকৃতভাবে অত্যাচার করেছে।
মালদায় আক্রমণের মুখে পুলিশ
এখানেই শেষ নয়, পুলিশের ওপর হামলার পাশাপাশি মালদার কালিয়াচকে অভিযান চালানোর সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে চালানো হয় গুলি। যদিও ঘটনায় আহত হননি কেউ। পুলিশ সূত্রে খবর, কালিয়াচক থানার সাইলাপুর গ্রামের একটি বাগানের মধ্যে মজুত করা হয়েছিল কাফ সিরাপ। গোপনসূত্রে খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করলে পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা গুলি চালায়। এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে স্থানীয় ২ বাসিন্দা বরুণ মণ্ডল এবং মিঠুন শেখকে। ধৃতদের কাছ থেকে একটি ৭ mm পিস্তল ও একটি ম্যাগাজিন, ২ রাউন্ড লাইভ কার্তুজ এবং একটি গুলির খোল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বালি পাচার-মাটি চুরি রুখতে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশ
এছাড়াও বাঁকুড়ায় সোনামুখীতে বালি পাচারের বিরোধিতায় করায় ক্যাম্পে ঢুকে পুলিশকে পেটায় দুষ্কৃতীরা। অন্যদিকে মাটি পাচার রুখতে গিয়ে আক্রান্ত হয় এক পুলিশ আধিকারিক ও এক সিভিক ভলান্টিয়ার। মাটি মাফিয়ারা পাথর ও হাঁসুয়া নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়। পরপর দুই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
প্রথম ঘটনাটি ঘটে বাঁকুড়ার সোনামুখী থানা পুলিশ ক্যাম্পে। নদী থেকে বালি চুরি করে পাচার করতে দিতে হবে এই দাবিতে সোনামুখী থানা পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চলে। এই ঘটনায় তিন পুলিশ কর্মী জখম হন। পুলিশ জানিয়েছে, সোনামুখী থানার উত্তর বেসিয়া এলাকার নদীর ওপারে নদীঘাট থেকে দীর্ঘদিন ধরে বালি পাচারের কাজ চলছিল। নদীর ওপারে সোনামুখী থানার পুলিশ একটি ক্যাম্প থেকে নজরদারি চালায়। মঙ্গলবার ওই ক্যাম্পে একজন পুলিশ কর্মী ও দু’জন সিভিক মোতায়েন ছিল। ওদিন রাতে নদীগর্ভ থেকে বালি চুরি করে পাচারের চেষ্টা করায় ক্যাম্পে থাকা পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার বাধা দেয়। তখনই পাচারকারীরা পুলিশের উপর পাল্টা হামলা চালায়। এরপর জখম তিন পুলিশ কর্মীকে উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় সোনামুখী গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনাই জড়িত ৭ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতরা হল অজিত সরকার, কিশহরি মল্লিক, রতন সরকার, দীপক মণ্ডল, সীমন্ত বিশ্বাস, রাজেশ দে ও সঞ্জীব সিং। ধৃতরা সকলে সোনামুখী থানার উত্তর বেসিয়া ও রুপসায়েরর বাসিন্দা। গ্রেফতারের পর অভিযুক্তদের বিষ্ণুপুর আদালতে পেশ করা হয়। বিচারক ধৃতদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের রানিতলা থানার সরলপুরে। পুলিশের উপর মাটি মাফিয়ারা হামলা চালায়। জানা গিয়েছে, রানিতলা থামার সরলপুরে ভৈরব নদীর পাড় থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটা হচ্ছিল। খবর পেয়ে রানিতলা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। অভিযোগ, তখন মাটি মাফিয়ারা পাথর ও হাঁসুয়া নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়। তারপরেই অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। ঘটনায় এক পুলিশ আধিকারিক ও এক সিভিক ভলান্টিয়ারর জখম হন। পুলিশ দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি জেসিবি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ভগবানগোলা ব্লক-২ ভূমি দপ্তর রানিতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান অভিযুক্তদের বাড়ি ইসলামপর থানা এলাকায়।
এখন প্রশ্ন উঠছে, আইনের রক্ষকরাই যদি নিরাপদ না হয় তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করবে তারা?
রাজ্যে কেন বারবার পুলিশের ওপর দুষ্কৃতী হামলার ঘটনা ঘটছে?
রাজ্যে বারবার পুলিশের ওপর দুষ্কৃতী হামলার ঘটনার পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দুষ্কর্মে বাধা দেওয়া, মাদক কারবার, রাজনৈতিক অস্থিরতা, এবং সামাজিক অসন্তোষ। এছাড়াও, পুলিশের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের ভুল কাজের কারণেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
দুষ্কর্মে বাধা: কোনো দুষ্কর্ম করার সময় পুলিশ বাধা দিলে বা কাউকে আটক করলে, দুষ্কৃতীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালাতে পারে।
মাদক কারবার: মাদক কারবারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে কাউকে ধরলে, দুষ্কৃতীরা পুলিশের ওপর হামলা চালাতে পারে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা: রাজনৈতিক কারণেও দুষ্কৃতীরা পুলিশের ওপর হামলা চালাতে পারে।
সামাজিক অসন্তোষ: বিভিন্ন সামাজিক কারণেও দুষ্কৃতীরা পুলিশের ওপর হামলা চালাতে পারে।
দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা: পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল থাকলে, দুষ্কৃতীরা সহজেই তাদের ওপর হামলা করতে পারে।
পুলিশের ভুল কাজ: কিছু ক্ষেত্রে, পুলিশের ভুল কাজের কারণেও দুষ্কৃতীরা তাদের ওপর হামলা চালাতে পারে।
এছাড়াও, কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুষ্কৃতীরা শুধুমাত্র নিজেদের রাগ বা ক্ষোভ মেটাতে পুলিশের ওপর হামলা করে। কিন্তু কারা রয়েছে এর পেছনে? তবে কি পরিকল্পিতভাবে বারংবার এই হামলাগুলি চালানো হচ্ছে? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।