নিউজ ডেস্ক: প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যাওয়ায় কী সমস্যা হয়েছিল তা আমরা কমবেশি সকলেই জানি! তৃণমূল শাসিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক-আমলাদের দুর্নীতির বাক্সটিও চিচিং ফাঁক হয়ে পড়ায় জাতীয় রাজনীতিতে আজ প্রবল অস্বস্তিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কয়লা-বালি-গোরু-টেট দুর্নীতির চতুর্মুখী হামলায় একদিকে যতটা অক্সিজেন পাচ্ছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি সহ সিপিএম-কংগ্রেস, অন্যদিকে দিনে দিনে ততটাই ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে তৃণমূল।
চার চারটি দুর্নীতি মামলার খাঁড়া তৃণমূলের গর্দানের উপর। আর তার মধ্যে এই গোরু পাচার মামলা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, এই মামলায় ইতিমধ্যে হাজতবাস করছেন তৃণমূলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও তার দেহরক্ষী সায়গল হুসেন। বিদেশের মাটিতে এখনও ফেরার প্রাক্তন যুব তৃণমূল নেতা বিনয় মিশ্র। চার্জশিটে নাম উঠেছে অনুব্রত-কন্যারও। সুতরাং গোরু পাচার মামলায় তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা জড়িয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে পার্টি-কমান্ডকে। সবচেয়ে বড় কথা, নিয়োগ মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে যাওয়ার পর তড়িঘড়ি দল তাঁকে ঝেড়ে ফেললেও অনুব্রতর জেল-যাত্রায় দেখা যায় একেবারে উল্টো ছবি। খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার প্রত্যক্ষ জনসভায় কিংবা প্রেস কনফারেন্সে সওয়াল করেন বীরভূমের সাংগঠনিক জেলা সভাপতির হয়ে, এমনকি তাকে সসম্মানে ফিরিয়ে আনার জন্য উৎসাহিত করেন পার্টি কর্মীদের! আর তৃণমূল-সুপ্রিমোর এই প্রকাশ্য কেষ্ট-প্রেমকে হাতিয়ার করেই দুর্নীতি মামলায় সরাসরি তাঁকেই তোপ দেগে চলেছে সিপিএম-বিজেপি। প্রশ্ন উঠছে, গুড়-বাতাসা-নকুলদানার দাওয়াই দিয়ে বীরভূমে ভোট করানো কেষ্ট সুপ্রিমো তথা দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলেই কি তার কেরিয়ার বাঁচাতে আদা-জল খেয়ে মাঠে নেমেছে গোটা তৃণমূল দল?
এদিকে একের পর এক দুর্নীতি মামলায় দল জড়িয়ে যাওয়ায় ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছে তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যেও। সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূলের বিভিন্ন গ্রুপ বা পেজে চোখ রাখলেই কমেন্ট বক্সে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বিদ্রোহের সুর। অন্যদিকে প্রকাশ্যে বিরোধিতা এবং দল ছাড়ার হিড়িকও রয়েছে ট্রেন্ডিংয়ে। ইতিমধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে দলের আভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে বারবার অস্বস্তিতে পড়তে দেখা গেছে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। অতএব সব মিলিয়ে ২৪-এর লোকসভার আগে সামান্য গোরু পাচার মামলায় অনুব্রতকে বাঁচাতে গিয়ে একদিকে যেমন বিরোধীদের অস্ত্রে শান দিলেন আর অন্যদিকে কি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়িয়ে একপ্রকার সেমসাইড গোল করে ফেললেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী? উত্তর দেবে আগামীর রাজনৈতিক পরিস্থিতি।