নিউজ ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের কোটি কোটি হিন্দু বাঙালির পরিত্রাতা ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের শুভ আবির্ভাব দিবসে জেনে নেওয়া যাক তাঁর জীবনের অধ্যায়ের একটি বিশেষ দিক। একশ্রেণীর ইতিহাসকার, বিশেষ করে বামপন্থী ইতিহাসকাররা শ্যামাপ্রসাদকে সাম্প্রদায়িক তকমা দিতে আজও পিছপা হন না। তাঁরা শ্যামাপ্রসাদকে মুসলিম-বিদ্বেষী হিসেবে তুলে ধরার জন্য অর্ধসত্য বা বিকৃত তথ্য ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু আমরা শ্যমাপ্রসাদ কিংবা তৎকালীন পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করলে সহজেই জানতে পারব, শ্যামাপ্রসাদকে কোনওভাবেই মুসলিম-বিদ্বেষী আখ্যা দেওয়া যায় না।
শ্যামাপ্রসাদ তৎকালীন অবিভক্ত বাংলায় ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টিকে সমর্থন দিয়ে একসঙ্গে গঠন করেন শ্যামা-হক মন্ত্রীসভা। এমনকি ফজলুল হকের প্রধানমন্ত্রীত্বে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। এমনকি একাধিক বক্তব্যে শ্যামাপ্রসাদের অকুণ্ঠ প্রশংসা করতেও দেখা যেত ফজলুল হককে।
কাজী নজরুল ইসলামের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন একমাত্র শ্যামাপ্রসাদ। শ্যামা-হক কোয়ালিশন সরকারের সময় প্রচণ্ড অসুস্থ ছিলেন কবি। সেই সময় প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিল তাঁর বাকশক্তি। আর্থিক অনটনে ভুগছিলেন নজরুল। কাতর কবি অসহায় হয়ে চিঠি লেখেন ফজলুল হককে। কিন্তু ব্যস্ততার জন্য ভাবার সময় হয় নি হক সাহেবের। সেই সময় সমস্ত ব্যস্ততা সামলে নজরুলের পাশে এসে দাঁড়ান তৎকালীন অভিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ।
নজরুলের শ্যামবাজারের ভাঙাচোরা বাড়িতে গিয়ে দেখে আসেন কবির অবস্থা সচক্ষে। কথা বলতে অপারগ নজরুল কোনওরকমে নিজের অভাবের কথা কাগজে লিখে বোঝান শ্যামাপ্রসাদকে। শ্যামাপ্রসাদ সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে আর্থিক সাহায্য করতে থাকেন কবিকে। এমনকি স্ত্রী প্রমীলা সহ কবিকে মধুপুরে চেঞ্জেও পাঠান নিজের উদ্যোগেই। নিজের পৈত্রিক বাড়িতে করে দেন তাঁদের থাকার ব্যবস্থা। এরপর মধুপুর থেকে নজরুল শ্যামাপ্রসাদের উদ্দেশ্যে লেখেন কৃতজ্ঞতায় ভরা একটি সুদীর্ঘ চিঠি, যেখানে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কবি লেখেন,”এই coalition ministry-র একমাত্র আপনাকে আমি অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করি ও ভালবাসি। আর কাউকে নয়। আমি জানি আমরাই এই ভারতবর্ষকে পূর্ণ স্বাধীন করব। সেদিন বাঙালির আপনাকে ও সুভাষবাবুকেই সকলের আগে মনে পড়বে। আপনারাই হবেন এদেশের পতাকার নায়ক।”
এরপর নজরুলের জন্য একটি নিরাময় ফান্ডও গড়ে তুলেছিলেন তিনি বিধান রায়ের সাহায্যে। চিকিৎসার জন্য রাঁচি ও তারপর লন্ডনেও পাঠানো হয়েছিল কবিকে। ততদিন প্রয়াত হয়েছেন শ্যামাপ্রসাদ, আর চিরতরে স্মৃতিশক্তি হারিয়েছেন কবিও। তাই শেষে আর সাক্ষাৎ হয় নি তাঁদের। বড় বেদনার সেই অভিজ্ঞতা। এজেন্ডাপ্রেমীরা শ্যামাপ্রসাদের সঠিক মূল্যায়ন না করুন, কিন্তু একটিমাত্র চিঠিতে তাঁর প্রকৃত মূল্যায়ন প্রকাশ করেছিলেন কাজী নজরুল।