নিউজ ডেস্ক: কথিত আছে, স্বামী বিবেকানন্দ জানতেন তাঁর মহাপ্রয়াণের বিষয়ে। ১৯০২ সালে আজকের দিনে মাত্র ৩৯ বছর ৫ মাস বয়সে দেহ রাখেন তিনি। কিন্তু বহু বছর পূর্বে তিনি জানিয়েছিলেন যে তাঁর প্রয়াণ হবে ৪০ বছর বয়সের আগেই। মহান সন্ন্যাসীর প্রয়াণ দিবসের শেষ দিনটি ছিল কেমন? আসুন, আজ জেনে নিই সেই অজানা কথা।
১৯০২ সালের আজকের দিনটি ছিল শুক্রবার। অন্যান্য দিনগুলির মতোই শুরু হয় দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ধ্যানে চলে যান স্বামীজী। এরপর গলাও ধরেন নিত্যদিনের মতো। গানে ছোটবেলা থেকেই অদ্বিতীয় ছিলেন তিনি। এরপর ছাত্রদের পড়ানো এবং আশ্রমিকদের সঙ্গে বেলুড় মঠের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে হয় আলোচনাও। সেদিন বেলুড়ের ঘাটে জেলেরা অনেক ইলিশ মাছ আনে। ভোজনরসিক ছিলেন বিবেকানন্দ। মহা উৎসাহ নিয়ে ইলিশ কিনে আনান তিনি। দুপুরে সকলের সঙ্গে বসে মজা করে ইলিশ মাছ- ভাতও খান পরম তৃপ্তির সঙ্গে। খাওয়া- দাওয়া সেরে সোজা চলে যান লাইব্রেরী, আর সেখান থেকেই আশ্রমিক প্রেমানন্দের সঙ্গে বেলুড় বাজার।
এরপর মঠের সন্ধ্যারতিতে যোগদান করার পর সেখান থেকে চলে যান স্বামীজী নিজের ঘরে ধ্যান করতে। খানিকক্ষণ পর তাঁর শিষ্যদের ডেকে ঘরের জানলা খুলে দিতে বলেন। তখন নাকি কপালে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম জমছিল তাঁর। শিষ্যরা কেউ পাখার বাতাস করতে থাকেন, কেউ বা টিপে দেন তাঁর পা। কিন্তু ঘামতে থাকলেন তিনি।
রাত ৯ টা ১০ মিনিট। আচমকা তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে এল অস্ফুট একটি শব্দ, এরপরই মাথা এলিয়ে পড়ল বালিশে। ঠোঁটে লেগে ছিল স্মিত এক তৃপ্তির হাসি। মহাসমাধি পেয়েছেন মনে করে তাঁর সহ-আশ্রমিক এবং শিষ্যেরা করতে থাকেন শ্রী রামকৃষ্ণের গান। কিন্তু অনেকটা সময় পরও সাড়া না পেয়ে ডেকে পাঠানো হল চিকিৎসকদের। তাঁরাই নিশ্চিত করলেন প্রয়াণ সংবাদ। বিবেকানন্দ গবেষক শঙ্করের মতে, প্রায় ৩১ টি ব্যাধি ছিল স্বামীজীর দেহে। আর সেইসব কঠিন ব্যাধিকে সঙ্গী করেই দিনের পর দিন পরিশ্রম করে গেছেন তিনি। তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর কথা লেখা হয়। তবে আশ্রমিকরা জানান, মহাসমাধি দশাতেই ব্রহ্মতালু ফেটে প্রয়াত হন স্বামীজী।
গৈরিক-সন্ন্যাসীর অকাল- প্রয়াণে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন ভগিনী নিবেদিতা। প্রয়াণের ২ দিন আগে মঠে নিবেদিতাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে পঞ্চব্যঞ্জন-সহযোহে তাঁকে খাওয়ান স্বামীজী। খাওয়ানোর পর নিজের হাতে তিনি ধুয়ে দেন নিবেদিতার হাত-পা। গামছা দিয়ে মুছিয়েও দেন স্বহস্তে। নিবেদিতা অস্বস্তিতে এর প্রতিবাদ করলে স্বামীজী তাঁকে বলেন, যীশুখ্রিস্টও তাঁর শিষ্যদেরকে হাত-পা ধুয়ে দিয়েছিলেন। চমকে উঠে নিবেদিতা বলেছিলেন, সে তো মৃত্যুর আগে। স্মিত হেসে মাত্র দুটি শব্দ বলেন বিবেকানন্দ,’Silly Girl‘!
শোনা যায়, ইচ্ছামৃত্যুর বর পেয়েছিলেন বিবেকানন্দ। কাজ সম্পূর্ণ হলে নিজেই চলে যাবে নরেন, এমন মন্তব্য করেছিলেন নাকি স্বয়ং রামকৃষ্ণদেব। তাহলে কি বেলুড়ের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও পরিকল্পনার বীজ শিষ্যদের মধ্যে পুঁতে দিয়ে ধরাধামে কর্তব্য সমাপ্ত করে মহাপ্রস্থানের পথে পাড়ি দিয়েছিলেন বিশ্ববিবেক?