নিউজ ডেস্ক:
বৈবাহিক জীবনে বিবাহ বার্ষিকী খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন। হালফিলের সময়ে স্বামী স্ত্রী অপরকে নানান ধরনের উপহার দিয়ে এই দিনটি উদযাপন করে থাকেন। কিন্তু বীরভূমের একজন তৃণমূল নেতা
স্ত্রীকে এমন উপহার দিলেন বলে অভিযোগ যাতে বেকায়দায় পড়েছেন
ওই দম্পতি। তথাকথিত সেই উপহার হাতে স্ত্রীর ছবি মুহূর্তের মধ্যে
ভাইরাল হল সোশ্যাল মিডিয়ায়। একই সঙ্গে তৈরি হল বিতর্ক।
জন্মদিনে স্ত্রীকে একে ৪৭ রাইফেল উপহার দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল
কংগ্রেসের রামপুরহাট
ব্লকের সংখ্যালঘু সেলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি
রিয়াজুল হকের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি রিয়াজুল হকের স্ত্রী সাবিনা
নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি রাইফেল হাতে ছবি
পোস্ট করেন। ঝড়ের গতিতে সেই ছবি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে। বিতর্ক তৈরি হচ্ছে দেখে সাবিনা ইয়াসমিন ইতিমধ্যেই
ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ডিলিট করে দিয়েছেন।
রিয়াজুল হকের বক্তব্য, “আমার মামা শ্রীনগরে সিআরপিএফে চাকরি করেন। গতবছর সেখানে ঘুরতে গিয়ে আমি,
স্ত্রী ও ছেলে মামার আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে ছবি তুলি। এদিন বিবাহ
বার্ষিকীতে বিভিন্ন ছবি ফেসবুকে দেওয়ার সময় এই ছবিটি পোষ্ট হয়ে যায়। পরে তুলেও
নিই”। তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন,
“ওটা এ কে ৪৭ এর আদলে খেলনা। এটাকে নিয়ে বিরোধীরা রাজনীতি করার
চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনও লাভ হবে না”।
নিজের প্রাপ্তবয়স্ক
স্ত্রীকে খেলনা রাইফেল উপহার দিয়েছেন তৃণমূল নেতা এই যুক্তি হাস্যকর বলে দাবি গেরুয়া
শিবিরের। স্থানীয় বিজেপি নেতা ধ্রুব সাহা বলেন, “বাংলায় তালিবানি শাসন কায়েম করার চক্রান্ত
চলছে। কিভাবে রিয়াজুল বন্দুক পেল তা পুলিশের খতিয়ে দেখা উচিত। এই
নেতা লোক দেখানো দল থেকে পদত্যাগ করে জেহাদি বাহিনী তৈরি করতে চাইছে।”
সোমবার সাবিনা এবং রিয়াজুলের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী ছিল। এ কে ৪৭ হাতে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি রিয়াজুল হকের
স্ত্রীর নিজের ফেসবুক পেজে সেই ছবি পোস্ট করেন। ঝড়ের গতিতে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সরব হতেই তড়িঘড়ি সেই পোস্ট তুলে নেন বগটুই গ্রামের
বাসিন্দা রিয়াজুলের স্ত্রী। ২১ মার্চ বগটুই গণহত্যার
বর্ষপূর্তি ছিল। শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠানের দিন এলাকার বিধায়ক তথা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে
বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেন স্বজনহারা পরিবারের সদস্যরা। তৃণমূলের অনুষ্ঠানেও পরিবারের
অধিকাংশ সদস্য অনুপস্থিত থেকেছে। অথচ, ওইদিন বিধানসভার
বিরোধী দলনেতার অনুষ্ঠানে স্বজনহারা মিহিলাল শেখ সহ বাকি সকলেই উপস্থিত হয়েছিলেন।
২৪ মার্চ বীরভূমের দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় শোনা যায়
আক্ষেপের সুর। পরে ব্লক সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মির পাশাপাশি নানুরের কাজল শেখকে
বগটুই গ্রামের বিশেষ দায়িত্ব দেন দলনেত্রী। এরপরই ২৭ মার্চ বগটুই গ্রামের তৃণমূল কর্মী রিয়াজুল
হককে সংখ্যালঘু সেলের ব্লক সভাপতি করার কথা ঘোষণা করেন বিধায়ক আশিস
বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে দলের অন্দরেই রিয়াজুলের যোগ্যতা নিয়ে সমালোচনা শুরু
করে দেয় দলের একাংশ। কোর কমিটির বৈঠকেও এই নিয়ে আলোচনা হয়। পরে অবশ্য কোর
কমিটিও অনুমোদন করে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করে রিয়াজুল। এরই মধ্যে গত ৫ মে
হঠাৎই পদ ও দল থেকে ইস্তফা দেন রিয়াজুল। সূত্রের খবর রিয়াজুলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে
প্রশ্ন তুলে শীর্ষ নেতৃত্বকে জানান দলেরই কেউ। রাজ্য থেকে নির্দেশ পেয়ে জেলা কোর কমিটি অভিযোগ যাচাই করে দেখেন।
তারপরই তাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই মধ্যে মঙ্গলবার সকালে নিজের
ফেসবুক পেজে এ কে ৪৭ হাতে নিজের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের ছবি পোস্ট করেন।