নিউজ ডেস্ক: দীর্ঘ নয় দশক ধরে উত্তর কলকাতার মানুষের সাথী এই টালা ব্রিজ। ডানলপ, সোদপুর, দক্ষিণেশ্বর যেখান থেকেই শ্যামবাজার পাঁচ মাথা পেরিয়ে যেতে চান না কেন, টালা ব্রিজ পেরোতেই হবে। ২০১৯ সাল থেকে মেরামতির জন্য বন্ধই ছিল টালা ব্রিজ, বাস-প্রাইভেট গাড়ি সবই চলাচল করছিল পার্শ্ববর্তী লকগেটের রাস্তা দিয়ে। বিগত ২৪ সেপ্টেম্বর নতুন করে সাজানো টালা ব্রিজের উদ্বোধন হল। ১৯৩৬ সালে প্রথম চালু হয় এই টালা ব্রিজ, তবে অনেক পরে টালা ব্রিজের নতুন করে স্থায়ী কাঠামো তৈরি হয় ১৯৬৪ সালে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তখন প্রফুল্লচন্দ্র সেন। ব্রিজের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক লোককথা, অনেক ইতিহাস। অনেকেই জানেন, এই ব্রিজের পোশাকি নাম হেমন্ত সেতু। কিন্তু জানেন কী আসলে কে এই হেমন্ত? বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের নামেই কি এই সেতুর নাম? নাকি এই নামকরণের আড়ালে লুকিয়ে আছে অন্য কোনো ইতিহাস?
সরকারি নথির ইতিহাস বলছে, ১৯৭৩ সালের ৫ অক্টোবর টালা ব্রিজের নামকরণ হয় হেমন্ত সেতু। নামের মধ্যে এই হেমন্ত আসলে হেমন্তকুমার বসুকেই স্মরণ করায়। হেমন্তকুমার ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসুর সহকর্মী এবং সারা ভারত ফরোয়ার্ড ব্লকের চেয়ারম্যান। তখন সত্তর দশক। নকশাল আন্দোলনের জোয়ারে পুরো বাংলা উত্তাল। তারই সঙ্গে বাংলাদেশে চলছে মুক্তিযুদ্ধ। রক্তাক্ত বাংলার রাজপথ রোজ আলিঙ্গন করছে নতুন নতুন মৃতদেহ। এই পরিস্থিতির মধ্যেই নির্বাচনে ফরোয়ার্ড ব্লকের হয়ে শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়ে দাঁড়ান হেমন্তকুমার বসু। ছিয়াত্তর বছরের এক বৃদ্ধের উপর হয়তো ক্ষোভ ছিল কারো।
আরও পড়ুন: Flurys: হেরিটেজের তকমা পেল পার্ক স্ট্রিটের ফ্লুরিস, স্বীকৃতি দিল ‘ইনটাক’
১৯৭১ সাল, ২০ ফেব্রুয়ারি। টাউন স্কুলের সামনে একদল আততায়ী আক্রমণ করে হেমন্তকুমার বসুকে। ভোজালির ঘায়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তাঁর শরীর। রক্তে ভেসে যায় রাজপথ। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। টালা ব্রিজের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই রক্তাক্ত ইতিহাস। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তখন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। তাঁর উদ্যোগেই হেমন্তকুমার বসুর স্মৃতিতে তাঁর ৭৮তম জন্মদিনে টালা ব্রিজের নাম বদলে রাখা হয় ‘হেমন্ত সেতু’। কলকাতার দৈনন্দিন ব্যস্ততার আড়ালেই রয়ে গেছে এই ভুলে যাওয়া ইতিহাস।