নিউজ ডেস্ক: সত্যজিৎ রায়ের তিনটি ছবির স্বত্ব কিনতে চাইছে মার্কিন চলচ্চিত্র পরিবেশক সংস্থা। সেই ছবিগুলির তালিকায় আছে ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’। কলকাতা-কেন্দ্রিক যে সংস্থা এই তিনটি ছবি প্রযোজনা করেছিল, সেই সংস্থার কর্ণধার জানাচ্ছেন ছবিগুলির আসল নেগেটিভ সংরক্ষণ করা এরখন দুষ্কর হয়ে উঠেছে। আর তাছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরের প্রায়ই কোনোরকম স্বীকৃতি কিংবা রয়্যালটি ছাড়াই ছবি প্রদর্শনের জন্য প্রচুর অনুরোধ এসেছে যা এককথায় তাকে বেশ বিরক্তই করেছে। আর তাই কি মার্কিনি সংস্থার কাছে স্বত্ব বিক্রি করে দিতে চলেছেন তিনি?
বলাই বাহুল্য ছবি তিনটির প্রযোজনা করেছিলেন অরিজিত দত্তের পূর্বপুরুষ। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অরিজিত দত্ত জানান, ইতিমধ্যেই মার্কিন মুলুকের জানুস ফিল্মসের সঙ্গে তার কথা হয়ে গিয়েছে। এই জানুস ফিল্মস মূলত আন্তর্জাতিক স্তরের সবরকম আর্টহাউস ঘরানার ছবিকে মার্কিন দর্শকদের কাছে পরিচিত করে তোলে। মাইকেলেঞ্জেলো আন্তোনিওনি, ইঙমার বার্গম্যান, ফেদেরিকো ফেলিনি প্রমুখ খ্যাতনামা চিত্র পরিচালকদের ছবির স্বত্ব নিয়ের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে এই প্রযোজনা সংস্থার। তিনি বলেন প্রথম যখন সত্যজিৎ রায়ের ছবির স্বত্ব বিক্রি করার প্রস্তাব আসে এক মাস আগে, সিদ্ধান্ত নিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল তাকে। নিজের বাড়িতে ছবির আসল নেগেটিভ সংরক্ষণ করতে সমস্যা হচ্ছিল অনেকদিন ধরেই। তাঁর কথায়, ’২৪ ঘন্টা ডাবল এয়ার কন্ডিশনিং ব্যবস্থায় সেই নেগেটিভগুলিকে রাখতে হয়। আগে বম্বে ল্যাবরেটরিতে সেই নেগেটিভগুলি সংরক্ষণ করা হত। ১৯৯০ সালে সেই ল্যাব বন্ধ হওয়ার পরে তাকে নিজেকেই সেই সংরক্ষণের দায়িত্ব নিতে হয়। অরিজিত বলেন যে, ‘গুপী গাইনের শেষ রিলটি ছিল রঙিন। কিন্তু সেটা হারিয়ে গিয়েছে। যেহেতু আমার কাছে একটা মাস্টার পজিটিভ ছিল সেই জন্যে ছবিটিকে পুনরুদ্ধার করা গিয়েছে। নাহলে ছবিটা চিরদিনের মত হারিয়েই যেত।’
আরও পড়ুন: Uttam Kumar Death Anniversary: সারারাত বাথরুমেই কাটিয়েছিলেন মহানায়ক, কিসের ভয়ে লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল উত্তমকুমারকে?
আসল নেগেটিভ সংরক্ষণ করা মোটেও সহজ কাজ নয়। যথেষ্ট দুশ্চিন্তা থেকেই যায় আর তাই নিজে তিনি আর সেই দায়িত্ব নিতে চান না। শুধু তাই নয়, স্বীকৃতির জায়গা থেকেও একটা হতাশা ঘিরে ধরেছে তাকে। গত বছর ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভ অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে যখন ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ছবিটির ফোর-কে ভার্সন প্রকাশ করা হয় এবং সেটাই কান চলচ্চিত্র উৎসবে যায়, তখন একপ্রকার বঞ্চিতই হন অরিজিত-পরিবার। তাঁর কথায় জানা যায়, এখন কেবলমাত্র প্রিয়া সিনেমাহলে সত্যজিতের ছবিগুলি প্রদর্শনের অনুমতি রয়েছে তার কাছে।
১৯৬৯ সালে যখন ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ মুক্তি পায় পিয়ালি পিকচার্সের পক্ষ থেকে ছবিটির পরিবেশনার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছিল। মিনার, বিজলী, ছবিঘর, গ্লোব ইত্যাদি প্রেক্ষাগৃহে রমরমিয়ে ১০২ সপ্তাহ চলেছিল সেই ছবিটি। অন্যদিকে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ছবিটিও পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭০ সালে মুক্তি পায় চার মাসের ব্যবধানে। সেই ছবিগুলিও বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল সেই সময়।