নিউজ ডেস্ক: সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের জমানা ও বামেদের ৩৪ বছরের জমানায় সাধারণ মানুষের ওপর যে অত্যাচার হয়েছিল সেই অত্যাচারকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে বর্তমান শাসক দলের অত্যাচার। শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগণার ডায়মন্ডহারবার লোকসভার দিয়ারক ও বিষ্ণুপুরের সিংহীর মোড়ের দলীয় কার্যালয়ে সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত ভোটে অত্যাচারিতদের সঙ্গে কথা বলতে এসে এই মন্তব্য করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ডায়মন্ডহারবার মডেলের কড়া সমালোচনা করে শুভেন্দু বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ২৯ জন মারা গিয়েছে পঞ্চায়েত ভোটে। সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। মারা গিয়েছেন ৫৬ জন। কী শহীদ দিবস আপনি পালন করছেন কলকাতায়? পঞ্চায়েত ভোটে যে ৫৬ জন খুন হয়েছেন তাঁরাই তো প্রকৃত শহীদ। এদের প্রতি কোনও দরদ নেই আপনার? যারা খুন করল তাদের তৃণমূল থেকে তাড়ালেন না কেন? কেন মামলা করলেন না? আপনি তো পুলিশমন্ত্রী। পুলিশকে কেন বললেন না খুনি যে দলেরই হোক তাকে গ্রেপ্তার করতে”।
শুভেন্দু আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ১৮ জন নাকি তৃণমূলের লোক মারা গিয়েছে। তৃণমূলের লোকেদের মানুষ মারেনি বোমা বাঁধতে গিয়ে মারা গিয়েছে ওরা”। এদিন ৩৫৫ ধারার পক্ষে ফের সওয়াল করে শুভেন্দু বলেন, “আমি দুটো রাস্তা জানি। এক জনগণকে দিয়ে তৃণমূলের কাছ থেকে ক্ষমতা কাড়িয়ে নিতে হবে। কালীঘাট থেকে ইঁট খোলাতে হবে। আর নয় কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ প্রয়োগ করে মানুষকে বাঁচাতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বিপর্যয় হলে সংবিধানই এগিয়ে আসে।”
আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: পুলিশ কমিশনার এবং ওসির অপসারণ চাইলেন বিরোধী দলনেতা
এদিন রাজ্যের সমস্ত বিডিও অফিসে বিজেপির ডেপুটেশন প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, “ওরা ভয় পেয়ে গিয়েছে তাই ১৪৪ ধারা জারি করেছে”। ভোটের গণনায় বিষ্ণুপুরে বিজেপির বুথ সভাপতি ভোলানাথ মন্ডলকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে। এদিন শুভেন্দু বিষ্ণুপুর থানার আইসিকে একহাত নেন। ভোলানাথ মন্ডলকে খুনের অভিযোগে বিষ্ণুপুর থানা কোনও এফআইআর না নেওয়ার অভিযোগ তুলে আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করেই তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন শুভেন্দু। মৃত ভোলানাথ মন্ডলের স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ডায়মন্ডহারবার পুলিশ জেলার পুলিশ সুপারের অফিসে গিয়ে মৃতের পরিবারকে দিয়ে এফআইআর করান শুভেন্দু। দিয়ারক ও বিষ্ণুপুরে দু’জায়গাতেই অত্যাচারিতরা বিরোধী দলনেতার কাছে প্রশ্ন তোলেন, তাঁদের মারধরের হাত থেকে কে বাঁচাবে? অত্যাচারিতদের শুভেন্দু সম্পূর্ণ আইনি সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে বলেন, সবক্ষেত্রেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আর যাঁরা ঘরছাড়া রয়েছেন তাঁদের তালিকা পাঠান। আমার ঘরের দরজা তাঁদের জন্য খোলা থাকবে। আমার বাড়িতেই আমি তাঁদের একদিন দু’দিন নয়, যতদিন প্রয়োজন ততদিনই রেখে দেব।
সাংবাদিকদের সামনে শুভেন্দু বলেন, ” বেঙ্গালুরুতে বাম কংগ্রেস সমঝোতা হয়েছে। আর নিচের তলার বাম-কংগ্রেস কর্মীরা বাংলায় প্রাণ দিচ্ছেন, ঘরছাড়া হচ্ছেন, জেলবন্দী হচ্ছেন। বাম-কংগ্রেস কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে শুভেন্দুর পরামর্শ, “বিজেপির সঙ্গে আসুন। একসঙ্গে লড়াই করি আমরা। নিচের তলার বাম-কংগ্রেস কর্মীরা ভাবুন, কাদের জন্য আপনারা প্রাণ দিচ্ছেন, ঘরছাড়া হচ্ছেন।” এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে মুখ্যমন্ত্রীর পোষ্য আখ্যা দিয়ে শুভেন্দুর মন্তব্য, “ওনাকে দিয়ে পঞ্চায়েতে ভোট লুট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ত্রিশ হাজারের বেশি আসন বিজেপি জিতলেও খাতায়-কলমে ১১ হাজার দেখানো হয়েছে। জঙ্গলের রাজত্ব চলছে বাংলায়। মহিলাদের ওপর নির্যাতন পাঁচলার মত মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানো এসব মমতা ব্যানার্জির রাজত্বেই হয়। যারা আজ কলকাতায় উৎসব করছে, তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে ডায়মন্ডহারবারে”। যদিও মনিপুর কাণ্ড প্রসঙ্গ সযত্নে এড়িয়ে গিয়ে শুভেন্দু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আগে এরাজ্যের বেটিদের বাঁচান। অন্য রাজ্যের বেটিদের নিয়ে তাঁকে ভাবতে হবে না”।
বিরোধী দলনেতা এদিন সমস্ত বিজেপি কর্মী ও তাঁদের পরিবারকে রক্ষার দায়িত্ব বিজেপি নেবে জানিয়ে বলেন, “আমি বিরোধী দলনেতা হিসেবে বিষয়টা খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখছি। মুখ্যমন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছি, সমস্ত ঘটনারই কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যা কিছু ঘটছে তার ফল মারাত্মক হবে। যারা আজ কলকাতায় ডিমভাতের উৎসব করছে তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে ডায়মন্ডহারবারে। ভয় পাবেন না। লড়াই চালিয়ে যান। আমার বাড়িতেও বারবার আক্রমণ করিয়েছে।” ডায়মন্ডহারবারের দিয়ারকের দক্ষিণ কুলেস্বর গ্রামে ১৫৮ নম্বর বুথের বিজেপি প্রার্থীর ভোটে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এদিন ওই প্রার্থীর বাড়িতে যান শুভেন্দু। সেখানেই ডায়মন্ডহারবার ১ ও ২ নম্বর ব্লকের আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। আশ্বাস দেন, বিজেপি সবসময়ই পাশে থেকে তাঁদের রক্ষা করবে। এমনকি যাঁদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, দলের তরফে তাঁদের বাড়িতেও সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে বলে জানান শুভেন্দু।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দু এদিন বলেন, “২৪ এর লোকসভা ভোটে গোহারাণ হারবে বিরোধী জোট। ২০১৯-এও ইউনাইটেড ইন্ডিয়া নামে জোট হয়েছিল বিজেপিকে হারাতে। তার পরিণতি সকলেই দেখেছে। এবার মোদিজি আসন সংখ্যা ৪০০ পার করে যাবেন। বিরোধীদের আসন সংখ্যা অর্ধেকের নিচে নামবে”।