নিউজ ডেস্ক: ১৫ অগাস্ট ভারত স্বাধীন হলেও বনগাঁ, বালুরঘাট, নদিয়া, মালদা ও মুর্শিদাবাদ
স্বাধীন হয়েছিল ১৮ অগাস্ট। দেশের অন্যান্য জায়গা স্বাধীন হলেও
বালুরঘাট মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া জেলাকে
“নোশনাল এরিয়া” হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। তিন দিন পর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল এই সকল স্থান।
র্যাডক্লিফ লাইন অনুযায়ী হিন্দু প্রধান এলাকা ভারত ও মুসলিম
প্রধান এলাকা পাকিস্তানের মধ্যে বিলয় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ বেলায় অজানা কারণে
বনগাঁ, বালুরঘাট, নদিয়া, মালদা ও মুর্শিদাবাদ নিয়ে জটিলতা
তৈরি হয়। ১৫ তারিখ সকালে এই সকল স্থানের অধিকার নেয় পাক প্রশাসন। পরে এই সকল স্থানের
বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের প্রতিবাদে ১৮ অগাস্ট ভারতের অংশ হয়।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা পাওয়ার সময় ১৫ অগাস্ট থেকে ১৮ অগাস্ট পর্যন্ত বালুরঘাট সহ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার পাশাপাশি মালদা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ
সহ রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা নোশনাল এরিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
পাকিস্তানের ধারণা ছিল যে এই এলাকা পাকিস্তানের অন্তর্গত। সেই মত পাকিস্তানি
সেনারা ১৫ অগাস্ট বালুরঘাট শহরের দখল নেয়।
১৪ ই অগাস্ট তৎকালীন বালুরঘাটের মহকুমা শাসক পানাউল্লা
বালুরঘাটের মাটিতে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করে। কিন্তু বালুরঘাটের বীর সন্তান সরোজ রঞ্জন চট্টোপাধ্যায় ভারতের মানচিত্র নির্মাণকারীদের বোঝাতে সক্ষম হন বালুরঘাট সহ দক্ষিণ
দিনাজপুর জেলার নোশনাল এরিয়ার অন্তর্গত এলাকাগুলি আসলে ভারতের অন্তর্গত। আর সেই
যুক্তি মেনে বালুরঘাট সহ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার নোশনাল এরিয়াকে ভারতের অংশ হিসাবে
ঘোষণা করা হয়। ১৯৪৭ সালের ১৮ই অগাস্ট সরোজ
বাবু বালুরঘাটের হাইস্কুল
মাঠে ভারতের তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করেন। পাকিস্তানি সেনারা
সেই দিন বালুরঘাট ছেড়ে চলেও যায়। স্বাধীনতার খবর ছড়িয়ে
পড়তে তৎকালীন বালুরঘাট শহর জুড়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন স্থানীয়
বাসিন্দারা। এই বিশেষ দিনটিকে স্মরণ করে প্রতিবছর
বালুরঘাটের সাইকেল কমিউনিটি বালুরঘাটের ভারত ভুক্তি দিবস পালন করে পূর্ণ মর্যাদার
সাথে বালুরঘাট হাই স্কুল মাঠে। অন্যদিকে এদিন
ভারতবর্ষের জাতীয় পতাকা তোলেন বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ডঃ সুকান্ত মজুমদার। এদিন
হাই স্কুল মাঠে এই পতাকা উত্তোলন করা হয়।
বালুরঘাটের পাশাপাশি মালদা জেলা আক্ষরিক অর্থে স্বাধীনতার স্বাদ
পেয়েছিল ১৮ই অগাস্ট। প্রতিবছর এই দিনে
পালিত হয়ে আসছে মালদার স্বাধীনতা দিবস। শুক্রবার এই দিবস পালনের ছবি নজরে এল
মালদা জেলা গ্রন্থাগারের বই বাগানে। জাতীয় পতাকা উত্তোলন সহ নানান দেশাত্মবোধক
কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করলেন মালদার সংস্কৃতি প্রেমী শিল্পী, সাহিত্যিক সহ অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা মিলে। ১৯৪৭ সালে ১৫ ই অগাস্ট ভারত
স্বাধীন হলেও ভাগাভাগির নিরিখে ১৪ই অগাস্ট মালদা জেলা প্রশাসনিক ভবনে তোলা হয়
পাকিস্তানের ঝান্ডা। জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং বহু মানুষ
এর বিরোধিতা করে আইনি লড়াই লড়েছিলেন। ১৭ই অগাস্ট ঘোষণা হয় ভারতের অন্তর্ভুক্ত
করা হবে মালদা জেলা। গোটা দেশে ৭৭ তম স্বাধীনতা দিবস পালিত
হয়েছে মঙ্গলবার। কিন্তু শুক্রবার রাজ্যের এই প্রান্তে
উত্তলিত হল জাতীয় পতাকা।
ব্রিটিশ
‘বাউন্ডারি কমিশন’-এর অধিকর্তা র্যাডক্লিফের আঁকা সীমান্তরেখার বাইরে চলে যায় জায়গাগুলি। পরে স্থানীয়দের আপত্তি ও
আন্দোলনের জেরে তিনদিন পরে অন্যান্য জায়গার মত বনগাঁ ও গাইঘাটা ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট থেকে টানা ১৭ই আগস্ট পর্যন্ত ৩ দিন ধরে পূর্ব
পাকিস্তানের অধীনে ছিল মুর্শিদাবাদ জেলা। সিরিল র্যাডক্লিফের
নেতৃত্বে বাউন্ডারি কমিশনের সুপারিশ অনুসারে মুর্শিদাবাদ জেলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল
পূর্ব পাকিস্তানে। আর পাল্টা খুলনা জেলা যুক্ত হয়েছিল
ভারতের অংশে। সেই দিন ১৯৪৭এর ১৫ই আগস্ট জেলার সদর শহর বহরমপুরের ব্যারাক স্কোয়ার
মাঠে পাকিস্তানের নামে প্রথম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান পালিত হয়। মুর্শিদাবাদকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে দিল্লীতে তড়িঘড়ি কংগ্রেস নেতা
শশাঙ্ক শেখর স্যান্যাল মুর্শিদাবাদকে ভারতের মধ্যে ঢোকাতে তৎপর হন। রাজনৈতিক
দলগুলির পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়, গঙ্গা নদীকে ধরে
ভৌগলিক সীমারেখা সংশোধন করে মুর্শিদাবাদকে ভারত ও খুলনা জেলাকে পূর্ব পাকিস্তানে
অন্তর্ভুক্ত করার। ১৮ অগাস্ট হিন্দু প্রধান এই সকল এলাকা ভারতে চলে
আসায় খুশিতে আনন্দ উৎসব করেন সেখানকার মানুষ। আজও সেই রেশ রয়েছে অমলিন।