নিউজ ডেস্ক: স্কুলে পড়লেই বাড়ির মেয়েরা ফ্যাশানি এবং বাচাল হয়ে উঠবে, এমনটাই ধারণা ছিল আশাপূর্ণার ঠাকুমার। তাই নিজের বাড়িতে ছেলেরা পড়াশোনা করলেও মেয়ে হয়ে জন্মানোর অপরাধে পড়াশোনা করার অধিকার ছিল না আশাপূর্ণার। উত্তর কলকাতায় মামারবাড়িতে এভাবেই কেটেছিল তাঁর শৈশব। রক্ষণশীল পরিবারে বড় হওয়ার কারণে ঠাকুমার নির্দেশের বাইরে অন্য কথা বলার সাহস সেই পরিবারে ছেলেদেরও ছিল না। অগত্যা বিয়ে হওয়ার আগে পর্যন্ত বই পড়ার স্বাদ থেকে একেবারেই বঞ্চিত ছিলেন আশাপূর্ণা। স্কুলে যাওয়ার সুযোগও হয়নি তার। কিন্তু তা বলে পড়াশোনা আটকে থাকেনি, অক্ষরজ্ঞানও থেমে থাকেনি আশাপূর্ণার। বাড়িতে ভাইদের পড়ার সময় বাইরে থেকে সেই পড়া শুনে শুনেই অনেকটা রপ্ত করে ফেলেছিলেন তিনি। আর ছিল তার মায়ের নিজের সংগ্রহের বই। সেসব গোপনে খুব আড়ালে ঘেঁটে দেখতে দেখতেই বাইরের জগৎ সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়, সাহিত্যের প্রতি একটা আকর্ষণ জন্মায় কিশোরী আশাপূর্ণার।
আত্মজীবনীতে তিনি লিখছেন, ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথের লেখার অনুরাগী ছিলেন তিনি। একবার বোনের সঙ্গে মিলে রবীন্দ্রনাথকে আস্ত একখানা চিঠি পাঠিয়েছিলেন আশাপূর্ণা। রবীন্দ্রনাথের প্রতি ভালোবাসার আকর ছিল সেই চিঠিখানি। উত্তরও এসেছিল যথাসময়ে। আশাপূর্ণার বোন সম্পূর্ণা দেবী পরে একটি চিঠিতে জানাচ্ছেন রবীন্দ্রনাথকে পাঠানো সেই চিঠিটি ছিল তাদের ‘ঐতিহাসিক দুঃসাহস’। উত্তরে একটি আশীর্বাদী চিঠি পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। চিঠির খামের উপরে লেখা ছিল তাদের দুই বোনের নাম। আর নিচে কবিগুরুর স্বাক্ষর। নিজের বাড়িতে সেভাবে পড়াশোনার সুযোগ না থাকলেও বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে এসে তার জ্ঞানার্জনের আগ্রহ যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেল।
শ্বশুরবাড়িতে এসে নির্জন দুপুরগুলো কাটত তাঁর পঞ্জিকা পড়েই। বইপড়ার প্রবল আগ্রহ যে তাঁর। আত্মজীবনীতে স্মৃতিচারণায় তিনি লিখছেন, ‘মেয়েদের পক্ষে তো শ্বশুরবাড়ি জায়গাটা কুসুমকোমল নয়, স্রেফ লৌহ যবনিকার অন্তরালে…’ এভাবেই একদিন একহাতে খুন্তির সঙ্গে সঙ্গে অন্যহাতে উঠে এসেছিল কলম। লিখতে লিখতেই ভোর হয়ে যেত তার। কর্পোরেশনের জল পড়ার শব্দে জ্ঞান হত আশাপূর্ণার, তারপর আধঘন্টা ঘুমিয়ে নিয়ে ফের সংসারের কাজে ডুবে যেতেন। এভাবেই সংসার আর সাহিত্য এক হাতেই সামলে গিয়েছেন আজীবন। এ কথা আজ কজনই বা মনে রেখেছেন!