নিউজ ডেস্ক: ভারতের সঙ্গে চরম সংঘাতে কানাডা। বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নির্জ্জরের হত্যার দায় ভারতের উপর চাপিয়ে ইতিমধ্যেই ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে ওই দেশ। তার উপর কানাডার সংসদে ভারতের বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। কানাডার মাটিতে এই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে ভারতবিরোধী কার্যকলাপ চালালেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি দেশটির সরকার। বরং ট্রুডো গণতান্ত্রিক অধিকারের দোহাই দিয়ে বারেবারে আড়াল করে চলেছেন এই ভারত-বিরোধীদের। প্রশ্ন উঠছে, একজন বিচ্ছিন্নতাবাদীর জন্য ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে কেন উঠে পড়ে লেগেছে কানাডা?
তথ্য বলছে, জনসংখ্যার বিচারে ভারত বাদ দিলে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম শিখ জনগোষ্ঠীর বসবাস কানাডায়। দেশটিতে যেখানে প্রবাসী ভারতীয়র সংখ্যা ২৪ লক্ষ, তার মধ্যে ৮ লক্ষই শিখ। আর এই শিখ জনগোষ্ঠী কানাডার মোট জনসংখ্যার প্রায় ২%। বস্তুত, এই শিখ জনগোষ্ঠীর ভোটই নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে বহু এলাকায়। অর্থাৎ শিখ গোষ্ঠীকে ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহৃত করে ক্ষমতায় থাকা লিবারেল পার্টি অফ কানাডা।
এবার প্রশ্ন জাগছে, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এই অন্ধ সমর্থন করার প্রয়োজনীয়তাটা কোথায়? বিষয় হল, কানাডার ক্ষমতায় থাকা ট্রুডোর পার্টি ‘লিবারেল পার্টি অফ কানাডা’ একক সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ট্রুডোকে সমর্থন দেয় নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। আর এই পার্টির প্রধান হলেন কানাডার শিখ রাজনৈতিক নেতা জগমিত সিং। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রকাশ্য সমর্থক হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তির ভিসা বাতিল করেছিল ভারত সরকার। কিন্তু ভারতবিরোধী জগমিতের ১৮ জন সাংসদের সমর্থনের সাহায্যেই কানাডায় সরকার টিকিয়ে রেখেছেন ট্রুডো। এই বিষয় থেকেই পরিষ্কার কানাডা সরকারের ভারত বিরোধিতার আসল কারণ সেই দেশের শিখ ভোটব্যাঙ্ক।
উল্লেখ্য, কানাডায় বসবাসকারী ভারতবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যে সেই দেশের নিরাপত্তার জন্যও ক্ষতিকারক তা এক সময় সরকারিভাবে মেনেও নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে কানাডার তৎকালীন জন-নিরাপত্তা মন্ত্রী রেলফ গুডেল মন্তব্য করেন, ‘কানাডার মাটি বিচ্ছিন্নতাপন্থীদের হাত থেকে সুরক্ষিত নয়’। পরে রাজনৈতিক চাপে সেই মন্তব্যে করা হয়েছিল কাটছাঁট। রাজনৈতিক স্বার্থে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষ নিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে উদ্যত আজ কানাডা। কিন্তু ভারতের ক্ষতি করতে জ্বালানো আগুনে নিজের ঘরই পুড়িয়ে ফেলছে না তো কানাডা? এই প্রশ্নের উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ।