নিউজ ডেস্ক: সম্প্রতি স্বামী বিবেকানন্দ এবং রামকৃষ্ণ দেবের করা উক্তি নিয়ে সমালোচনা করে শিরোনামে চলে এসেছেন ইস্কনের সন্ন্যাসী অমোঘ লীলা দাস। উল্লেখ্য, সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ পরিচিত ইনি তাঁর প্রবচনের মাধ্যমে। কিন্তু সম্প্রতি স্বামী বিবেনানন্দকে নিয়ে করা তাঁর ব্যঙ্গোক্তির জন্য গোটা দেশের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। যদিও শেষ পর্যন্ত নিজের বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন এই সাধু, আর ইস্কন থেকেও তাঁকে ইতিমধ্যেই করা হয়েছে সাময়িক ব্যান। এ তো গেল খবর! কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দের মতের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা কি আদৌ যুক্তিযুক্ত? জেনে নেওয়া যাক, কতটা সঠিক বিশ্লেষণ করেছেন তিনি স্বামীজীর উক্তির।
প্রথমত, ‘গীতা পাঠের চেয়ে ফুটবল খেলা ভালো’, বিবেকানন্দের এই উক্তির সমালোচনা করে তিনি বলতে চেয়েছেন, স্বামীজী গীতা পাঠের প্রয়োজন নেই বলেছেন! কিন্তু আসল কথা হলো, উক্তিটি অসম্পূর্ণ। নাস্তিক্যবাদী এবং কমিউনিস্টরা স্বামীজীর অজস্র উক্তির ভুল ব্যাখ্যা করে তা প্রচার করার জন্য এরকম ভ্রান্ত ধারনা পোষণ করা সহজ হয়ে উঠেছে। কিন্তু জেনে নেওয়া যাক স্বামীজীর এ প্রসঙ্গে সম্পূর্ণ উক্তি–‘ হে আমার যুবক বন্ধুগণ, তোমরা সবল হও—তোমাদের নিকট ইহাই আমার বক্তব্য। গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমার স্বর্গের আরও নিকটবর্তী হইবে। আমাকে অতি সাহসপূর্বক এই কথাগুলি বলিতে হইতেছে; কিন্তু না বলিলেই নয়। আমি তোমাদিগকে ভালবাসি। আমি জানি, পায়ে কোথায় কাঁটা বিঁধিতেছে। আমার কিছু অভিজ্ঞতা আছে। তোমাদের বলি, তোমাদের শরীর একটু শক্ত হইলে তোমরা গীতা আরও ভাল বুঝিবে।’ (স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, পঞ্চম খণ্ড)
উক্তিতে পরিষ্কার, স্বামীজী গীতা পাঠ করতে নিষেধ করেন নি, কিন্তু পরাধীন ভারতবর্ষে প্রাথমিক প্রয়োজন ছিল শারীরিক শক্তি। আর সুস্থ শরীর ছাড়া মানসিক শান্তি অসম্ভব। আর মানসিক শান্তি ছাড়া গীতার গূঢ় শ্লোক অনুধাবন করাও অসম্ভব। যে কারণে, মহাভারত পর্বে শত শত মহারথীর মধ্যেও শুধুমাত্র অর্জুনকে গীতা ব্যাখ্যা করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। কারণ তিনি বুঝেছিলেন, অর্জুনই শারীরিক দৃঢ়তা এবং মানসিক স্থিরতা, উভয়দিক থেকেই শ্রেষ্ঠ। উল্লেখ্য, স্বামীজী তাঁর উক্তিতে সহজভাবেই বলেছেন, ফুটবল খেলে শরীর শক্ত হওয়ার পর সহজে বোঝা সম্ভব হবে গীতা।
অন্যদিকে, ইস্কনের এই সন্ন্যাসী বিঁধেছেন ‘যত মত তত পথ’ উক্তি নিয়েও। যদিও উক্তিটি আসলে রামকৃষ্ণ দেবের, কিন্তু এরও প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করতে পারেননি অমোঘ লীলা। আসলে, এই উক্তির মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের মধ্যে উপস্থিত সকল মতাদর্শ এবং দর্শনকে মেনে চলেই যে ভগবানকে পাওয়া সম্ভব, তাই বুঝিয়েছিলেন পরমহংসদেব। শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব, ব্রাহ্ম, আকার-নিরাকার, বুদ্ধ কিংবা জৈন বা শিখ মতাদর্শ; যে যাই মেনে চলুন না কেন, সকল পথের লক্ষ্যই যে ঈশ্বর-প্রাপ্তি, এ কথাই এতটা সোজাভাবে বোঝানো হয়েছিল।