নিউজ ডেস্ক: রাজ্য বনাম কেন্দ্রের টানাপোড়েনে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বরাদ্দ। সেই ১০০ দিনের কাজ নিয়ে এবার কড়া নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। আগামী ১ অগাস্ট থেকে রাজ্যে ফের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প চালু করতে হবে বলে নির্দেশ কেন্দ্রীয় সরকারকে। আদালত সাফ জানিয়েছে, অনন্তকালে জন্য কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্পকে ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া যায় না। প্রয়োজনে দুর্নীতি প্রতিরোধী যে কোনও শর্ত আরোপ করুক কেন্দ্র। কিন্তু প্রকল্প চালু করতে হবে।
মনরেগা প্রকল্প কি?
গ্রামীণ পরিবারগুলিকে নিশ্চিত কাজের সম্ভাবনার আকারে একটি সুরক্ষা দেওয়ার ধারণা নিয়ে MGNREGA তৈরি করা হয়েছিল। MGNREGA-এর প্রধান কাজ হল একটি আর্থিক বছরে একটি গ্রামীণ পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের একশো দিনের মজুরি কর্মসংস্থানের আইনি নিশ্চয়তা দেওয়া, যারা কর্মসংস্থানের দাবি করে এবং অদক্ষ কায়িক কাজ করতে ইচ্ছুক।
Mgnrega এর পুরাতন নাম কি?
মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট 2005 বা MGNREGA , যা মানরেগা নামে পরিচিত, আগে ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট বা NREGA নামে পরিচিত, হল একটি ভারতীয় সামাজিক কল্যাণমূলক ব্যবস্থা যার লক্ষ্য ‘ কাজের অধিকার ‘ নিশ্চিত করা।
মানরেগা এর মূল উদ্দেশ্য কি?
এর লক্ষ্য হল গ্রামীণ এলাকায় জীবিকা নির্বাহের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা, যার মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরা স্বেচ্ছায় অদক্ষ কায়িক শ্রমে নিযুক্ত হন এবং তাদের আর্থিক বছরে কমপক্ষে ১০০ দিনের মজুরির কর্মসংস্থান প্রদান করা হয়।
একশো দিনের কাজের সমস্যা
একশো দিনের কাজের প্রকল্প, যা MGNREGA নামে পরিচিত, ভারতের গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলির জন্য প্রতি বছর ১০০ দিনের নিশ্চিত কর্মসংস্থান প্রদানের লক্ষ্যে ২০০৫ সালে চালু হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পটি গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাস এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যে এই প্রকল্পের তহবিল বরাদ্দ এবং বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক চলছে (High-Court)।
২০২২ সালের শেষের দিকে, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গে MGNREGA-র তহবিল বন্ধ করে দেয়, অভিযোগ করে যে রাজ্য সরকার প্রকল্পের তহবিলের অপব্যবহার করেছে এবং স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এর ফলে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক তাদের মজুরি থেকে বঞ্চিত হন, এবং প্রকল্পের কাজ প্রায় স্থগিত হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে, এবং শ্রমিকরা জীবিকার জন্য বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হন।
রাজ্যের অভিযোগ ও কেন্দ্রের দাবি
দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যের তরফে অভিযোগ উঠছিল, ‘একশো দিনের কাজের টাকা’ আটকে রেখেছে কেন্দ্র। অপরদিকে, কেন্দ্রের দাবি, বাংলায় এই প্রকল্পে বেলাগাম দুর্নীতি হয়েছে। ঘটনার তদন্তে এসেছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলও। মোট ৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা বণ্টনের ক্ষেত্রে দুর্নীতি করা হয়েছিল বলে আদালতে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রের অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী। নোভাল অফিসারও জানান, তাঁরা পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, মালদহ, দার্জিলিং মতো একাধিক জেলায় সমীক্ষা করে ‘একশো দিনের কাজের’ টাকা বণ্টনের ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন। এই চার জেলা থেকে মোট ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার এই মামলার শুনানি ছিল। সওয়াল-জবাবের পর প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের নির্দেশ, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিশেষ শর্ত আরোপ করতে পারবে কেন্দ্র। যে কোনও ধরনের নিয়ম তৈরি করতে পারবে কেন্দ্র। বিচারপতি এও বলেন, “কেন্দ্র চাইলে কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমের সরাসরি নির্দিষ্ট ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবে। দুর্নীতি রোধে প্রয়োজনীয় নজরদারি চালাতে পারবে কেন্দ্র। পাশাপাশি রাজ্যের সব জেলাতেই তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবে কেন্দ্র।”
রাজ্য ও কেন্দ্রের প্রতিক্রিয়া
কলকাতা হাই কোর্টের (High-Court) এই রায়ের পর রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) নেতারা দাবি করেছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে পশ্চিমবঙ্গকে তহবিল থেকে বঞ্চিত করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের গরিব মানুষের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। আমরা একশো দিনের কাজের জন্য বারবার তহবিল চেয়েছি, কিন্তু বিজেপি সরকার আমাদের দাবি উপেক্ষা করেছে। আদালতের এই রায় আমাদের দাবির প্রমাণ।”
অন্যদিকে, বিজেপি নেতারা অভিযোগ করেছেন যে, তৃণমূল সরকার MGNREGA-র তহবিলের অপব্যবহার করেছে এবং স্থানীয় স্তরে দুর্নীতির কারণে প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়েছে। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “রাজ্য সরকার তহবিলের সঠিক হিসাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তৃণমূলের দুর্নীতির কারণে গ্রামীণ শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশ মেনে তহবিল মঞ্জুর করা হবে, তবে রাজ্য সরকারকে তহবিল ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
এক নজরে মামলার ব্যাকগ্রাউন্ড
উল্লেখ্য, ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধের অভিযোগে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অতীতে একাধিক বার সুর চড়িয়েছিল রাজ্য। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ নিয়ে একাধিকবার সরব হয়েছিলেন। এরই মধ্যে ১০০ দিনের কাজের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে। মামলাকারীর আবেদন ছিল, কেন রাজ্যে এমনটা হচ্ছে, সে বিষয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করুক। মামলাটি যায় প্রধান বিচারপতি বেঞ্চে। কেন রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প বন্ধ রেখেছিল, তা নিয়ে কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে আগেই রিপোর্ট তলব করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট।
অন্যদিকে, ওই প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করা হয়েছে অভিযোগ তুলে এরপর মামলা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি আদালতের সিবিআই তদন্তের আবেদন জানান।
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ‘একশো দিনের কাজের’ মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। মামলাকারী ‘পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত মজদুর সমিতির’ আবেদন, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮৪ লক্ষ টাকা মিটিয়ে দেওয়া হোক। এমনকী বাকি থাকার দরুণ প্রতিদিন ০.০৫ শতাংশ সুদও দেওয়া হোক। ওই প্রকল্পের ফান্ড পুনরায় রাজ্যে বরাদ্দ করুক কেন্দ্র।
৯ মার্চ, ২০২২
মনরেগা (MGNREGA) আইনের ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ফান্ড বন্ধ রাখার কথা জানায় কেন্দ্র।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ, নিজের সোর্স থেকে ওই প্রকল্পের টাকা দেবে রাজ্য।
৬ জুন ২০২৩
কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী জানান, রাজ্যের দেওয়া অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট খতিয়ে দেখেই ওই প্রকল্পের টাকা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নতুন অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য দেওয়া হয়েছে। এমনকী, অনুরোধ জানানো হয়েছে, টাকা বন্ধ নিয়ে পূর্বের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য।
তখন কোর্ট নির্দেশ দেয়, রাজ্যের ব্লকে-ব্লকে এই প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ নিতে হবে। অভিযোগ পাওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে পদক্ষেপ করতে হবে।
১৮ জানুয়ারি, ২০২৪
‘পঞ্চায়েত এবং গ্রামীণ উন্নয়ন দফতর’-এর সচিব হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় দল ৬১৩ কোটি টাকার অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে। তার মধ্যে রাজ্য ২১০.৩৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে।
এরপর হাইকোর্ট মনে করে, ওই প্রকল্পের দুর্নীতি হয়েছে।
চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয় আদালত।
জেলা অনুযায়ী প্রকৃত উপভোক্তাদের তথ্য যাচাই করে ওই কমিটি।
কমিটিতে ছিলেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের এক জন করে প্রতিনিধি, এ ছাড়াও ছিলেন ক্যাগ (অডিটর অ্যান্ড কম্পট্রোলার জেনারেল) এবং অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেলের একজন করে প্রতিনিধি।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ
সম্প্রতি, কলকাতা হাই কোর্টে এই বিষয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে দাবি করা হয় যে একশো দিনের কাজ বন্ধ থাকার ফলে গ্রামীণ শ্রমিকদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। মামলার শুনানির সময়, বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই প্রকল্প বন্ধের কারণ এবং তহবিল বরাদ্দের বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
শুনানির পর, কলকাতা হাই কোর্ট রায় দেয় যে, পশ্চিমবঙ্গে অবিলম্বে একশো দিনের কাজ পুনরায় চালু করতে হবে। আদালত জানায়, গ্রামীণ শ্রমিকদের জীবিকার অধিকার সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে নিশ্চিত করা হয়েছে, এবং এই প্রকল্প বন্ধ থাকার ফলে তাদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আদালত আরও নির্দেশ দেয় যে, কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্যের জন্য তহবিল মঞ্জুর করতে হবে এবং রাজ্য সরকারকে তা স্বচ্ছভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আদালত বলেছে, “একশো দিনের কাজ গ্রামীণ শ্রমিকদের জন্য কেবল একটি কর্মসংস্থান প্রকল্প নয়, এটি তাদের জীবিকার অধিকারের সঙ্গে জড়িত। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে গ্রামীণ জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে না।” আদালত রাজ্য সরকারকে তিন মাসের মধ্যে প্রকল্পের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করার নির্দেশও দিয়েছে।
তবে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, দুর্নীতি রোধে যে কোনও ধরনের শর্ত আরোপ করতে পারবে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে পোর্টালের মাধ্যমের সরাসরি নির্দিষ্ট ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবে। দরকার পড়লে দুর্নীতি রোধে প্রয়োজনীয় নজরদারি চালাতে পারবে কেন্দ্র। পাশাপাশি কেন্দ্র রাজ্যের সব জেলাতেই তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবে বলে জানিয়েছে আদালত। এই রায়ের পর গ্রামের মানুষ ফের এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে আদালত জানিয়েছে, ১০০ দিনের কাজের জন্য বরাদ্দ টাকা কোথায় কী ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, কোথাও দুর্নীতি হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য কেন্দ্রের পর্যাপ্ত ক্ষমতা রয়েছে। কেন্দ্র তা দেখুক। তাতে আদালত বাধা দেবে না। কিন্তু এই কাজ চালু রাখতে হবে। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এ-ও জানায়, মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্ম নিশ্চয়তা আইনের (মনরেগা) কোথাও বলা নেই যে, অর্থের অনিয়ম হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকবে। আদালত শুধু অতীত আর ভবিষ্যতের মধ্যে সীমারেখা টানতে চায়। আইনটির উদ্দেশ্য কার্যকর করতে চায়। আদালত আরও জানায়, অতীতে যা ঘটেছে তা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে।
১০০ দিনের কাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ
১০০ দিনের কাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, প্রকৃত জব কার্ড হোল্ডারদের অধিকাংশই এই প্রকল্পের সুবিধা পাননি। মৃত ব্যক্তিদের নামে টাকা নেওয়া হয়েছে। এমনকি, নকল বাঁধ তৈরি করেও টাকা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে দল পাঠায় কেন্দ্র। ২০২৪ সালে পঞ্চায়েত এবং গ্রামীণ উন্নয়ন দফতরের সচিব হলফনামা দিয়ে জানান, ১০০ দিনের কাজে কেন্দ্রীয় দল ৬১৩ কোটি টাকার অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে। তার মধ্যে রাজ্য ২১০.৩৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে। এর পর আদালতের নির্দেশে একটি চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়, যারা জেলা অনুযায়ী প্রকৃত উপভোক্তাদের তথ্য যাচাই করবে। কমিটিতে রাখা হয় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের এক জন করে প্রতিনিধি। এ ছাড়া ক্যাগ (অডিটর অ্যান্ড কম্পট্রোলার জেনারেল) এবং অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেলের এক জন করে প্রতিনিধি এই কমিটিতে রাখা হয়। ২০২৫ সালের এপ্রিলে এই যাচাই কমিটি হাই কোর্টে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগের ঘটনায় চার জেলা থেকে ‘২৪০ লক্ষ টাকা’ (২৪ কোটি টাকা) উদ্ধার করা হয়েছে। তখনও চার জেলা বাদে রাজ্যের বাকি অংশে ১০০ দিনের কাজ শুরু করা যায় কি না, প্রশ্ন তুলেছিল আদালত। অবশেষে এই সংক্রান্ত মামলায় কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হল কেন্দ্রকে।
গ্রামীণ শ্রমিকদের প্রতিক্রিয়া
একশো দিনের কাজ পুনরায় চালু হওয়ার খবরে গ্রামীণ শ্রমিকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। মুর্শিদাবাদের একজন শ্রমিক, রহিমা বিবি, বলেন, “এই প্রকল্প বন্ধ হওয়ার পর আমাদের পরিবারের খুব কষ্ট হয়েছে। আমরা শহরে গিয়ে কাজ খুঁজেছি, কিন্তু তাতেও স্থায়ী কিছু পাইনি। আদালতের এই নির্দেশ আমাদের জন্য নতুন জীবন।”
অন্যদিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু শ্রমিকরাই উপকৃত হন না, গ্রামের রাস্তা, জলাশয় এবং অন্যান্য অবকাঠামোও উন্নত হয়। প্রকল্পটি চালু হলে আমাদের গ্রামের অর্থনীতি আবার গতি পাবে।”
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
একশো দিনের কাজ পুনরায় চালু হওয়া রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য একটি বড় উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এই প্রকল্প গ্রামীণ পরিবারগুলির ক্রয়ক্ষমতা বাড়াবে, যা স্থানীয় বাজার এবং ব্যবসায়ের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে, তহবিলের স্বচ্ছ ব্যবহার এবং প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা রাজ্য সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এই রায় তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে চলমান বিতর্ককে আরও তীব্র করতে পারে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ইস্যুটি উভয় দলই তাদের প্রচারে ব্যবহার করতে পারে। তৃণমূল এই রায়কে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে, যেখানে বিজেপি রাজ্য সরকারের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পাল্টা আক্রমণ চালাতে পারে।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজ পুনরায় চালু হওয়া গ্রামীণ শ্রমিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জয়। এই প্রকল্পটি কেবল কর্মসংস্থানের সুযোগই নয়, গ্রামীণ পরিকাঠামোর উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও অপরিহার্য। তবে, এই নির্দেশের সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সমন্বয় এবং স্বচ্ছতার উপর। গ্রামীণ জনগণ এখন আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করছে যে, এই প্রকল্প তাদের জীবনে নতুন আলো আনবে।