নিউজ ডেস্ক: সম্প্রতি কলকাতার সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে একটি বিশেষ আলোচনা সভায় যোগ দিয়েছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। আলোচনার বিষয়টি ভারতীয় জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়ে থাকলেও অনুষ্ঠানটির গুরুত্ব ছিল আন্তর্জাতিক স্তরে! কারণ মাননীয় বিদেশমন্ত্রী অনুষ্ঠানটির শেষে আয়োজিত প্রশ্নোত্তর পর্বে এমন কিছু বক্তব্য রাখেন, যার দিকে নিঃসন্দেহে নজর রেখেছে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে থাকা একাধিক দেশ।
প্রসঙ্গত, ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘এক নিশান, এক প্রধান, এক বিধান’ স্লোগানের কথা তিনি উল্লেখ করেন তাঁর বক্তব্যে, যে সময়ে গোটা দেশে চর্চা চলছে ইউনিফর্ম সিভিল কোড নিয়ে। আর গোটা দেশে অভিন্ন দেওয়ানী বিধি চালু করা যে বিজেপির ২৪ লোকসভার পাখির চোখ, তা আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না।
ভারতের বর্তমান বিদেশনীতি নিয়ে সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করলে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে সেগুলির উত্তরও করেন জয়শঙ্কর। সবচেয়ে অধিক প্রসঙ্গ আসে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমেরিকা সফর নিয়ে। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, রাশিয়া হোক কি আমেরিকা, এই দুই বৃহৎ শক্তির সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক কোনওভাবেই জাপান বা ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে নষ্ট করবে না। তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর ২০১৪ তে আমেরিকা সফর বা, এর আগে মনমোহন সিং বা রাজীব গান্ধীর আমেরিকা সফরের চেয়ে একেবারে ভিন্ন এবারের মার্কিন সফরটি। এ প্রসঙ্গে মোদীর এলন মাস্ক, টিম কুকের মতো বিশ্বের তাবড় তাবড় শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে চুক্তির প্রসঙ্গ তুলে আনেন বিদেশমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন বিখ্যাত মহাভারত-বিশ্লেষক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। তিনি আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক ঘনিষ্ঠতার কারণে রাশিয়ার প্রতি ভারতের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন করলে তার উত্তরে জয়শঙ্কর পরিষ্কারভাষায় বলেন,’আমাদের নীতি নিরপেক্ষ নয়, ভারতের হিতে নির্ধারিত হয়।’ আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার প্রসঙ্গে তিনি জানান, রাশিয়া ভারতের বহু পুরনো বন্ধু। তাই আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা কোনওভাবেই আমাদের রাশিয়ার প্রতি মজবুত সম্পর্ক বজায় রাখায় বাধা তৈরি করে না।
বিদেশনীতির প্রসঙ্গে উঠে আসে চীনের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক অবনতির প্রসঙ্গও। এ বিষয়ে সরাসরি চীনের সমালোচনা করে তিনি জানান, ১৯৯৩ ও ৯৬ সালে করা দুটি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে চীন, যা কূটনৈতিক সম্পর্ককে সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাধা দিচ্ছে। সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন,’চীনের সঙ্গে সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধটি অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় তা মেটাতে পারস্পরিক সাহচর্য আর সম্মান প্রয়োজন। যদিও সীমান্ত বিষয়ক বেশকিছু সমস্যার নিরসন ইতিমধ্যে করা সম্ভব হয়েছে, তবে এর জন্যও প্রয়োজন দুই হাতে তালি বাজানো।’ অনুষ্ঠানের শেষে তিনি স্পষ্টভাবে জানান, কেন্দ্র সরকার আগামী ২৫ বছরের ফুটপ্রিন্ট তৈরি করে কাজ করছে, যাতে ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত উন্নত এবং শক্তিশালী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।