নিউজ ডেস্ক: ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনক হিসেবে সারা ভারতে উঠে আসে দাদাসাহেব
ফালকের নাম। কিন্তু সাল-তারিখ হিসেব করে দেখলে জানা যাবে ফালকের প্রথম ছবি ‘রাজা হরিশচন্দ্র’
মুক্তি পায় ১৯৩১ সালে আর তার ১০ বছর আগেই প্রথম নির্বাক ছবি বানিয়ে ফেলেছেন এক অশ্রুতকীর্তি
বাঙালি। অথচ তার নাম চলচ্চিত্রের জনক হিসেবে একসময় স্বীকৃতিই পেত না। হতভাগ্য সেই মানুষটির
নাম হীরালাল সেন। ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি’র প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেই তাকে মনে রেখেছে
বোদ্ধা সিনেপ্রেমীরা।
১৮৯৮ সালে হীরালাল সেন তৈরি করেন তার ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি’।
প্রথমে তার ভাই মতিলাল সঙ্গী হলেও শেষদিকে তার সঙ্গেও বনিবনা হচ্ছিল না, ব্যবসা থেকে
আলাদা হয়ে যান তিনি। বায়োস্কোপ কোম্পানি তৈরি হওয়ার পর প্রথম দিকে ময়দানেই তাঁবু খাটিয়ে
ছবি দেখাতেন হীরালাল। কলকাতা শহরের বিভিন্ন চলমান দৃশ্য ক্যামেরায় তুলে নিতেন, তারপর
বাংলা থিয়েটারের অমরেন্দ্র দত্তের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বেশ কিছু মঞ্চসফল নাটকের রেকর্ডিংও
করেন তিনি। কেউ বলেন ১৮৬৬, মতান্তরে ১৮৬৮ সালে বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের বগজুড়ি গ্রামে
তার জন্ম হয়। হেমাঙ্গিনী দেবীর সঙ্গে বিয়ে হলেও পরে কুসুমকুমারী দেবীর সঙ্গে হীরালালের
সম্পর্ক নিয়ে বেশ চর্চা শুরু হয়েছিল আর কুসুমকুমারীর প্রেমেই একসময় পতনের পথে হাঁটতে
শুরু করেছিলেন হীরালাল সেন।
হীরালালের পিসতুতো দাদা দীনেশচন্দ্র সেন তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন
যে হীরালাল শেষ বয়সে বখে গিয়েছিলেন। ক্লাসিক থিয়েটারের অভিনেত্রী কুসুমকুমারীর প্রেমে
ডুবে নেশায় মত্ত হয়েছিলেন হীরালাল। সংসারী ছিলেন না, বিষয়ীও ছিলেন না, সংসারের রাশ
ধরে রাখতেন হেমাঙ্গিনী দেবী। আর কুসুমকুমারীর সঙ্গে সম্পর্ক জানাজানি হওয়ার পর সংসারের
সঙ্গেও দূরত্ব বাড়তে থাকে হীরালালের, অঢেল টাকা ওড়ানোর কারণে দারিদ্র্য চেপে বসে হীরালালের
জীবনে। বেহিসেবি খরচের জন্য ভাই মতিলালের সঙ্গে মনোমালিন্য হয় হীরালালের, ভেঙে যায়
সাধের রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি। আর তার পর থেকেই অবসাদে ডুবে যান হীরালাল। ধরা পড়ে
ক্যানসার। স্ত্রী হেমাঙ্গিনী নিজের গয়না, বাড়ির আসবাব বেচে স্বামীর চিকিৎসার খরচ জুগিয়েছেন
একসময়, কিন্তু তাতেও মেটেনি জ্বালা।
একসময় নিজের সাধের
ক্যামেরাটি বন্ধক রেখে টাকা জোগাড় করতে চেয়েছিলেন হীরালাল। জানতেন আর হয়ত ফেরা হবে
না। ১৯১৭ সালে এভাবেই দুরারোগ্য মারণব্যাধিতে চলে গেলেন হীরালাল আর সেই বছরই আগুন লাগল
মতিলাল রায়ের বাড়িতে। পুড়ে ছাই হয়ে গেল সমস্ত ছবির স্টক। হীরালালের হীরের খনিতে এখন
যুগ যুগান্তরের কয়লার কালি!