নিউজ ডেস্ক: আজ ভারতের প্রাক্তন
প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর পঞ্চম প্রয়াণ বার্ষিকী। ভারতে জোট সরকারের জনক
বলে মনে করা হয় তাকে। এনডিএ তৈরি হয় তার আমলেই। ভারতকে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র
করার কারিগরদের মধ্যে তিনি অন্যতম। প্রাথমিক জীবনে তিনি পেশায় ছিলেন সাংবাদিক। কাজ
করেছিলেন স্বদেশ, বীর অর্জুন ও রাষ্ট্র ধর্ম নামক পত্রিকায়।
কবি হিসেবে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। রাজনীতিবিদ হিসেবে তাকে শ্রদ্ধা করতেন শাসক বিরোধী
সব পক্ষ। খোদ জওহরলাল নেহরু তাঁর মধ্যে ভবিষ্যতের প্রতিভা প্রত্যক্ষ করেছিলেন।
অটল
বিহারী বাজপেয়ীর জন্ম হয়েছিল ১৯২৪ সালে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে। সাধারণ মধ্যবিত্ত
পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। ছোটবেলায় পড়াশোনা করেন সরস্বতী শিশু মন্দিরে। বড়
হয়ে আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথমে সংস্কৃতে স্নাতক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ যোগদান
করেন। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় ২৪ দিনের জন্য গ্রেপ্তার হন তিনি। পরে
জনসংঘ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু
করেন। ধীরে ধীরে অসাধারণ বক্তা হয়ে ওঠেন তিনি। তার বক্তব্যের প্রশংসা শোনা যায়
জওহরলাল নেহরুর মুখেও। অটলের মধ্যে ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রীর ছায়া দেখতে পেয়েছিলেন
নেহরু। স্বাধীন ভারতে বেশ কিছুদিন সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। কবি
হিসেবেও প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর লেখা বেশ কয়েকটি কবিতা দাগ কেটেছে ভারতবাসীর
মনে। জরুরি অবস্থার সময় অন্যান্য রাজনৈতিক সহকর্মীদের সঙ্গে গ্রেফতার হন অটল
বিহারি বাজপেয়ী। এর পর নানান রাজনৈতিক ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে বিজেপিকে শক্তিশালী করে
তোলার পেছনে তাঁর অবদান ছিল যথেষ্ট।
১৯৯৬ সালের মে মাসে বিজেপি সবচেয়ে বেশি আসন
পায় জাতীয় স্তরের নির্বাচনে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না তাঁর দলের কাছে। ১৩
দিনের মাথায় সরকার পতন হয়। এর পর দুটি জোট সরকার ব্যর্থ হয় সরকার পরিচালনায়। ১৯৯৮
সালে ফের নির্বাচন হলে সরকার গড়ে বিজেপি। ১৩
দিনের সরকার চলে ১৩ মাস। দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন বাজপেয়ী। তৃতীয়বার
অবশ্য পাঁচ বছর সরকার চালাতে সক্ষম হন তিনি। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের
উন্নতি সাধনের চেষ্টা করেছিলেন বাজপেয়ী। কিন্তু পাকিস্তানের পেছন থেকে ছুরি মারার
অভ্যাস চিরকালের। ভারতের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় কার্গিল যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে প্রত্যেক
বারের মত পাকিস্তান পরাস্ত হয়। তিনি ভারতে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে তৈরি
করেছিলেন স্বর্ণিম চতুর্ভুজ যোজনা। তাঁর আমলেই ভারত আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা
উপেক্ষা করে পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে উঠে আসে। তাই আজ পাকিস্তান মাঝে মধ্যে জঙ্গী
অনুপ্রবেশ ঘটালেও যুদ্ধ করার সাহস দেখাতে পারে না। ২০১৮ সালে ১৬ আগস্ট আজকের দিনে
তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। পঞ্চম প্রয়াণ দিবসে তাঁকে এদিন শ্রদ্ধা জানান
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী
মুর্মু সহ দেশের প্রায় প্রথম সারির সকল রাজনৈতিক নেতৃত্ব। এদিন পিতাকে শ্রদ্ধা
জানাতে উপস্থিত ছিলেন তাঁর পালিত কন্যা নমিতা কৌল ভট্টাচার্য।