নিউজ ডেস্ক: ১১ সেপ্টেম্বর ১৮৫৩। আমেরিকার শিকাগোতে বসেছে আন্তর্জাতিক ধর্ম মহাসম্মেলন। দেশ-বিদেশ থেকে সেই অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন বিভিন্ন ধর্ম-সম্প্রদায়কে বিশ্বে তুলে ধরতে প্রয়াসী প্রতিনিধিগণ। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন প্রায় ৯০০ বছর ধরে পরাধীন, দারিদ্রতার অন্ধকারে ন্যুব্জ ভারতবর্ষ থেকে আসা গেরুয়াবসন পরিহিত জনৈক যুব সন্ন্যাসী। সন্ন্যাসীর বেশভূষা মলিন, কিন্তু তাঁর উজ্জ্বল দুই চোখ থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে জাতীয়তাবোধের অহংকার এবং দীপ্ত জ্ঞান। অন্যান্য প্রতিনিধিদের পাশে এক কোণে আসন গ্রহণ করেছেন তিনিও। তাঁর বেশভূষা দেখে হাসিঠাট্টা করছেন অনেকেই।
মজার কথা, ধর্ম মহাসম্মেলন হলেও আয়োজকদের মূল উদ্দেশ্য ছিল উপস্থিত সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সামনে খ্রিস্টান ধর্মের জয় গান করা। অন্যান্য প্রতিনিধিরা তাঁদের বক্তৃতায় স্ব স্ব ধর্ম-সম্প্রদায়ের মহিমা মণ্ডনের অধিক অন্য ধর্ম-সম্প্রদায়কে খাটো করে দেখাতে বেশি উৎসাহী! এরপর যখন ভারতীয় সন্ন্যাসীর সুযোগ আসে, ততক্ষণে বিরক্ত হয়ে প্রেক্ষা গৃহ ছাড়তে শুরু করেছেন অধিকাংশ দর্শক। ঠিক সেই সময়ে যুব সন্ন্যাসীর বজ্র কণ্ঠে ধ্বনিত হলো- ‘আমেরিকার প্রিয় ভগিনী এবং ভ্রাতাগণ!’ একেবারে অচেনা সম্ভাষণ, অপ্রত্যাশিত! মুহূর্তে ফিরে তাকালেন দর্শকেরা। ফেটে পড়লেন হাততালিতে। সম্বোধনেই জয় করে নিলেন তিনি দর্শকদের মন। এরপর দৃপ্ত কণ্ঠে তিনি পৃথিবীর বুকে বিজয়ধ্বজা ওড়ালেন সনাতন হিন্দু ধর্মের। হ্যাঁ, পরাধীন, আধভুখা ভারতবাসীর নুয়ে পড়া মাথাকে তিনি উঁচিয়ে ধরে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন পাশ্চাত্যের অহংকারকে। তিনি স্বামী বিবেকানন্দ, ভারতবর্ষের ঘনীভূত রূপ!
গর্বিত স্বরে বিবেকানন্দ শুরু করেন- পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন সন্ন্যাসী সমাজের পক্ষ থেকে আমি ধন্যবাদ জানাই সকলকে। তিনি সনাতন হিন্দু ধর্মকে সকল ধর্ম-মতামতের প্রসূতি-স্বরূপ বলে প্রকাশ করেন। স্বামীজী সেদিন অন্য কোনও ধর্ম বা মতের সমালোচনা না করেই জগৎ সভায় তুলে ধরেন হিন্দু ধর্মের সর্বাঙ্গীণ আদর্শকে। ‘আমরা কেবলমাত্র সকল ধর্ম বা মতকে সহ্যই করি না, তাদের সত্য বলে বিশ্বাসও করি।’ Exclusion’ শব্দটি আমাদের অভিধানে অনুবাদ করা যায় না। সেদিন বিশ্ব জেনেছিল ধর্ম আর Religion এক নয়। ধর্মের কোনও ইংরেজি ভার্সন নেই। আর বিশ্বকে শান্তি-মৈত্রী-সাম্যের পাঠ পড়াতে সক্ষম কোনও religion নয়, ভারতভূমি থেকে উদ্ভূত– সনাতন হিন্দু ধর্ম।