নিউজ ডেস্ক: ভারতের ‘রক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা’ (Defence Research and Development Organisation – DRDO) নিজেদের তৈরি ‘K-6 হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র’-এর প্রথম সমুদ্র-পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর ফলে ভারত কৌশলগত শক্তি ও সামরিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে এক বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে।
এই K-6 ক্ষেপণাস্ত্রটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি,
এটি শত্রুর লক্ষ্যবস্তুতে দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম,
এর সফল পরীক্ষা ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও আত্মনির্ভর করে তুলবে।
১। K-6 হলো সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র
এটি ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা DRDO-র হায়দরাবাদের অ্যাডভান্সড নেভাল সিস্টেম ল্যাবরেটরিতে তৈরি হচ্ছে।
এই ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক সাবমেরিনে বসানো হবে, যা পরমাণু বোমা এবং অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে সক্ষম।
২। এস-৫ শ্রেণির পারমাণবিক সাবমেরিনে বসানো হবে K-6
এই K-6 ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের ভবিষ্যতের S-5 ক্লাস সাবমেরিনে মোতায়েন করা হবে।
এটি একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল, যার গতি ও পাল্লা ব্রহ্মোসের থেকেও বেশি।
৩। MIRV প্রযুক্তিসহ K-6: এক ক্ষেপণাস্ত্রে বহু টার্গেট ধ্বংসের ক্ষমতা
K-6 ক্ষেপণাস্ত্র “Multiple Independently Targetable Re-entry Vehicle” (MIRV) প্রযুক্তি দ্বারা সজ্জিত।
এর মানে একটিমাত্র ক্ষেপণাস্ত্র একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
এটি পারমাণবিক ও সাধারণ—উভয় প্রকারের অস্ত্র বহন করতে পারে।
৪। K-6 এর গতি ও পাল্লা কত?
K-6 একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, যার গতি হবে ৭.৫ ম্যাক – অর্থাৎ শব্দের চেয়েও ৭.৫ গুণ বেশি (প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৯,২০০ কিমি)।
এই মিসাইলের সর্বোচ্চ পাল্লা প্রায় ৮,০০০ কিলোমিটার।
এত উচ্চ গতি থাকায় এটি শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (anti-missile defense) এড়িয়ে যেতে সক্ষম।
৫। K-6 ব্রহ্মোসের তুলনায় আরও ধ্বংসাত্মক
ব্রহ্মোস একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে, কিন্তু K-6 একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্য ধ্বংস করতে পারে।
K-6 এর ওয়ারহেড ব্রহ্মোসের তুলনায় ১০ গুণ বেশি শক্তিশালী।
৬। K-6 কোথায় মোতায়েন করা হবে?
K-6 ক্ষেপণাস্ত্র ভারতীয় নৌবাহিনীর নতুন এস-৫ সিরিজের পারমাণবিক সাবমেরিনে বসানো হবে।
এই সাবমেরিনগুলি হবে আগের Arihant শ্রেণির চেয়ে বড় ও শক্তিশালী।
একটি সাবমেরিন ১২ থেকে ১৬টি K-6 ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারবে।
৭। স্বনির্ভর ভারতের প্রতীক – প্রতিরক্ষায় এক বড় পদক্ষেপ
K-6 ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।
এই প্রযুক্তি দেশে তৈরি হওয়ায় প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিদেশের ওপর নির্ভরতা অনেকটাই কমবে। এটি ভারতের নিজস্ব সামরিক প্রযুক্তি বিকাশের সক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
৮। K-6 ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ভারতের জলতল থেকে পারমাণবিক হামলার ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে-
K-6 ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৮,০০০ কিলোমিটার, যা ভারতের আগে থেকে বিদ্যমান K-4 (৩,৫০০ কিমি) ও K-5 (৬,০০০ কিমি) ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় অনেক বেশি।
এর মানে, ভারতীয় সাবমেরিনগুলো নিজেদের নিরাপদ সীমানার মধ্যেই থেকে K-6 এর মাধ্যমে বহু দূরের শত্রুদের উপর সফলভাবে আঘাত হানতে পারবে।
ফলে সাবমেরিনগুলোকে শত্রুর একেবারে কাছাকাছি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা গভীর সমুদ্রে থেকেই বহু লক্ষ্যে হঠাৎ করে আক্রমণ করতে সক্ষম হবে।
K-6-এ MIRV প্রযুক্তি ব্যবহৃত হওয়ায়, একটি মাত্র সাবমেরিন থেকেই একসাথে একাধিক লক্ষ্যে আঘাত হানার সক্ষমতা ভারতের অর্জিত হবে।
সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র খুঁজে বের করা অত্যন্ত কঠিন। কারণ এটি জলে লুকিয়ে থাকে, আর গভীর সমুদ্রে অবস্থান করা S-5 শ্রেণির পরমাণু চালিত সাবমেরিন থেকে যেকোনো সময়, যেকোনো দিক থেকে K-6 উৎক্ষেপণ করা যেতে পারে।
নতুন S-5 পারমাণবিক সাবমেরিন আগের সাবমেরিনগুলোর তুলনায় আরও বেশি সময় জলের নিচে থাকতে পারে, এবং বেশি সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে সক্ষম। এর ফলে শত্রুর উপর আরও বেশি শক্তিশালী পারমাণবিক হামলা চালানো সম্ভব হবে।