নিউজ ডেস্ক: Liberty- Equality-Fraternity অর্থাৎ স্বাধীনতা-সাম্য-মৈত্রী, এই শব্দত্রয় খুব পরিচিত ভারতীয়দের কাছে। কারণ, এই শব্দ তিনটি থাকে ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায়। মজার কথা হলো, এই শব্দ তিনটি ভারতীয় সংবিধানে আমদানি হয়েছে ফ্রান্সের সংবিধানের অনুপ্রেরণায়। আজ ফ্রান্স জুড়ে উদযাপিত হচ্ছে ‘বাস্তিল দিবস’, যার গুরুত্ব ফরাসিদের কাছে জাতীয় দিবসের মতোই। কিন্তু আজকের দিনটি শুধুমাত্র ফ্রান্স নয়, গুরুত্বপূর্ণ ভারতের কাছেও। কারণ, ফ্রান্সের ইতিহাসে বাস্তিল দুর্গের পতন না হলে, ভারত হয়ত পেত না স্বাধীনতা-সাম্য-মৈত্রীর সাংবিধানিক মন্ত্রকে।
ইউরোপের ইতিহাসে প্রাচীনকাল থেকেই বিজ্ঞান-সংস্কৃতি-শিল্পে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ফ্রান্স। কিন্তু অষ্টাদশ শতকে একাধিক কারণে বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে ফরাসি জনগণের জীবনযাত্রা। ষোড়শ লুইসের অযোগ্য শাসন আর দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটেনের সঙ্গে ফ্রান্সের চলে আসা যুদ্ধের কারণে প্রবলভাবে ধুঁকছিল ফরাসি অর্থনীতি। এর মধ্যে যুদ্ধ আর সরকারি তহবিলের খরচ চালাতে ফ্রান্সের সাধারণ মানুষের উপর আরও ট্যাক্সের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয় রাজার আদেশে। প্রবলতর হয়ে ওঠে মুদ্রাস্ফীতি আর খাদ্যাভাব।
এমতাবস্থায় নজরে ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই। জনগণ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে দেখাতে ঘিরে ফেলে বাস্তিল দুর্গ। এই দুর্গে বন্দী করা হত রাজদ্রোহীদের, অর্থাৎ ফ্রান্সের প্রতিবাদী বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষকে। ক্ষুব্ধ জনতার হাতে সেদিন ধ্বংস হয়ে যায় স্বৈরাচারের প্রতীক বাস্তিল। এই দিনটিকেই ফরাসি বিপ্লবের তকমা দেওয়া হয়। এরপর ফ্রান্সের সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিত্বে রাজতন্ত্রের ডানা ছেঁটে গণতান্ত্রিক উপায়ে তৈরি হয় ফ্রান্সের নিজস্ব সংবিধান। যদিও এই গণতন্ত্রের শাসন টিকে থাকেনি ১০ বছরের বেশি, রাজনৈতিক দলগুলির ব্যক্তিগত স্বার্থের সংঘাতে ফের শুরু হয়েছিল আভ্যন্তরীণ সমস্যা, এবং এরপরেই ফ্রান্সের রাজনীতিতে উত্তরণ হয় নেপোলিয়ান বোনাপার্টের।
বর্তমানে ভারত-ফ্রান্স মজবুত কূটনীতির অন্যতম বিন্দু অবশ্যই ফরাসি বিপ্লব। একদিন ফরাসি সংবিধান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছিল ভারত। আজ ফ্রান্সের জাতীয় দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে। এভাবেই ‘বাস্তিল দিবস’ যোগসূত্র বুনে চলেছে পৃথিবীর অন্যতম দুই মহান গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে।