নিউজ ডেস্ক: কলকাতা ফুটবলের বহু ঘটনার কান্ডারী সুপ্রকাশ গড়গড়ি চিরবিদায় নিলেন। গোটা দেশ স্বাধীনতা দিবসে মেতে। সোমবার রাত একটা নাগাদ কলকাতার এক বেসরকরী হাসপাতালে মারা গেলেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবল সুপ্রকাশ গড়গড়ি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। রেখে গেলেন স্ত্রী ও কন্যাকে।
লাল-হলুদের স্বর্ণযুগের কান্ডারিদের মধ্যে এক নম্বর অজয় শ্রীমানী। তিনি ছিলেন ক্লাবের ফুটবল সচিব। তিনি সচিব থাকাকালীন ত্রিমুকুট জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু সুপ্রকাশ গড়গড়ির আমলে ক্লাবের সাফল্য আরও বেশি।
সালটা ১৯৮৮। সেবার আর্থিক দৈন্যতা ক্লাবে প্রকট। ফুটবল দল গড়া হবে কীভাবে কেউ জানে না। তখন তো স্পনসরের যুগ ময়দানে আসেনি। কর্তারা দিশেহারা। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তখন ক্লাবের ফুটবল সচিব ছিলেন সুপ্রকাশ গড়গড়ি। সকলে জানেন, ময়দানি মানুষদের মধ্যে বাংলায় একমাত্র সুপ্রকাশ গড়গড়ির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল সুরসম্রাজ্ঞীর। তাই ক্লাবের কাছে সুপ্রকাশ প্রস্তাব দিলেন, যদি লতা মঙ্গেশকরকে দিয়ে বিচিত্রানুষ্ঠান করা যায় তাহলে কেমন হয়? যেমন কথা। তেমন কাজ। সকলে এককথায় রাজি হয়ে গেলেন। দলকে নিয়ে মুম্বইতে গেলেন রোভার্স কাপ খেলতে। সেবার গিয়ে সরাসরি লতার কাছে সুপ্রকাশ অনুষ্ঠান করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তাঁর প্রস্তাবে স্বর্গীয় লতা এককথায় সম্মতি জানিয়ে দিলেন। সেবার লতাকে নিয়ে এসে প্রায় ২০ লাখ টাকা তুলেছিল ইস্টবেঙ্গল।
টুটু বসু মোহনবাগান ক্লাবের দায়িত্ব নেওয়ার পর কৃশানু-বিকাশের দিকে হাত বাড়িয়েছিল। বিকাশ চুক্তিতে সই করে খেলতে গিয়েছিলেন চেন্নাইতে সন্তোষ ট্রফিতে। কৃশানুর সই করার কথা ছিল সন্তোষ ট্রফি খেলার পরে। চেন্নাইতে সে সময় কৃশানু-বিকাশের ঘরে লোক-লষ্কর নিয়ে ঢুকে পড়েন সুপ্রকাশ। সাদামাটা লুঙ্গি পড়েই। দেখে চমকে উঠেছিলেন কৃশানু-বিকাশ দু’জনেই। ছিলেন মোহনবাগানের দুই কর্তা। কোনক্রমে তাঁরা পালিয়ে বাঁচেন। পরে জানা যায়, প্যান্ট পরার সময় পাননি সুপ্রকাশ। লুঙ্গি পড়েই বিমানে উঠে পড়েছিলেন। সে যাত্রায় অবশ্য কৃশানু-বিকাশকে রাখতে পেরেছিল ইস্টবেঙ্গল।
চিমার সঙ্গে ক্যাথির লম্বা প্রেম। তারপরে চার হাত এক করার কাজটি গোপনে সম্পন্ন করেছিলেন আজকের সুপ্রকাশ গড়গড়ি। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে নানা ঘটনার সঙ্গী ছিলেন তিনি। শুরুতে পল্টু দাসের দলে ছিলেন। পরে শিবির বদলে বিরোধী শিবিরে মুখ হন। কিন্তু জিততে পারেননি নির্বাচনে। ধীরে ধীরে মাঠে আসাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে যেতেন নিয়ম করে। আর্জেন্তিনার সমথর্ক সুপ্রকাশ কাতার বিশ্বকাপে যেতে পারেননি অসুস্থতার কারণে। কিন্তু রাশিয়া ও ব্রাজিল বিশ্বকাপ গিয়েছেন বহাল তবিয়তে।