নিউজ ডেস্ক: লোকেশন অর্থাৎ গন্তব্যকে চিহ্নিত করতে গুগল ম্যাপ ভরসা হলেও অনেক সময়েই সঠিক স্থান নির্বাচন করতে পারে না এই সিস্টেমটি। আবার বন-জঙ্গল, খারাপ রাস্তাতেও নিয়ে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে গুগল ম্যাপের উপর। সমস্যা হলো, গুগুল ম্যাপ যে কোনও রাস্তা-ঘাট ট্র্যাক করে আমেরিকার GPS পদ্ধতির মাধ্যমে। আর আমেরিকান GPS সিস্টেম ভারতের ঘোরালো-প্যাঁচালো রাস্তাকে নির্ভুলভাবে ট্র্যাক করতে সব সময় সক্ষম হয় না। এই কারণে মনে হওয়া স্বাভাবিক, ভারতের নিজস্ব একটি ন্যাভিগেশন সিস্টেম থাকলে গন্তব্যস্থল চিহ্নিত করা সম্ভব আরও নির্ভুলভাবে। কিন্তু মজার বিষয়, ভারতে ইতিমধ্যেই রয়েছে এরকম একটি ন্যাভিগেশন সিস্টেম!
সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে ন্যাভিগেশন সিস্টেম তৈরি করা রয়েছে ভারতের, যার নাম নাবিক। গোটা দেশের চোখের মণি ISRO ডেভেলপ করেছে এই সিস্টেমকে। উল্লেখ্য, আপাতত সামরিক ক্ষেত্রে ভারতীয় সেনা শুধুমাত্র এই সিস্টেমটি ব্যবহার করে থাকে। এই কারণে সাধারণ ব্যক্তিবর্গের কাছে এখনও অজানা মেক ইন ইন্ডিয়ার এই বিশেষ উদ্যোগ সম্পর্কে। কিন্তু এবার ভারতবাসীর মোবাইল ফোনে এই অ্যাপটি বাধ্যতামূলক করতে চলেছে কেন্দ্র। সরকার নির্দেশিকা জারি করেছে, এখন থেকে ভারতের বাজারে বিক্রি হওয়া সমস্ত মোবাইল ফোনেই রাখতে হবে Nabik App। এর জন্য আলাদা সিস্টেম আনতে হবে মোবাইল চিপে। আগামী ১ থেকে দেড় বছরের মধ্যেই দেশের সব মোবাইলে ইন্সটল করা থাকবে অ্যাপটি।
কিন্তু সত্যি বলতে ভারতের নিজস্ব ন্যাভিগেশন সিস্টেমের পরিকল্পনা কিন্তু কদিন আগেকার পরিকল্পনা নয়, বরং এই ভাবনা সরকার শুরু করেছিল কার্গিল যুদ্ধের সময় থেকে। ১৯৯৯-তে ভারতে অনুপ্রবেশকারী পাক-হানাদারদের চিহ্নিত করার মতো প্রযুক্তি না থাকায় বেগ পেতে হচ্ছিল সেনা বাহিনীকে। সেই সময় ইজরায়েলের সহায়তায় পাক ঘাঁটিগুলি ওড়াতে সক্ষম হয়েছিল ভারতীয় সেনা। যুদ্ধের পর থেকেই সরকার প্রয়োজন অনুভব করে দেশের নিজস্ব একটি লোকেশন ন্যাভিগেশন সিস্টেমের।
আঞ্চলিকভাবে দেশের রাস্তাঘাটকে নির্ভুলভাবে লোকেট করার উদ্দেশ্যে ISRO তৈরি করে এই Navic অ্যাপ, যার পুরো নাম- Navigation with Indian Constellation। দেশের নিজস্ব ৮ টি উপগ্রহের মাধ্যমে কাজ করে থাকে এই সিস্টেমটি। ভারত এবং দেশের আশেপাশে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার এলাকাকে নির্ভুলভাবে ট্র্যাক করতে সক্ষম এই সিস্টেমটি। আমেরিকার GPS-এর তুলনায় অধিক নির্ভুলভাবে স্থান চিহ্নিত করতে পারে navic। GPS যেখানে লক্ষ্যকে চিহ্নিত করে ২০-২৫ মিটারের মধ্যে, সেখানে navic তার লক্ষ্যকে চিহ্নিত করে ৫ মিটাররে মধ্যেই। ২০১৮ সালে ভারতে চালু হয় এই সিস্টেমটি।