নিউজ ডেস্ক: নিজের বুথেই হার সাংসদ-বিধায়কদের। জঙ্গলমহল পুরুলিয়ায় বিজেপির সাংসদ ও চার বিধায়কের বুথেই হেরে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। সেই সঙ্গে ওই এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের আসন ছাড়া সার্বিকভাবে গ্রাম পঞ্চায়েত, সমিতিও হেরে গিয়েছে বিজেপি। কিন্তু কর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে একে ব্যর্থতা বলতে নারাজ পুরুলিয়া জেলা বিজেপি। বরং গণনায় কারচুপি হয়েছে
এই বিষয়টিকে চাউর করে লোকসভায় অঙ্ক সাজানো শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির ওই সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর প্রতিক্রিয়া নিতে তাঁকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। বুথে হেরে যাওয়া চার বিধায়ক জয়পুরের নরহরি মাহাতো, বলরামপুরের বানেশ্বর মাহাতো, কাশিপুরের কমলাকান্ত হাঁসদা, রঘুনাথপুরের বিবেকানন্দ বাউরি। বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা বলেন, ” ওই বুথগুলিতে ইচ্ছে করে হারানো হয়েছে। তাছাড়া জেলা জুড়ে গণনায় কারচুপি হওয়ায় এটাকে আমরা ব্যর্থতা বলতে নারাজ।” পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা বিদায়ী সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অহমিকা এই পতনের কারন। বিজেপি সাংসদ-বিধায়করা আম জনতার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন।”
পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ, রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। ঝালদা এক নম্বর ব্লকের পুস্তি গ্রাম পঞ্চায়েতের কুদলং এলাকায় পুস্তি হাইস্কুলের বুথে ভোট দেন। গ্রাম পঞ্চায়েতের ফলাফলের নিরিখে ওই বুথে তৃণমূল পেয়েছে ৩৭৪ টি ভোট। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৩৬৬ টি। ফলে ৮ ভোটে ওই বুথে হেরে গিয়েছে বিজেপি। সাংসদের এই বুথ এলাকা ঝালদা এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির ২৬ নম্বর আসনের মধ্যে। সেখানেও বিজেপি ৪৬৭ ভোটে পিছিয়ে রয়েছে। ওই আসনে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ১৩১৮, বিজেপির ৮৫১। সাংসদের এই বুথ এলাকা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের ১৫ নম্বর আসনের মধ্যে। এখানে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ১৩,৭৪৩। বিজেপি এখানে তিন নম্বরে চলে গিয়েছে। তাদের প্রাপ্ত ভোট ৯,৯৭৯। ফলে গেরুয়া শিবির হেরে গিয়েছে ৩,৭৬৪ টি ভোটে।
আরও পড়ুন: Panchayat Election in Bengal: সরকার ও নির্বাচন কমিশন– ভোট ও ছাপ্পা! আসলে জনগণকে ধাপ্পা
জয়পুরের বিধায়ক নরহরি মাহাতোর বুথ জয়পুর ব্লকের বড়গ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের সেলানি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে গ্রাম পঞ্চায়েতের ফলাফলে বিজেপি হেরে গিয়েছে ৯৭ টি ভোটে। ওই বুথে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ২৮৬। বিজেপি ভোট পেয়েছে ১৮৯ টি। ওই বুথ ১৪ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির আসনের মধ্যে পড়ে। ওই আসনে তৃণমূল কংগ্রেস ভোট পেয়েছে ১ হাজার ২৮৮ টি। বিজেপি এখানে তিন নম্বরে গিয়ে তাদের প্রাপ্ত ভোট ৮০২। ফলে ওই আসনে বিজেপি হেরেছে ৪৮৬টি ভোটে। বিজেপির বিধায়ক নরহরি মাহাতোর এই বুথ জেলা পরিষদের ১৯ নম্বর আসনে রয়েছে। এই আসনের তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ১৪ হাজার ৯৬। গেরুয়া শিবির এখানে ভোট পেয়েছে ১০ হাজার ৭৯। ফলে এই আসনে বিজেপি হেরেছে ৪,০১৭ টি ভোটে। জেলা পরিষদের নিরিখে এই বুথে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ২৬৩। বিজেপির ভোট ১৯০। ফলে এক্ষেত্রেও বিজেপি ৭৩ ভোটে পিছিয়ে।
বলরামপুরের বিজেপি বিধায়ক বানেশ্বর মাহাতো। এবার তাঁর স্ত্রী ভারতী মাহাতো পুরুলিয়া জেলা পরিষদের ১৩ নম্বর আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। এই বিজেপি বিধায়কও বলরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তাঁর সাপুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে গ্রাম পঞ্চায়েতের ফলের নিরিখে ৩৭ ভোটে হেরে গিয়েছেন । এখানে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ৩৪০। বিজেপির ৩০৩। এই বুথ বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির ১৩ নম্বর আসনের মধ্যে রয়েছে। এখানেও বিজেপি ৬৮৪ ভোটে পিছিয়ে। এই আসনে তৃণমূল ভোট পেয়েছে ২,২৫৭ টি। বিজেপির ভোট ১,৫৭৩ টি। বিজেপি বিধায়কের স্ত্রী ভারতী মাহাতো জেলা পরিষদের যে ১৩ নম্বর আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন সেই আসনের মধ্যেই পড়ে বিধায়কের সাপুয়া বুথ। এই জেলা পরিষদ আসনে বিজেপি প্রার্থী হেরে গিয়েছেন ৬,১১২ ভোটে। এখানে তৃণমূল ভোট পেয়েছে ২২ হাজার ৩৯৬ টি। বিজেপির ভোট ১৬,২৮৪ টি। কাশীপুরের বিজেপি বিধায়ক কমলাকান্ত হাঁসদাও তাঁর নিজের বুথে গ্রাম পঞ্চায়েতের ফলের নিরিখে হেরে গিয়েছেন। গ্রাম পঞ্চায়েতের ফলাফলে সুভাষনগরের বুথে বিজেপি হেরে গিয়েছে ২০৪ টি ভোটে। এখানে গেরুয়া শিবির একেবারে তিন নম্বরে চলে গিয়েছে। এই বুথে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ৩১৪ টি। বিজেপির ১১০। এই বুথ কাশিপুরের দু’নম্বর সমিতির মধ্যে পড়ে। এখানেও বিজেপি পিছিয়ে রয়েছে ২৯৩ টি ভোটে। এখানে তৃণমূল ভোট পেয়েছে ১,৩৫১ টি। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ১,০৫৮টি। এই বুথ রয়েছে ৩২ নম্বর জেলা পরিষদ আসনে।
আরও পড়ুন: Re-poll in Bengal: বড় খবর! ফের পঞ্চায়েত ভোট বাংলায়! খুব শীঘ্রই হবে নির্বাচনের দিন ঘোষণা
এই আসনে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ১৭,৫৬৫। বিজেপির ভোট ৮,৫৮৩। ফলে বিজেপি হেরে গিয়েছে ৮,৯৮২টি ভোটে। রঘুনাথপুরের বিজেপি বিধায়ক বিবেকানন্দ বাউরিও তাঁর উপর খাজুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে হেরে গিয়েছেন পঞ্চায়েতের ফলের নিরিখে।এখানে গ্রাম পঞ্চায়েতের নিরিখে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ৩৩৯। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ২২৭। অর্থাৎ এই বুথে বিজেপির হার ১১২ টি ভোটে। এই বুথ রঘুনাথপুর এক নম্বর ব্লকের ৫ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি আসনের মধ্যে। এখানে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ১,৪৬৭ টি। বিজেপির ভোট ৮২৫। ৬৪২টি ভোটে বিজেপি পিছিয়ে। এই বুথে জেলা পরিষদের নিরিখে তৃণমূল পেয়েছে ৩৪৬ টি। বিজেপি ২১৫ টি ভোট। এই স্তরেও বিজেপি ১৩১ ভোটে পিছিয়ে।এই বুথ জেলা পরিষদের ৪৪ নম্বর আসনের মধ্যে পড়ে। এখানে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ১৫ হাজার ৫৮২। বিজেপির ১১,১৩৩। এখানেও বিজেপি ৪,৪৪৯ ভোটে পিছিয়ে।