নিউজ ডেস্ক:
কলকাতার সব থেকে পুরনো বইয়ের দোকান দাশগুপ্ত অ্যান্ড কোং এক নতুন উদ্যোগ নিতে চলেছে।
পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখে এই দোকানের চত্বরের মধ্যেই একটা অংশে চালু করা হচ্ছে মুক্ত
পাঠাগার। বিনামূল্যে এখানে বই পড়তে পারবেন পড়ুয়ারা। যেসব পড়ুয়াদের বই কেনার সামর্থ্য
নেই, তাদের কথা ভেবেই মূলত এই উদ্যোগ নিতে চলেছে দাশগুপ্ত অ্যান্ড কোং।
কলকাতার বুকে
এই দোকানটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাস। এখানে ১৮৯০ থেকে ১৯০০ সালের বহু পুরনো বই,
ঘড়ি ইত্যাদি দুষ্প্রাপ্য উপাদান রয়েছে, ফলে এর একটা আর্কাইভাল গুরুত্বও রয়েছে। যদিও
২০০৪ সালে একটি অগ্নিকাণ্ডে সেসবের অধিকাংশই পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। জানা গিয়েছে বইয়ের
দোকানের দোতলায় সেই পাঠাগার তৈরি হতে চলেছে। দোকানের কর্ণধার ৭১ বছরের অরিন্দম দাশগুপ্ত
বলেন যে, আগামী দুর্গাপুজোর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার বই নিয়ে চালু হতে চলেছে এই মুক্ত
পাঠাগার। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এখানে দুপুর থেকে বিকেল ৬টার মধ্যে এসে বই পড়তে পারবেন
পড়ুয়ারা। বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষারই বইপত্র থাকবে এখানে, সব বয়সের মানুষেরাই এখানে
এসে বই নেড়েঘেঁটে দেখতে পারবেন। কর্ণধার আরো জানান যে এই পাঠাগারের মাধ্যমে বাংলা মাধ্যম
এবং ইংরেজি মাধ্যম উভয় ব্যবস্থার ছাত্র-ছাত্রীরাই উপকৃত হবেন।
আরও পড়ুন: Panchayat Election in Bengal: সরকার ও নির্বাচন কমিশন– ভোট ও ছাপ্পা! আসলে জনগণকে ধাপ্পা
১৮৮৬ সালে
কলেজস্ট্রিটে তৈরি হয়েছিল এই বইয়ের দোকানটি যা বর্তমানে হেরিটেজ বুকশপ-এর আখ্যা পেয়েছে।
এই বছর ১ জুলাই কলকাতা কর্পোরেশন এই দোকানটিকে গ্রেড ২ এ হেরিটেজের আখ্যায় ভূষিত করেছে।
জানা গিয়েছে ২৪ জুলাই দোকানে লাগানো হবে নীল সিলমোহর। কিন্তু কেন
বইয়ের দোকানের মধ্যেই পাঠাগার চালু করতে চাইলেন কর্ণধার অরিন্দম দাশগুপ্ত? তাঁর কথায়
জানা যায়, এখন যেভাবে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে তাতে লকডাউনের সময় তিনি দেখেছেন যে বহু
মুসলিম-প্রান্তিক ছেলে-মেয়ে তাদের দোকানে এসে বই কিনত, দেখেই বোঝা যেত তাদের সামর্থ্য
ছিল অনেকটাই কম। আর তাই সেই প্রান্তিক ছাত্র-ছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে এই পাঠাগার চালু
করার পরিকল্পনা করেছেন অরিন্দম দাশগুপ্ত।
১৮৮৬-তে অরিন্দম
পূর্বপুরুষ গিরিশচন্দ্র দাশগুপ্ত যশোরের কালিগ্রাম থেকে এদেশে এসে এই দোকানটি প্রথম
চালু করেন। সেই থেকেই বহু ইতিহাসের সাক্ষী কলেজস্ট্রিটের বুকের এই দাশগুপ্ত অ্যান্ড
কোং। আজও দিনে প্রায় ৪০০ মানুষ বই কিনতে হাজির হন ইতিহাস-প্রাচীন এই দোকানে। দেওয়ালে
দেওয়ালে বইয়ের ধুলোর মধ্যে আজও যেন ইতিহাস কথা বলে।