যশবন্ত সিংহ রাওয়াত, নামটা পরিচিত নয় মোটেই। আজ এই অনামী ব্যক্তির জন্মদিন। এই কারণে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, কে এই অখ্যাতনামা ব্যক্তি?
নিউজ ডেস্ক: স্বাধীনতার পর সীমানা রক্ষা করতে গিয়ে ভারতের যেসব বীর সেনারা আত্মবলিদান দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে একজন যশবন্ত সিং রাওয়াত। ১৯৬২ সালে চিন-ভারত যুদ্ধের রণাঙ্গনে যখন শয়ে শয়ে শহিদ হচ্ছেন ভারতীয় সেনারা, হাতছাড়া হচ্ছে একের পর এক সীমান্ত এলাকা, চিনের আগ্রাসন রুখতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার, সেই সময় সেলা পাসে ৩ দিন ধরে একা লড়াই করে চিনা সৈন্যদের আগ্রাসন রুখেছিলেন এই বীর জওয়ান। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত টিকেছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রে। এরপরের ঘটনা আরও চমকপ্রদ! সেনা সূত্রে, এমনকি ভারত-চিন সীমান্তের সাধারণ মানুষজনের মুখেও শোনা যায় বাবা হরভজন সিংয়ের মতো যশবন্ত সিং রাওয়াতও নাকি আজও নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছেন তাঁর কর্তব্য পালন। আজও তাঁর বাড়িতে পাঠানো হয় মাসিক বেতন। এমনকি একজন সেনা অফিসারের মতোই সমস্ত সুযোগ-সুবিধা, ছুটি পর্যন্ত দেওয়া হয়ে থাকে তাঁকে।
ঝড়ের গতিতে তাওয়াং সীমান্তে প্রবেশ করার পর চিনের লক্ষ্য ছিল সেলা পাস। আর সেলা পাস মানেই অরুণাচল প্রদেশ দখল করার সুবর্ণ সুযোগ। তাই সেলা পাস সুরক্ষিত রাখা তখন ভারতের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। এদিকে তাওয়াং থেকে ফেরত আসা সেনাদের নিরাপত্তার জন্য নুরানাং এলাকায় ব্যাক আপ ফায়ারিং দেওয়ার জন্য ফোর্থ গাড়ওয়াল রাইফেলের ব্যাটেলিয়ানদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদের মধ্যেই ছিলেন যশবন্ত সিং। সেই সময় চিনের মিডিয়াম মেশিন গান ছিল অত্যন্ত ভয়ানক। এক একটি মেশিন গান দিয়েই শত শত ভারতীয় সেনাকে পর্যুদস্ত করে দিচ্ছিল চিন।
নুরানাং এলাকায় ভারতীয় সেনাদের নিকেশ করতে গুপ্ত বাঙ্কারে এরকম একটি মেশিন গান বসায় চিন। সেলা পাসকে বাঁচাতে সেই সময় এই চিনা মেশিন গানকে ধ্বংস করাই ছিল সেনার প্রধান লক্ষ্য। চিনা বাঙ্কারে ঢুকে এই অসম্ভব মিশন সফল করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যশবন্ত সিং, লেফটেন্যান্ট গোপাল সিং গুসেন এবং ত্রিলোক সিং নেগীকে। অতর্কিতে আক্রমণ করে চিনা সেনাকে উড়িয়ে দিয়ে বাঙ্কার থেকে মিডিয়াম মেশিন গান ছিনিয়ে নিয়ে আনতে সফল হলেও চিনের প্রবল গুলিবর্ষণে মৃত্যুবরণ করেন গোপাল সিং গুসেন এবং ত্রিলোক সিং নেগী। গুলি খেয়েও আহত অবস্থায় মেশিন গান সমেত নুরানাংয়ে ফিরে আসেন যশবন্ত। সেলা পাসে অবশিষ্ট ভারতীয় সেনারা যাতে সুরক্ষিতভাবে ফিরতে পারেন, সেই জন্য হাজার হাজার চিনা সেনাকে আটকাতে একাই মেশিন গান এবং বন্দুক নিয়ে একাধিক ভারতীয় বাঙ্কার থেকে ফায়ার করতে থাকেন তিনি। সেই সময় স্থানীয় দুই বীরাঙ্গনা মহিলা সেলা এবং নুরা সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন এই একাকী বীর সৈনিককে।
সূত্র মতে, যুদ্ধ করতে করতে মারা যান সেলা, আর চিনা সেনার হাতে গ্রেফতার হন নুরা। প্রায় ৩০০ জন চিনা সৈনিক মারা যায় এই অসম লড়াইয়ে। টানা ৩ দিন একাধিক বাঙ্কার থেকে একাই যুদ্ধ করে যশবন্ত চিনা সেনাদের বুঝতে দেননি যে মাত্র ১ জন সেনাই রয়েছে সেখানে। এরপর চিনা সেনারা তাঁকে ঘিরে ফেললে নিজেকে গুলি করে শেষ করে দেন এই বীর। আবার অনেকে বলেন, চিনারাই তাঁকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে তাঁর মাথা কেটে নিয়ে যায়। যদিও যুদ্ধের পর সেই মাথা সসম্মানে ফেরত দেয় চিন। এই বীর যোদ্ধাকে স্মরণ করে তৈরি হয় ‘হকিকত’ এবং ’72 Hours’ ছবি। তাঁর এই আত্মবলিদানের জন্য ভারত সরকার তাঁকে ভূষিত করে মহাবীর চক্র সম্মানে। এমন কি তাঁর সম্মানে নির্মাণ হয়েছে যশবন্ত গড় স্মারক। একা হাতে একাধিক বাঙ্কার থেকে যুদ্ধ করায় তাঁকে ‘রাইফেল ম্যান’ আখ্যা দেওয়া হয়। মজার কথা, মৃত্যুর পরও ডিউটি থেকে ক্ষান্ত দেননি তিনি। শুধুমাত্র বেতন নয়, এখনও তাঁকে পদোন্নতি পর্যন্ত দেওয়া হয়। দেওয়া হয়নি অবসরও! বলা হয়, চিনা সেনাদের ভারত সীমান্তে কোনও গোপন কার্যকলাপ নাকি ৩ দিন আগে স্বপ্নে জানিয়ে দেন যশবন্ত।