নিউজ ডেস্ক: মণিপুরে সহিংসতার ঘটনায় ধ্বংস হয়েছে অন্তত ৩৯৩ টি ধর্মীয় স্থল যা
মূলত সনাতন মেইতেই সম্প্রদায়ের বলে দাবী করা হচ্ছে। পূর্বের এই রাজ্যে সহিংসতার ঘটনায় একটি সামাজিক সংগঠনের অভ্যন্তরীণ তদন্তে উঠে
এসেছে হিন্দু ও সানামাহি ধর্মের অনুগামীদের মন্দির নির্বিচারে ভাঙ্গা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মণিপুরে চলছে অশান্তি। ঘরবাড়ি দোকানপাট লুঠ হয়েছে দুপক্ষেরই। এরই মাঝে উমাংলাই কানবা আপনবা
লুপ (UKAL) নামে একটি সংস্থা দুই পক্ষের সহিংসতা চলাকালীন কয়েক মাস ব্যাপী গবেষণা চালিয়েছে। তাদের গবেষণায়
উঠে এসেছে হাড় হিম করা তথ্য।
ওয়ার্কিং কমিটি অন প্রটেকশন অফ মেইতেই টেম্পলস এর অধীনস্থ ওই সংস্থা জানিয়েছে উপত্যকা
ও সীমান্ত এলাকায় থাকা এক বিশেষ সম্প্রদায়ভুক্ত উগ্রপন্থীরা সনাতন ও সানামাহিদের
মন্দির লুঠ ও ধ্বংস করার পাশাপাশি বহু মন্দির পুড়িয়ে
দিয়েছে। প্রসঙ্গত সানামাহি ধর্মের অনুগামীদের মেইতেই বলা হয়। যারা মুলত প্রকৃতির
উপাসনা করেন। হিন্দু ধর্মের সঙ্গে তাদের মিল রয়েছে। আবার অনেক মেইতেই হিন্দু ধর্ম পালন
করে থাকেন বলে জানা যায়। মন্দির ধ্বংস করার সময় মূর্তির গায়ে থুতু ছেটানো, এমনকি লাথি মেরে মুর্তি ভাঙার ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ। ওই সংস্থার থেকে দাবী করা হয়েছে
যাতে পরবর্তীকালে মন্দিরগুলি পুনর্নিনির্মাণ করা যায় তার
জন্যই তারা এই তথ্য সংগ্রহ করছেন। অন্যদিকে তাদের গবেষণায়
যদি কোন মন্দির বাদ গিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে স্থানীয়দের খবর দিতে বলা হয়েছে ওই
সংস্থাকে।
মণিপুরের একটি
স্থানীয় দৈনিকের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে ধর্মীয় স্থলগুলি ভাঙচুর, পোড়ানো এমনকি সম্পূর্ণ মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার
ঘটনা জাতি বিদ্বেষের ফলেই ঘটেছে। ওই পত্রিকা তরফ থেকে দাবী
করা হয়েছে কুকি প্রভাবিত এলাকাতেই সব থেকে বেশি হিন্দু ও মেইতেইদের মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে। তবে নাগা প্রভাবিত এলাকায় এই ঘটনা তুলনামূলক কম।
সংস্থার তরফ থেকে আরও দাবি করা হয়েছে হিন্দুদেবী দেবতার মন্দিরগুলিও
পাশাপাশি সানামাহী দেবী দেবতার মন্দিরগুলিও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। দৈনিকের ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায় মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ আজও প্রকৃতির উপাসনা করেন। মেইতেই মূল নিবাসী সম্প্রদায় ভুক্ত মানুষ, যারা আজও
প্রকৃতির উপাসনা করেন। তা সত্ত্বেও তাদের জনজাতি তকমা কেড়ে
নেওয়ার চেষ্টা চলছে। বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীর দাবি মেইতেইরা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করায় তাদের জনজাতি তকমা পাওয়া উচিত নয়। অবশ্য
যারা এই দাবি করছেন তাদের বেশিরভাগই বর্তমানে খ্রিস্টান ধর্ম
গ্রহণ করেছেন। এই যুক্তিতে যেসব জনজাতির মানুষরা ধর্ম পরিবর্তন
করেছেন তারা নতুন ধর্মে সংখ্যালঘু তকমা পেলেও জনজাতি তাপমা থাকে কি করে প্রশ্ন
তুলছেন মেইতেইরা। প্রসঙ্গত ইউরোপের বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে কুকি প্রভাবিত এলাকার চার্চ ভাঙচুরের ঘটনা ফলাও করে ছাপা হয়েছে। অথচ হিন্দু ও মেইতেইদের শতশত ধর্মস্থল ধ্বংস হওয়ার
ঘটনা ছাপার প্রয়োজন মনে করেনি কেঁদে ভাসিয়ে দেওয়া বিদেশী সংবাদমাধ্যম। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মণিপুরের হিন্দু ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ। মণিপুরের
একটি পত্রিকা দাবি করেছে কিছু কিছু চার্চ উগ্র স্বজাতিদের দ্বারাই ধ্বংস হয়েছে। এমনকি নাগা ও কুকিদের মধ্যেও কিছু কিছু জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে।