নিউজ ডেস্ক: আগামী বছরই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। আর তাই ভোটের আগেই মুর্শিদাবাদে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য পুলিশ ডিরেক্টরেট। আসলে সম্প্রতি বেশ কিছু অশান্তির ঘটনায় সংবাদে উঠে এসেছে মুর্শিদাবাদের একাধিক এলাকা। বিশেষ করে গত এপ্রিল মাসে জঙ্গিপুরে সংঘর্ষের জেরে উত্তাপ ছড়িয়েছে সুতি সামশেরগঞ্জ থানা এলাকায়। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে সোমবার রাজ্য পুলিশের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সশস্ত্র ৮ নম্বর ব্যাটেলিয়ন ব্যারাকপুর থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জঙ্গিপুরের অন্তর্গত সুতি থানা এলাকায়।
সদর দপ্তর থেকে সমস্ত বাহিনী, অস্ত্র, গাড়ি সবই স্থানান্তর করা হয়েছে। আপাতত জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার অন্তর্গত আহিরণ মডেল স্কুলে সব স্থানান্তরিত হয়েছে। আরও জানা গিয়েছে, আপাতত ৯ নং ব্যাটেলিয়নের কমান্ডান্টই স্থানান্তরিত ৮ নং ব্যাটেলিয়নের কাজকর্ম দেখভাল করবেন, যতদিন না এই ব্যাটেলিয়নের জন্য নতুন কমান্ডান্ট হিসেবে কাউকে নিয়োগ করা হচ্ছে। ওয়াকিবহাল মহলের মত, এসবই জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার নিরাপত্তা বাড়ানোর স্বার্থে করা হয়েছে। ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে দফায় দফায় মুর্শিদাবাদের একাধিক এলাকা অশান্ত হয়ে ওঠে। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সুরক্ষা বৃদ্ধির জন্যই এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
ওয়াকফ বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল মুর্শিদাবাদ
এ বছর এপ্রিল মাসে ওয়াক্ফ (সংশোধিত) আইন বাতিলের দাবিতে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে জঙ্গিপুর মহকুমার সুতি ও সামশেরগঞ্জ ব্লক। দফায় দফায় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে পরিস্থিতি রীতিমত অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। এমনকি ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে সুতি থানার সাজুরমোড়ে ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠি চার্জ করে পুলিশ।
মুর্শিদাবাদের ক্ষত গায়ে কালীগঞ্জের উপনির্বাচন
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানকে কড়া জবাব দিয়েছে ভারত। অপারেশন সিঁদুরের পর প্রথম ভোট হচ্ছে রাজ্যে। কবে? ১৯ জুন উপনির্বাচন নদিয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে। সংখ্য়ালঘু অধ্যুষিত এই কেন্দ্রে উপনির্বাচনের প্রচারে জাতীয়বাদকে হাতিয়ার করেছে বিজেপি। গতকাল, মঙ্গলবারই ছিল প্রচারের শেষদিন।
কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য আশিষ ঘোষ। একসময়ে দলের মণ্ডল সভাপতি ছিলেন তিনি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দরাজ সার্টিফিকেট, আশিষ ঘোষ দলের একজন বিশ্বস্ত ও নিষ্ঠাবান কর্মী। তৃণমূলের অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন’। একুশের বিধানসভা কালীগঞ্জ কেন্দ্রটি ছিল তৃণমূলের দখলে। এই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন নাসিরুদ্দিন আহমেদ। কিন্তু চলতি বছরে গোড়াতেই প্রয়াত হন তিনি। বাবার কেন্দ্রে উপনির্বাচনে তৃণমূলের বাজি মেয়ে আলিফা আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সহকর্মীরা-সহ অনেকে জানতে চাইছেন, কর্পোরেট কেরিয়ায় ছেড়ে কেন রাজনীতিতে এলাম! কিন্তু বাবার মৃত্যুর তাঁর অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণের দায়িত্বে আমরা উপরে এসে পড়েছিল। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর্শীবাদে ও কালীগঞ্জের মানুষ আহ্বানে রাজনীতিতে এসেছি’।
কালীগঞ্জে উপনির্বাচনে বামেদের সমর্থনে কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছেন কাবিলউদ্দিন শেখ। একসময়ে কালীগঞ্জ বাম শরিক আরএসপি শক্তঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। আবার চব্বিশের লোকসভা ও ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে পারফরম্যান্সে নিরিখে অবশ্য কালীগঞ্জ আসনের লড়াই দাবি জানিয়েছিল সিপিআই-ও। কিন্তু জোটের স্বার্থে শেষপর্যন্ত কংগ্রসকেই সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বামেরা।
প্রথম থেকেই অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন
অন্যদিকে মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি নদিয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনকে সামনে রেখে নিরাপত্তা সংক্রান্ত নজরদারির মহড়া দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। প্রতি ভোটের অনেক আগে থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেও কোনও লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ বিরোধীদের। ভোটের দিন বুথ পাহারা থেকে ফ্লাইং স্কোয়াডে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হলেও তারা সময়মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে না। নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় বাহিনীকে। বিরোধীদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে বহু সময়ে রাজ্যের শাসকদলও এ নিয়ে সরব হয়। তাই এ বার প্রথম থেকেই অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সতর্কতার সঙ্গে নজরদারি চালাতে চায়। যাতে অশান্তি মোকাবিলায় ত্রুটি কোথায় হয়েছে, তা সহজেই চিহ্নিত করা যায়। প্রশাসনিক মহলের মতে, সামনের বিধানসভা ভোটের আগে এই নয়া ব্যবস্থাকে ফুলপ্রুফ করতে নির্বাচন কমিশন কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনকে বেছে নিয়েছে। তবে ১৯ জুন শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, নির্বাচন কমিশন বাকি তিন রাজ্যের চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে নজরদারীর এই নীতি গ্রহণ করেছে।
এ বারই প্রথম উপনির্বাচনে শুধুমাত্র বুথের ভিতরে নয়, বাইরেও থাকছে লাইভ স্ট্রিমিং বা ওয়েব কাস্টিংয়ের ব্যবস্থা। কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের ৩০৯টি বুথ জুড়েই এই নজরদারির ব্যবস্থা থাকবে। এই লাইভ স্ট্রিমিংয়ের আওতায় থাকবে ভোটের দিন নির্বাচনী কেন্দ্রে নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি), ফ্লাইং স্কোয়াডের গতিবিধিও।
এতদিন নির্বাচন ওয়েব কাস্টিংয়ের সাহায্যে নির্বাচন কমিশন বুথের ভিতরের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করত। এ বার দেখা হবে, বুথের বাইরে একশো মিটারের মধ্যে ভোটের লাইনে কী ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি প্রতি ভোটেই বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ভোটের দিন নির্বাচনী কেন্দ্রে অশান্তির মোকাবিলায় কিউআরটি, ফ্লাইং স্কোয়াড সময় মতো না–পৌঁছনোর অভিযোগ ওঠে। এ বার নির্বাচন কমিশন লাইভ স্ট্রিমিং করে তাদের মুভমেন্টেও সরাসরি নজর রাখবে।
ভোটের কিছু দিন আগেই বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র, নগদ টাকা, মদ-সহ বেআইনি জিনিস নিয়ে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ধরতে নির্বাচনী কেন্দ্রে শুরু হয়ে যায় নাকা চেকিং। সেই কাজের নজরদারিতেও লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ব্যবস্থা করেছে কমিশন। তবে ১৯ জুন শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, নির্বাচন কমিশন বাকি তিন রাজ্যের চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও নজরদারির এই নীতি গ্রহণ করেছে।
কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন দেখার জন্য নিয়মমাফিক তিনজন পর্যবেক্ষক ছাড়াও গোটা বিষয়টি তদারকির জন্য কমিশনের সচিব সঞ্জীবকুমার প্রসাদকে কমিশন পাঠাচ্ছে বলে জানিয়ে দিয়েছে। অতীতে যার কোনও নজির নেই। তিনি ভোটের আগের দিনই সকালে কালীগঞ্জ পৌঁছে যাবেন। ভোট মেটার পরে দিল্লি ফিরবেন। এই ভোটে কালীগঞ্জে মোতায়েন থাকবে ১৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। কমিশন সূত্রের খবর, সারা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই যে কোনও ভোটকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি রিগিং, বুথ দখল-সহ বিভিন্ন রকম অশান্তির অভিযোগ ওঠে। প্রানহানির ঘটনা পর্যন্ত ঘটে।