নিউজ ডেস্ক: ভারী বৃষ্টিপাত আর ভূমিধসের জেরে এখনও লাল সতর্কতা জারি হিমাচলপ্রদেশে। বেড়ে চলেছে হতাহতের সংখ্যাও। ইতিমধ্যেই আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু। এই পরিপ্রেক্ষিতে উঠছে প্রশ্ন, এভাবে বারেবারে বিপর্যয়ের কবলে কেন পড়ছে হিমাচল আর উত্তরাখণ্ড? যেখানে ২০২০ সালে হিমাচলপ্রদেশে ধসের সংখ্যা ১৬, সেখানে গত ৫৫ দিনে ধসের সংখ্যা ১১৩! এই ঘনঘন বিপর্যয় কি আদতে কোনও বড়সড় বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে? এই সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক সুশান্ত কুমার সামন্ত।
বিগত মাস দুই ধরে বারে বারে ধস নামা নিয়ে সুশান্তবাবু জানান,’পার্বত্য অঞ্চলে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর। যেমন সেই অঞ্চলে কী ধরণের পাথর রয়েছে, আর পাথরে কোনও ফাটল রয়েছে কিনা। এরপর দেখতে হবে সেই অঞ্চলে জলের স্রোত কেমন। স্রোতের গতি বেশি হলে পাথরের ফাটলে আছড়ে ধীরে ধীরে তা দুর্বল করে দেয় পাথরকে। আর লক্ষ্যণীয়, কোনও পার্বত্য এলাকায় জনসংখ্যা না থাকলে সেখানে কিছু প্রাকৃতিক উপায়েই চ্যানেল তৈরি হয়ে যায়, যা দিয়ে জল বেরিয়ে যায়। কিন্তু যখন পার্বত্য অঞ্চলকে কেন্দ্র করে শহর গড়ে ওঠে, বাড়তে থাকে জনসংখ্যা, তখন আর সেই জল বেরিয়ে যেতে পারে না। পাথরের ফাটলেই জমতে থাকে। আর পাথরের প্রকৃতি অনুযায়ী ক্ষয় পাওয়া শুরু হয়।’ তাঁর আশঙ্কা, যোশীমঠ এলাকা বা হিমাচলের ধসপ্রবণ এলাকাগুলিতে এমন কোনও ঘটনা ঘটছে যাতে এই এলাকার পাথুরে ভূমিরূপ ক্ষয়ে যাচ্ছে ক্রমশ।
তবে জনসংখ্যা আর নগরায়নের জন্যই কি এই বিপর্যয়? সুশান্তবাবুর মতে, পার্বত্য অঞ্চলে এই ঘটনা খুব স্বাভাবিক। জনসংখ্যার উপর এই বিপর্যয় নির্ভর করে না। তবে এটা ঠিক, জনসংখ্যার চাপ এই বিপর্যয়কে দ্রুত তরান্বিত করেছে। ভূমিধসের প্রবণতা কি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না? এর উত্তরে তিনি জানান, একমাত্র উপায় পাথুরে এলাকাগুলিতে জল জমতে না দেওয়া। এতে হয়ত বিপর্যয় বন্ধ করা যাবে না, তবে প্রক্রিয়াটি ধীর করে দেওয়া সম্ভব। এই প্রসঙ্গেই দার্জিলিং কতটা বিপদমুক্ত তা নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন,’দার্জিলিংয়ের পাথুরে ভূমির তুলনায় যোশী মঠ কিংবা হিমাচলের পাথুরে ভূমিরূপ বেশ দুর্বল, এই কারণে হিমাচলে পার্বত্য এলাকার শক্তি দ্রুত ভারসাম্য হারাচ্ছে। সেই দিক থেকে দার্জিলিংয়ে এরকম কিছু এখনই ঘটার সম্ভাবনা না থাকলেও ভবিষ্যতে হতেই পারে, তবে তার প্রক্রিয়া হিমাচলের মতো দ্রুত হবে না।’