নিউজ ডেস্ক: নাগপুরে RSS-র অনুষ্ঠানে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের বক্তব্যে উঠে এল আদিবাসী ভাইবোনেদের কথা, উঠে আসে Forest Rights Act-এর প্রসঙ্গও। নাসিক ও বৈতুল–বস্তারের মতো এলাকায় সংঘের অংশগ্রহণে FRA বাস্তবায়ন কেবল আইনি নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি প্রদর্শন করছে বলেও উল্লেখ করেন RSS প্রধান।
আমাদের অনেকেরই হয়তো জানা নেই এই Forest Rights Act তথা বন অধিকার আইন এর সম্পর্কে? এই আইনের প্রয়োগ, সুবিধা সম্পর্কেও আমরা অনেকেই জানি না, আজকের প্রতিবেদনে আমরা সেইসমস্ত বিষয়গুলিই বিস্তারিতভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরব—
বন অধিকার আইন (FRA), ২০০৬ কী?
বন অধিকার আইন (Forest Rights Act), ২০০৬, বা সম্পূর্ণ নামে “তফসিলি জনজাতি এবং অন্যান্য প্রথাগত বনবাসীদের (বন অধিকার স্বীকৃতি) আইন, ২০০৬” একটি ঐতিহাসিক ভারতীয় আইন। এটি বনভিত্তিক তফসিলি উপজাতি (Scheduled Tribes) ও অন্যান্য প্রথাগত বনবাসী (Other Traditional Forest Dwellers)-দের অধিকারকে স্বীকৃতি ও সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে প্রণীত। ঔপনিবেশিক ও স্বাধীনতা-পরবর্তী বননীতি অনুযায়ী, এই জনগোষ্ঠীগুলিকে প্রায়শই তাদের প্রথাগত জমি ও সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। FRA এই অবিচার সংশোধনের চেষ্টা করে। আইনটি ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে বনের অধিকার, বনজ সম্পদের ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনাকে স্বীকৃতি দেয়, যা টেকসই জীবিকা ও অংশীদারিত্বমূলক বন পরিচালনার পথ খুলে দেয়।
FRA কেন প্রবর্তন করা হয়েছিল?
এই আইন চালু হয়:
ঐতিহাসিক অবিচার সংশোধনের জন্য: ব্রিটিশ আমলের বন আইন (যেমন, Indian Forest Act, 1927) ও পরবর্তীকালে স্বাধীন ভারতে গৃহীত নীতির ফলে বনবাসীরা তাদের অধিকার হারায়।
জীবিকা রক্ষার জন্য: বনজ সম্পদের উপর অধিকার প্রদান করে বনবাসীদের জীবিকা নিশ্চিত করা।
টেকসই সংরক্ষণের লক্ষ্যে: বন সংরক্ষণের মাধ্যমে কেবল সরকারি নিয়ন্ত্রণ নয়, সম্প্রদায়ভিত্তিক সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনাকে উৎসাহ দেওয়া।
সামাজিক ক্ষমতায়নের জন্য: সমাজের প্রান্তিক বনবাসীদের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা।
কারা FRA-এর সুবিধাভোগী?
FRA অনুযায়ী কারা উপযুক্ত দাবিদার?
তফসিলি উপজাতি (STs):
অবশ্যই তফসিলি উপজাতিভুক্ত হতে হবে।
যে অঞ্চলে দাবি করা হচ্ছে, সেখানেই বসবাস করতে হবে।
জীবিকার জন্য বনসম্পদের উপর নির্ভরশীল হতে হবে।
অন্যান্য প্রথাগত বনবাসী (OTFDs):
১৩ ডিসেম্বর, ২০০৫-এর আগে অন্তত তিন প্রজন্ম বা ৭৫ বছর ধরে বসবাসের প্রমাণ থাকতে হবে।
বনজ জীবিকার উপর নির্ভরশীল হতে হবে।
দাবিকৃত জমির দখলের প্রমাণ (সরকারি দলিল, মৌখিক সাক্ষ্য বা শারীরিক প্রমাণ) দিতে হবে।
FRA কিভাবে উপজাতিদের ক্ষমতায়ন করে?
আধ্যাত্মিকভাবে: উপজাতিদের পবিত্র স্থান ও ঐতিহ্যিক ধর্মীয় প্রথাকে আইনি স্বীকৃতি দেয় (যেমন: ডোংরিয়া কন্ধ সম্প্রদায়ের নিয়াম-রাজা পাহাড়ে উপাসনার অধিকার)।
সামাজিকভাবে: গ্রামসভা-নির্ভর গণতন্ত্র এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে উৎসাহ দিয়ে।
অর্থনৈতিকভাবে: বনজ পণ্য (যেমন: বাঁশ, তেঁতুলপাতা, মধু) থেকে উপার্জনের অধিকার প্রদান করে এবং জমির মালিকানা নিশ্চিত করে জীবনধারার উন্নয়ন ঘটিয়ে।
বন অধিকার আইন (FRA), ২০০৬ – আদিবাসীদের উপর ঔপনিবেশিক ও স্বাধীনোত্তর ‘ঐতিহাসিক অবিচার’ কী ছিল?
ঔপনিবেশিক শাসনের সময়কার অবিচার:
British Forest Laws: ১৮৬৫, ১৮৭৮ ও ১৯২৭ সালের Indian Forest Acts-এর মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার বনকে “সরকারি সম্পত্তি” ঘোষণা করে।
উচ্ছেদ ও অপরাধীকরণ: আদিবাসীরা, যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বনভূমি ব্যবহার করে এসেছেন, তারা একরাতেই “অবৈধ দখলদার” হয়ে যান।
পবিত্র বনকে নিষিদ্ধ এলাকা ঘোষণা: বহু উপজাতি ধর্মীয় স্থান যেমন পাহাড়, ঝর্ণা ইত্যাদি নিষিদ্ধ ঘোষণার ফলে উপাসনার অধিকার হারায়।
স্বাধীনোত্তর অবিচার:
Indian Forest Act, 1927 বহাল: স্বাধীনতার পরও এই ব্রিটিশ আইনগুলো চালু থাকে এবং বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণ অপরিবর্তিত থাকে।
সংরক্ষিত বন (Reserved Forest) ঘোষণার ফল: লক্ষ লক্ষ উপজাতিকে উচ্ছেদ করা হয় — কোন ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসন ছাড়াই।
উন্নয়ন প্রকল্পের নামে জমি অধিগ্রহণ: বাঁধ, খনি, শিল্পনগরী ইত্যাদির জন্য বনভূমি নেওয়া হয় — অথচ স্থানীয় সম্প্রদায়ের কোনও মতামত নেওয়া হয়নি।
FRA কীভাবে সংবিধানের পঞ্চম তফসিল ও পঞ্চায়েত (PESA) আইনের আদর্শ বাস্তবায়ন করে?
পঞ্চম তফসিলের ধারণা:
· ভারতীয় সংবিধানের ৫ম তফসিল উপজাতি-সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দেয়।
· এই এলাকায় উপজাতিদের স্বার্থরক্ষা রাজ্যপালের দায়িত্ব থাকলেও বাস্তবে এটি কার্যকর হয়নি।
PESA (Panchayats Extension to Scheduled Areas) Act, 1996:
· এটি উপজাতি এলাকায় গ্রামসভাকে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্তগ্রহণকারী সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
· কিন্তু এটি ছিল অনেকটাই নীতিগত ঘোষণা, বাস্তবভিত্তিক প্রয়োগের অভাব ছিল।
FRA কীভাবে এই আদর্শ বাস্তবায়ন করে:
1. গ্রামসভাকে সিদ্ধান্তগ্রহণের কেন্দ্রে আনে: জমি-দাবি যাচাই, CFR মঞ্জুরি, বন ব্যবস্থাপনার দায়—সব গ্রামসভাকে দেওয়া হয়েছে।
2. স্থানীয় সংস্কৃতির স্বীকৃতি: FRA উপজাতিদের আধ্যাত্মিক স্থান, প্রথা ও জীবনধারাকে আইনি স্বীকৃতি দেয়।
3. রাষ্ট্র বন বিভাগের একচ্ছত্র আধিপত্যে কাটছাঁট করে: কেন্দ্রীয় বন আইনগুলোর বাইরে জনগণের অধিকার নিশ্চিত করে।
কেন এত বছর পর FRA চালু করতে বাধ্য হয়েছিল সরকার?
নব্বইয়ের দশকে গণআন্দোলন ও আদিবাসী অধিকার আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে:
· বিশেষ করে মধ্য ভারত, মহারাষ্ট্র, ছত্তীসগঢ়, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডে বন অধিকার নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়।
· বিনামূল্যে উচ্ছেদ, পুলিশি দমন, খনন প্রকল্পে জমি হারানো—এসব প্রশ্নের সম্মিলিত চাপ পড়ে সরকারের উপর।
টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশবাদী বিতর্ক:
· বিশ্বজুড়ে টেকসই উন্নয়ন কথাবার্তায় “community-led forest governance” ধারণা গুরুত্ব পেতে থাকে।
· ভারত সরকার আন্তর্জাতিক ফোরামে এসব কথা বললেও ঘরে কার্যকর কিছু হচ্ছিল না—ফলে বিরোধিতা বাড়তে থাকে।
রাজনৈতিক চাপে সরকার প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়:
· ২০০৪ সালে UPA সরকার ক্ষমতায় এসে “ঐতিহাসিক অবিচার” স্বীকার করে FRA-এর খসড়া প্রণয়ন শুরু করে।
· আঞ্চলিক দল ও আদিবাসী সংগঠনগুলোর সংসদীয় চাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
FRA কি শুধুমাত্র জমি ও জীবিকার অধিকার দেয়, না কি আদিবাসী সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক জীবনকেও স্বীকৃতি দেয়?
জমি ও জীবিকার অধিকারের বাইরে FRA-এর গভীরতর তাৎপর্য:
· FRA-কে অনেকেই শুধুমাত্র জমির পাট্টা দেওয়া আইন হিসেবে দেখেন, কিন্তু এটি তার চেয়েও অনেক বেশি।
· এটি “cultural justice” বা সাংস্কৃতিক ন্যায়” প্রতিষ্ঠার একটি হাতিয়ার।
FRA-র সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক স্বীকৃতি:
1. পবিত্র বন, পাহাড় ও জলের উৎসকে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি:
→ উপজাতিরা যে স্থানগুলিকে পবিত্র মানে (যেমন নিয়ামগিরি পাহাড়, সরনা বন), FRA সেগুলিকে কমিউনিটি রাইটস এর আওতায় আনতে দেয়।
2. ঐতিহ্যিক ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক চর্চার সুরক্ষা:
→ পূজা, উৎসব, রীতি ও আচার যা বনভিত্তিক, FRA-তে তা “Customary rights” হিসেবে রক্ষা করা হয়।
3. সংস্কৃতির উপর আইনগত ছাতা:
→ FRA-র ধারা ৩(১)(j), ৩(১)(l) সরাসরি সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় স্থানের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়।
নিয়ামগিরি পাহাড় রক্ষায় FRA কী ভূমিকা রেখেছে? এটি ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ?
নিয়ামগিরি পাহাড় ও ডোংরিয়া কন্ধ আদিবাসী:
· ওড়িশার ডোংরিয়া কন্ধ সম্প্রদায় নিয়ামগিরি পাহাড়কে তাদের ঈশ্বর ‘নিয়াম-রাজা’র আবাস বলে মানে।
· সেখানে বক্সাইট খনির প্রকল্প নিয়ে Vedanta কোম্পানির প্রকল্পের বিরুদ্ধে বড় আন্দোলন গড়ে ওঠে।
FRA-র ভূমিকা কী ছিল?
1. গ্রামসভা সিদ্ধান্তকে আইনি মান্যতা:
২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে ১২টি গ্রামসভার মতামত নিতে হবে, এবং তারা সর্বসম্মতিতে খনির বিরোধিতা করে।
2. ধর্মীয় স্বাধীনতার সঙ্গে FRA-এর সামঞ্জস্য:
→ ভারতীয় সংবিধানের ধারা ২৫ ধর্মপালনের অধিকার দেয়।
→ FRA সেই অধিকারে ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি যোগ করে—যা শুধুমাত্র মন্দির নয়, পাহাড়-জঙ্গলকে পবিত্র জায়গা হিসেবে মেনে সুরক্ষা দেয়।
3. FRA-র মাধ্যমে ধর্মীয় স্থানের ‘কমিউনিটি ফরেস্ট রাইটস’ স্বীকৃতি পায়।
নিয়ামগিরি কেস ভারতীয় ইতিহাসে প্রথম উদাহরণ যেখানে একটি পবিত্র বনভূমিকে আইনিভাবে রক্ষা করা হয়েছে গ্রামের ধর্মীয় অনুভূতির ভিত্তিতে।
FRA বাস্তবায়নে গ্রামসভার ভূমিকা কী?
গ্রামসভাই FRA-র মূল স্তম্ভ। এরা:
দাবি গ্রহণ করে ও যাচাই করে।
বন অধিকার কমিটি (Forest Rights Committee – FRC)-র মাধ্যমে জমি ও বন সম্পদের অধিকার নির্ধারণ করে।
বন সম্পদের ব্যবস্থাপনা করে এবং সংরক্ষণ নিশ্চিত করে।
বনভূমি হস্তান্তর হলে সম্মতি দেওয়ার অধিকার রাখে।
দাবির প্রত্যাখ্যান ও আপিলের বিষয় সমাধান করে।
দাবির প্রক্রিয়া কীভাবে হয়?
ব্যক্তি বা সম্প্রদায় FRC-এর মাধ্যমে দাবি পেশ করে।
FRC প্রমাণ যাচাই করে, স্থান পরিদর্শন করে এবং গ্রামসভায় উপস্থাপন করে।
গ্রামসভা অনুমোদন দিলে, তা সাব-ডিভিশনাল স্তরে কমিটির কাছে যায়।
তারপর জেলা স্তরের কমিটি তাতে অনুমোদন দেয়।
অনুমোদিত হলে জমির বা বন অধিকার সনদপত্র প্রদান করা হয়।
আদিবাসীদের সামাজিক ক্ষমতায়নে গ্রামসভা-কেন্দ্রিক সিদ্ধান্তগ্রহণ কতটা কার্যকর?
FRA-তে গ্রামসভা কীভাবে ক্ষমতাবান:
1. FRA অনুযায়ী, জমি ও বন অধিকার যাচাইয়ের প্রথম ও প্রধান সংস্থা গ্রামসভা।
2. বনসম্পদ ব্যবস্থাপনা, উচ্ছেদের সম্মতি, অধিকার বাতিল—সব গ্রামসভা দ্বারা নির্ধারিত হয়।
3. এটি নিম্নতর আমলাতন্ত্রের বিকল্প হিসেবে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
কার্যকারিতা—সাফল্য ও সীমাবদ্ধতা:
সাফল্য:
· মেন্ধা-লেখা (মহারাষ্ট্র), নিয়ামগিরি (ওড়িশা)—এই দু’টি গ্রাম প্রমাণ করেছে যে গ্রামসভা যথাযথভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম।
· নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা সামাজিক ক্ষমতায়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
সীমাবদ্ধতা:
· অনেক জায়গায় প্রশাসন গ্রামসভাকে উপেক্ষা করে—বিশেষত ‘PARIVESH’ ও অনলাইন ক্লিয়ারেন্স ব্যবস্থায়।
· গ্রামসভা গঠনের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ হয় না—অধিকাংশ সময় সাইন জোগাড় করে দায়সারা রেজোলিউশন পাস হয়।
বন অধিকার আইন বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ কী কী?
প্রশাসনিক দেরি: উপজাতি ও বন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে দাবিপত্র প্রক্রিয়াকরণ ধীর গতিতে হয়।
প্রমাণের অভাব: অনেক দাবিকারীর কাছে যথাযথ নথি নেই, ফলে যাচাই জটিল হয়।
গ্রাম সভার কম অংশগ্রহণ: বর্ষার সময় প্রায়ই ৫০% কোরামের শর্ত পূরণ হয় না, বিশেষত নারীদের এক-তৃতীয়াংশ উপস্থিতির বাধ্যবাধকতা।
যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই বাতিল: অনেক দাবিপত্র শ্রবণ বা আপিলের সুযোগ না দিয়েই বাতিল করা হয়।
সংরক্ষণ আইনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব: বন বিভাগ প্রায়ই সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দেয়, ফলে FRA দাবিগুলি উপেক্ষিত হয়।
ডিজিটাল আধিক্য: PARIVESH-এর মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের অতিরিক্ত ব্যবহার গ্রাম সভার ক্ষমতাকে বাইপাস করে।
উচ্ছেদের হুমকি: ২০১৯ সালের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বাতিল দাবিকারীদের উচ্ছেদের ঝুঁকি।
সচেতনতার অভাব: বহু সম্প্রদায় তাদের অধিকার বা দাবি অথবা পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত নয়।
সম্পদ ঘাটতি: FRA সেল ও প্রশিক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বা কর্মী নেই।
FRA বাস্তবায়নের সাফল্য ও ব্যর্থতার তথ্য কী বলছে?
সাফল্য:
২০২৩ সালের মধ্যে ২০ লক্ষেরও বেশি ব্যক্তি ও ১.২ লক্ষ কমিউনিটি টাইটেল জারি হয়েছে, প্রায় ৫.৬ মিলিয়ন হেক্টর বনভূমি কভার করে।
মেন্ধা-লেখা, মহারাষ্ট্র: প্রথম CFR প্রাপ্ত গ্রাম, যেখানে বাঁশ সংগ্রহ ও সংরক্ষণে সফলতা এসেছে।
ডোংরিয়া কন্ধ, ওড়িশা: নিয়মগিরিতে খনিজ খননের বিরুদ্ধে গ্রামসভার মাধ্যমে অধিকার রক্ষা হয়েছে।
DAJGUA-এর অধীনে তৈরি FRA সেলগুলো ১৮টি রাজ্যে ৬৮,০০০ উপজাতি গ্রামে দাবি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে।
ব্যর্থতা:
প্রায় ৪০% দাবিপত্র এখনও ঝুলে আছে বা বাতিল হয়েছে, যার অনেকগুলোই যথাযথ ব্যাখ্যা ছাড়া।
২০১৯ সালের সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ১৭ লক্ষ পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি, যদিও পরবর্তীতে তা স্থগিত হয়।
নাগারহোলের জেনু কুরুবা সম্প্রদায় উচ্ছেদের মুখে পড়ে FRA সত্ত্বেও।
CFR স্বীকৃতি কম: মাত্র ৩% সম্ভাব্য CFR এলাকাতেই অধিকার স্বীকৃত হয়েছে।
RSS কেন FRA-র অধীনে গ্রামসভা-কেন্দ্রিক বন শাসনের ওপর গুরুত্ব দেয়?
RSS গ্রামসভা-নির্ভর বন প্রশাসনকে গুরুত্ব দেয় কারণ:
বিকেন্দ্রীকরণ ও স্বনির্ভরতা: স্বনির্ভরতা ও স্থানীয় উন্নয়নের দর্শনের সঙ্গে গ্রামসভা-কেন্দ্রিক শাসন সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ: বনভিত্তিক ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় গ্রামসভা কার্যকর।
সামাজিক ন্যায়: উপজাতিদের অতীত অবিচার সংশোধনে সমাজকেন্দ্রিক প্রশাসন জরুরি।
টেকসই উন্নয়ন: সমাজভিত্তিক বন ব্যবস্থাপনা প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীবিকা দুই-ই রক্ষা করে।
FRA বাস্তবায়নে সংঘের সহায়তায় কোন উদাহরণগুলি রয়েছে এবং তা থেকে কী শিক্ষা নেওয়া যায়?
RSS বা তাদের সহযোগী সংগঠন যেমন বনবাসী কল্যাণ পরিষদের সরাসরি FRA বাস্তবায়নে অংশগ্রহণের নির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও, সফল FRA উদাহরণগুলি থেকে সংগঠনগুলির জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করা যায়:
মেন্ধা-লেখা, মহারাষ্ট্র: ২০০৯ সালে CFR পাওয়া প্রথম গ্রাম, যেখানে গ্রামের উদ্যোগে বাঁশ আহরণ ও বন সংরক্ষণ পরিচালিত হয়েছে। এটি দেখায়, কীভাবে সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ ফলপ্রসূ হয়েছে।
ডোঙ্গরিয়া কন্ধ, ওড়িশা: গ্রামসভার মাধ্যমে বক্সাইট খনির বিরোধিতা করে নিয়ামগিরি পাহাড় রক্ষা করা হয়। এটি প্রমাণ করে, আইনি সহায়তা ও সংহত সিদ্ধান্ত কতটা জরুরি।
নাসিক জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে সংঘের সহযোগিতায় চেতরামজী পাওয়ার এবং তাঁর দল এই আইন বাস্তবায়নের অনুকরণীয় মডেল তৈরি করেছেন।
এখানে গ্রামসভা-ভিত্তিক অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে:
গ্রামের অধিবাসীদের সচেতন করা হয়েছে তাদের বন-সম্পদের অধিকার সম্পর্কে।
দলিল প্রক্রিয়া ও জমির মানচিত্র প্রস্তুত করে, প্রমাণসহ দাবি দাখিল করা হয়েছে।
গ্রামসভা বন ব্যবস্থাপনার ভূমিকা নিয়েছে, যেমন—গাছ রোপণ, বনজ দ্রব্যের টেকসই সংগ্রহ ইত্যাদি।
এর ফলে বহু পরিবার তাদের ঐতিহ্যগত চাষের জমির ওপর স্বীকৃতি পেয়েছে এবং বন অধিকার আইনের যথার্থ প্রয়োগ ঘটেছে।
মধ্যপ্রদেশের বৈতুল ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল:
এই এলাকায় সংঘের সহায়তায় একাধিক গ্রামে সামষ্টিক বন-সম্পদ ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে।
FRA অনুযায়ী “Community Forest Resource Rights” (CFRR) চিহ্নিত করা হয়েছে।
গ্রামের মানুষ নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বনজ দ্রব্য কিভাবে সংগ্রহ হবে, বিক্রি হবে, কিভাবে বন সংরক্ষণ হবে।
গ্রাম সভা সক্রিয়ভাবে বন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করছে, যা আইনের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ছত্তিশগড়ের বস্তার (Bastar) এলাকা:
বস্তার অঞ্চলে FRA প্রয়োগের উদ্যোগ তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে সুপরিকল্পিতভাবে গ্রামসভা সংগঠিত করে অধিকার দাবি জমা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
স্থানীয় আদিবাসী নেতৃত্বকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দাবি প্রক্রিয়ার দক্ষতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
কিছু এলাকায় মহিলাদের অংশগ্রহণও বাড়ানো হয়েছে, বিশেষ করে বন ব্যবস্থাপনা ও প্রাকৃতিক সম্পদ বণ্টনে।
এই তিনটি উদাহরণ—নাসিক, বৈতুল, বস্তার—প্রমাণ করে যে, সঠিক সংগঠিত প্রয়াস, সচেতনতা এবং গ্রামসভার সক্রিয় ভূমিকা থাকলে Forest Rights Act কেবল কাগজে নয়, বাস্তবেও রূপ পেতে পারে।
এই পদ্ধতিকে জাতীয় স্তরে রূপায়ণের দাবি উঠছে—যাতে ঐতিহ্যগত বন-সম্প্রদায়গুলি প্রকৃত অধিকার পায় এবং বন সংরক্ষণেও অংশীদার হয়।