নিউজ ডেস্ক: রাস্তার ধারে কিংবা বাড়ির আনাচে কানাচে, প্রায় সব জায়গাতেই এই গাছটি দেখতে পাওয়া যায়। আপাত দৃষ্টিতে দেখতে নিরীহ এই গাছটির সম্পূর্ণটাই বিষাক্ত ও প্রানীজগতের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই এই গাছটির সম্বন্ধে জানেন না। ফলে এই গাছটির জন্যই রোগে ভোগেন। হয়তো আপনার অ্যালার্জির সমস্যা আছে কিন্তু তা কমার বদলে বেড়েই চলেছে। হতেই পারে আপনার বাড়ির বাগানেই লুকিয়ে রয়েছে সেই বিষ। আপনি এই গাছটির সংস্পর্শে এসেছেন কখনো। আপনার বাড়ির বাগানে এই গাছের কারণেই আপনার অ্যালার্জি সারছে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক কি সেই গাছ এবং পরিবেশে কতটা ক্ষতি করতে পারে।
সূর্যমুখীর এক উপজাতি প্রজাতির উদ্ভিদ হল পার্থেনিয়াম। দেখতে অনেকটা গাজর গাছের মত। ঝাঁকড়া গুল্ম বা ঝোপের মতো দেখতে হয় গাছটিকে আর পাতাগুলি চন্দ্রমল্লিকা গাছের মত। ছোট ছোট সাদা ফুল যখন ফোটে দেখতে বেশ সুন্দর লাগে। তবে সব থেকে বেশি ক্ষতি করে এই ফুল। এই পার্থেনিয়াম গাছের আদিবাসস্থান মেক্সিকো কিন্তু বর্তমানে সারা বিশ্বেই এই গাছ ছড়িয়ে পড়েছে। এক বর্ষজিবি গাছটি এর সম্পূর্ণ জীবনকালে চার থেকে পঁচিশ হাজার মত বীজের জন্ম দিতে পারে। আর এই বীজ এতই ছোট যে হাওয়ায় উড়ে, গাড়ির চাকায় বা জুতোর তলায় লেগেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। যে জায়গাতেই এর বীজ পড়ে সেখানে বিপদজনক ভাবে বংশবিস্তার ঘটায়।
পার্থেনিয়াম গাছটিতে পার্থেনিন নামক এক টক্সিন বা বিষ থাকে যা মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীদের জন্য বিপদজনক। পার্থেনিয়াম কোন চাষের জমিতে বেড়ে উঠলে সেখানে মাটির উর্বরতা কমিয়ে দেয়। মাটিতে নাইট্রোজেনের ঘাটতি দেখা যায়। এছাড়াও মানুষের হাতে পায়ে লাগলে হাত-পা চুলকায়, জ্বালা করে, লাল হয়ে যায় এবং যাদের খুব সেনসিটিভ স্কিন বা এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের স্কিন ক্যান্সারও পর্যন্ত হতে পারে। গবাদি পশু এই গাছ খেয়ে ফেললে তাদের লিভারে ঘা হতে পারে এমন কি মুখের চারপাশে ক্ষত সৃষ্টি হয়। পার্থেনিয়াম গাছের ফুলের রেনু হাঁপানি, চর্মরোগ, এলার্জি ও ব্রংকাইটিস রোগ সৃষ্টি করে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এই আগাছা ভারতে ৭০% মানুষের চর্ম রোগ ও ৩০% মানুষের শ্বাসকষ্ট জনিত রোগের কারণ।
পার্থেনিয়াম গাছ ধ্বংস করার উপায়
অন্যান্য আগাছার মতই পার্থেনিয়াম গাছেও আগাছা নাশক স্প্রে করলে তা মরে যায় কিন্তু নির্বংশ হয় না। শুকিয়ে যাওয়া গাছে আগুন লাগিয়ে দিলে তবেই তা পুরোপুরি নির্মূল হয়। সাধারণ খাবার নুন জলে মিশিয়ে এই গাছের উপরে ও গোড়ায় ভালো করে ছিটিয়ে দিলে এটি মরে যায়।
সাবধানতা অবলম্বন
পার্থেনিয়াম গাছের ফুলের রেনু শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরের ভেতর খুব সহজেই ঢুকে পড়তে পারে তাই কোনভাবেই এই গাছে হাত দেওয়া যাবে না এবং বাচ্চাদের অবশ্যই দূরে রাখতে হবে। এই গাছ নষ্ট করার সময় অবশ্যই হাতে গ্লাভস এবং মুখে মাস্ক থাকা দরকার। সাফাইয়ের শেষে অবশ্যই ভালো করে স্নান সেরে জামা কাপড় ধুয়ে তবে ঘরে ঢোকা উচিত।