সুমন ভট্টাচার্য: কার্গিল যুদ্ধের বর্ষপূর্তির কয়েক দিন আগে বিবিসি একটি অসামান্য প্রতিবেদন তৈরি করেছে সেই সব পাকিস্তানি সৈনিকদের নিয়ে যাঁদের মরদেহ ইসলামাবাদ ফেরত নিয়ে যায়নি| আমাদের প্রতিবেশী দেশের নর্দান লাইট ইনফ্যান্ট্রির সেই মৃত সৈনিকের মা ক্যামেরার সামনে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, জেনারেল পারভেজ মুশারফ তো আমার সন্তানকে অস্বীকার করেছিলেন! অর্থাৎ এই কিছুদিন আগে প্রয়াত পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা একদা সেনানায়ক অস্বীকারই করেছিলেন যে তিনি তাঁর ফৌজের অফিসারদের উর্দি ছাড়া মুজাহিদ হিসেবে যুদ্ধ করতে পাঠিয়েছিলেন! নিহত সেনানীর মা বলছিলেন, পরবর্তীকালে অবশ্য পাক সেনাবাহিনী তাঁদের বাসস্থান থেকে পেনশন, এমনকি যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে মৃত্যুবরণের জন্য পদকও দিয়েছে। অর্থাৎ যে অসম্মান বা অগৌরব একদিন নিহত পাক সেনা অফিসারের মা কিংবা পরিবারকে বহন করতে হতো শুধুমাত্র অস্বীকৃতির কারণে, আজ তা টাকা, ফ্ল্যাট দিয়ে ইসলামাবাদ পূরণ করছে! সেই কারগিল যুদ্ধের প্রায় সিকি শতাব্দী পড়ে এক অবসরপ্রাপ্ত সুবেদারের, মনিপুরের কুকি সম্প্রদায়ের মানুষের এফআইআর পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল, এই যে দেশের জন্য প্রাণ দিতে সদা উদগ্র প্রাক্তন সেনানীকে আজ নিজের স্ত্রীকে নিজের দেশের একদল মানুষই নগ্ন করে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, এই চূড়ান্ত অপমানটা দেখতে হচ্ছে, কিংবা তাঁর সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে তৈরি হওয়া বাড়ি, কেনা গবাদি পশুদেরকে ছাই হয়ে যাওয়া দেখতে হচ্ছে, সেটাও কি সমান অসম্মানের? কার্গিলের বীর সেনানীকে তাঁর অবসরের জীবনে মণিপুরে যে জাতিদাঙ্গার শিকার হতে হচ্ছে,যেখানে তিনি তার নিজের ধর্মপত্নীর সম্ভ্রম এবং আব্রুটুকুও রক্ষা করতে পারছেন না, তা আসলে কতটা অসম্মান বা যন্ত্রণা দেগে দিচ্ছে তাঁর শরীরে আর মনে? তাহলে কি কার্গিলের পঁচিশ বছর পরে যুদ্ধ জয়ী ভারত আর যুদ্ধে পরাজিত, লাঞ্ছিত পাকিস্তানের সেনাদের পরিবার এক বিন্দুতেই দাঁড়িয়ে?
Tags: NULL