রাতারাতি খালি হয়ে যায় রাজস্থানের এই গ্রাম! আড়াইশো বছর ধরে জনশূন্য গ্রামটিতে আজও প্রবেশ করলেই নাকি অনুভব করা যায় অতৃপ্ত আত্মাদের গভীর দীর্ঘশ্বাস! রাতে মাঝে মধ্যেই কান পাতলে শোনা যায় বাচ্চাদের কান্না কিংবা মহিলাদের খিলখিলে হাসি। কী সেই কারণ, যাতে রাতারাতি গ্রাম খালি করে চলে যেতে হয় প্রজাদের?
নিউজ ডেস্ক: ভূত নিয়ে আমাদের দেশে জল্পনা-কল্পনার নেই কোনও আদি-অন্ত। এই বিষয় নিয়ে বিশেষ উৎসাহ দেখা যায় আমাদের বাঙালিদের মধ্যে। বিশ্বাস করুক আর না করুক, ভূত নিয়ে আড্ডা জমাতে পিছপা হয় না বাঙালি মানস। তবে ভূত নিয়ে নয়, আজ জেনে নেওয়া যাক ভারতের একটি বিশেষ ভৌতিক স্থান সম্পর্কে, যার সঙ্গে শুধুমাত্র ভৌতিক কাহিনী জড়িত নয়, পাশাপাশি জড়িয়ে ইতিহাস ও কিংবদন্তী!
ভারতের দ্বিতীয় ভৌতিক স্থান রাজস্থানের কুলধারা। খোদ রাজস্থান সরকারের তত্ত্বাবধানে গ্রামটিকে ঘিরে দেওয়া হয়েছে পুরু পাঁচিল তুলে। টিকিট কেটে ঘুরতে গেলেও সূর্য ডোবার আগেই নিরাপত্তারক্ষীরা বের করে দেয় ভ্রমণার্থীদের, এমনকি সেখানে রাতে থাকার অনুমতি নেই কোনও রক্ষীরও! শুটিংয়ের জন্য গ্রামটি ব্যবহার করতে দেওয়া হলেও সঙ্গে রাখতে হয় আঁটোসাটো নিরাপত্তা। কুলধারায় বেড়াতে যাওয়া সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্লগাররা অনেকেই ব্যক্ত করেছেন তাঁদের সঙ্গে ঘটা বিভিন্ন অলৌকিক অভিজ্ঞতা। কেউ ঘাড়ের কাছে অকারণেই পেয়েছনে গরম নিশ্বাস, কেউ বা পরিত্যক্ত ঝুপড়ির মধ্যে অনুভব করেছেন অস্বস্তি, আবার কেউ বা গাড়িতে পেয়েছেন বাচ্চার হাতের ছাপ।
এবার জেনে নেওয়া যাক কুলধারা গ্রামের নেপথ্যে থাকা কাহিনী। ঐতিহাসিকদের মতে, মোটামুটি ১২৯১ সাল নাগাদ রাজস্থানের ৮৪ টি গ্রাম থেকে প্রায় ৬০০ ঘর পালিওয়াল ব্রাহ্মণ এসে গ্রাম তৈরি করে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন সেখানে। প্রায় ৫০০ বছর ধরে সুখে-শান্তিতে থাকার পরও রাতারাতি গ্রাম ফাঁকা করে চলে যান গ্রামবাসীরা। ঐতিহাসিক মত, এর পিছনে ছিল মাত্র একজন লোকের হাত– জয়সলমীরের দেওয়ান সালেম সিং। সালেম সিং ছিল প্রবল অত্যাচারী, ধূর্ত। এক সময় তাঁর নজর গ্রাম প্রধান(মতান্তরে পুরোহিত)-এর মেয়ের উপর পড়ে। তিনি মেয়েটির উপর প্রলুব্ধ হয়ে তাঁকে পাওয়ার বাসনা জানান। কিন্তু অত্যাচারী সালেম সিংয়ের হাতে মেয়েকে ছাড়তে চান নি গ্রাম প্রধান। গোটা গ্রাম এক হয়ে জানায় প্রতিবাদ। এরপর সালেম সিং একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে গ্রামবাসীদের হুঁশিয়ারি দেন, সেই সময়ের মধ্যে মেয়েটিকে তাঁর মহলে পাঠানো না হলে তিনি তাঁর সৈন্য দিয়ে গোটা গ্রামের দখল নিয়ে সকলকে হত্যা করবেন।
সালেম সিংয়ের বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলার ক্ষমতা ছিল না গ্রামের। এদিকে গ্রামের মেয়ের ইজ্জত তাঁদের কাছে সবচেয়ে আগে। এই অবস্থায় খুব চুপিসারে রাতারাতি গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন গ্রামবাসীরা। যাওয়ার আগে তাঁরা শাপ দিয়ে যান, সেদিনের পড় থেকে কোনওদিন কেউ কুলধারায় গড়ে তুলতে পারবে না বসতি, এতে ক্ষতি হবে তাদের। পড়ে সালেম সিংয়ের সৈন্যরা দখল করতে এসে সমগ্র গ্রাম ফাঁকা দেখে সেখানে বসতি গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও সফল হয় না। এরপরেও অনেকেই বিভিন্ন সময়ে সেখানে বসবাস করতে গেলেও আর ফিরে আসতে পারে নি কোনওদিন। ২০১৩ সালে ইন্ডিয়ান প্যারানর্মাল সোসাইটি কুলধারায় তদন্ত করতে গিয়ে গ্রামটিতে অলৌকিক কিছু রয়েছে বলে স্বীকার করে নেয়। আপনার মতে কি কুলধারা সত্যিই ভূতুড়ে গ্রাম, নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও রহস্য?