নিউজ ডেস্ক: ময়দানে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘বড়ে মিঞা’ নামে। কর্তব্যপরায়ণ, নিষ্ঠাবান, শৃঙ্খলাপরায়ণ। ঠিক যে যে গুণ একজন আদর্শ ক্রীড়াবিদের মধ্যে থাকা উচিত, সবই যেন সর্বশক্তিমানের কাছে আশীর্বাদ হিসাবে পেয়েছিলেন মহম্মদ হাবিব । সতীর্থদের কাছে তিনি ছিলেন আদর্শ ‘টিমম্যান’। আর অনুজদের কাছে ছিলেন আদর্শ অভিভাবক। কারও কাছে আবার তিনি ‘ভগবান’।
কলকাতা ময়দানের সেই বড়ে মিঞা এখন না ফেরার দেশে। স্বাধীনতা দিবসের দিনেই তিনি হায়দরাবাদের বাড়িতে মারা গিয়েছেন। ৭৪ বছর বয়সে। ১৭ বছরের বেশি সময় তিনি খেলেছেন তিন প্রধানের হয়ে। তারপরে ইস্টবেঙ্গল ছাড়া মোহনবাগান ও মহামেডানের কোচিং করিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া কলকাতা ময়দানে। বড়ে মিঞার স্মৃতি চারণায় ব্যস্ত সকলেই।
মোহনবাগানে হাবিবের সতীর্থ ছিলেন সুব্রত ভট্টাচার্য। যেভাবে হাবিব তাঁকে গাইড করেছেন সেজন্য আজও কৃতজ্ঞ মোহনবাগানের ঘরের ছেলে। হাবিবের প্রয়াণে তাঁর প্রিয় ‘বাবলু’ যেন ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠার পিছনে হাবিবদার অনেক অবদান আছে। পঁচাত্তরে আমরা পাঁচ গোল খাওয়ার পর ছিয়াত্তরে হাবিবদা এসেছিলেন। তখন মোহনবাগান মেসে থাকতাম। ওই মেসে হাবিবদা আর আকবর দু’জনেই থাকত। সেখানে হাবিবদার যে গাইডেন্স পেয়েছি, অভাবনীয়। আমার বাবা বা দাদাও কখনও আমাকে এত শাসন করেনি যা হাবিবদা করেছেন। বিকেল পাঁচটা থেকে ছ’টার মধ্যে মেসে না ঢুকলে আমাকে ঢুকতে দিত না। আবার আমি না খেলে নিজেও খেত না। না খেয়ে বসে থাকত আমার জন্য। অফিস করে আমি আসার পর একসঙ্গে তিনজন খেতাম আমরা। হাবিবদা, আকবর, আমি। হাবিবদা আমার কাছে ভগবান।’
হাবিব যে ভীষণ শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং নিষ্ঠাবান সেটা শোনা গেল আরও একজনের মুখে, সৈয়দ নঈমুদ্দিন। ইস্টবেঙ্গল এবং ভারতীয় দলে দীর্ঘদিন হাবিবের সঙ্গে খেলেছেন নঈমুদ্দিন। প্রিয় সতীর্থের মৃত্যুর খবর শুনে তিনি বলছিলেন, ‘হাবিবদা দেশের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে একজন। বড় ক্ষতি হয়ে গেল ভারতীয় ফুটবলের। একসঙ্গে দীর্ঘদিন খেলেছি ইস্টবেঙ্গলে। ভীষণ সাহায্য করতেন। খুব শৃঙ্খলাপরায়ণ। এশিয়ান গেমস ব্রোঞ্জজয়ী দলের সদস্য ছিলেন। আমরা পরিবারের মতো ছিলাম। একসঙ্গে থাকলে সবসময় ধর্ম নিয়ে কথা বলতেন।’
শেষ জীবনটা ভাল কাটেনি হাবিবের। সে কথা উঠে এল নঈমুদ্দিনের স্মৃতিচারণায়। তিনি বলছিলেন, “দু’বছর আগে একবার দেখা হয়েছিল। আমি গিয়েছিলাম ওঁর বাড়িতে দেখতে। ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। কাউকে চিনতে পারছিলেন না। আসলে যারা সারাজীবন খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাঁদের যত্নে রাখতে হয়। প্রচুর ওষুধ লাগে।” ফুটবলার জীবন প্রায় গোটাটাই কেটেছে বাংলায়। অথচ জীবনের শেষদিকটা হায়দরাবাদে কাটাতে হয়েছিল হাবিবকে। নঈমকেও তাই কাটাতে হচ্ছে। সেটাই আক্ষেপের জায়গা কিংবদন্তি ফুটবলারের। আক্ষেপের সুরে বললেন,‘কলকাতা তো আমাদের আটকায়নি। আপনারা তো আমাদের আটকাননি। দিয়েছি অনেককিছু। কিন্তু বিনিময়ে ভালোবাসা পেয়েছি প্রচুর। কিন্তু জীবনযন্ত্রণার গুরুত্ব কেউই দেয়নি।’