নিউজ ডেস্ক:
১৮২৯ সালে ৪ ডিসেম্বর রাজা রামমোহন রায়ের আন্দোলনে সতীদাহ
প্রথা আইনত নিষিদ্ধ হলেও, বিধবাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কার্যকরী
ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ১৮৫৪
সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রথম বিধবা বিবাহের পক্ষে প্রবন্ধ লেখেন তিনি।
১৮৫৫ সালে পরাশর সংহিতা থেকে উদ্ধৃতি তুলে বিধবা বিবাহ শাস্ত্রসম্মত
ব্যক্ত করেন এক পুস্তিকাতে। তবে তৎকালীন সমাজের অনেক বিদ্বজন তা মেনে নিতে
পারেননি। শোভাবাজার রাজবাড়ীর রাধাকান্ত দেব ও তার ধর্মসভা বিদ্যাসাগরের এই
পুস্তিকার বিরুদ্ধে ৩০ টি পুস্তিকা প্রকাশ করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র এই বিরোধ নিয়ে লিখলেন, “বাঁধিয়াছে
দলাদলি/ লাগিয়েছে গোল। বিধবার বিয়ে হবে/ বাজিয়াছে ঢোল।” তিনি বিধবা বিবাহর পক্ষে ৯৮৭ জনের স্বাক্ষর সম্বলিত এক আবেদনপত্র জমা করলেন
ভারতীয় আইন সভায়। এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে রাধাকান্ত দেব ৩৬,৭৬৩ জনের স্বাক্ষর জমা করেন সরকারি
মহলে। সে সময় শান্তিপুরের দীন দরিদ্র তাঁত শিল্পীরা বিদ্যাসাগর মহাশয়ের
স্বপক্ষে এবং তাকে শ্রদ্ধা জানাতে তাঁত কাপড়ের পাড়ে সুতো দিয়ে বুনন এর মাধ্যমে
ফুটিয়ে তুললেন লেখা, “সুখে থাকুক বিদ্যাসাগর চিরজীবী
হয়ে। সদরে করেছে রিপোর্ট, হবে বিধবাদের
বিয়ে।” যদিও শেষমেষ, সত্যের কাছে হার মানে সংখ্যা।
বিদ্যাসাগরের আন্দোলনে বড়লাট ক্যানিং ১৮৫৬ সালের ২৬ শে জুলাই বিধবা বিবাহ
আইনসিদ্ধ করেন। সেই তাঁত শাড়ি কাপড়ের পাড়, আজও সংরক্ষিত
রয়েছে শান্তিপুর পাবলিক লাইব্রেরীর সংরক্ষণ গৃহে।
প্রায় ১৬৭ বছর
বাদে, শান্তিপুরের হস্ত চালিত শিল্পীদের
নিয়ে গড়ে ওঠা শিপকো নামের সংস্থা সেই পুরনো স্মৃতিকে মানুষের কাছে ত্বরান্বিত
করতে নিল এক অভিনব উদ্যোগ। বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে বিদ্যাসাগরের মহান উদ্যোগ বিধবা
বিবাহকে সমর্থন জানাতে শাড়িতে সেই লেখা “সুখে থাকুক বিদ্যাসাগর চিরজীবী হয়ে“। এবার তারা ফুটিয়ে তুলছেন পুনরায়। তবে এবার শাড়িতে নয় সেই
লেখা জ্যাকার্ড মেশিনের সাহায্যে তারা ফুটিয়ে তুলছেন হস্ত চালিত তাঁত শিল্পীদের
তৈরি করা ধুতি এবং উত্তরীয়র মধ্যে। এই লেখার রং সম্পূর্ণরূপে ভেষজ উপাদান দিয়ে
তৈরি। হরিতকী ও খয়েরের সংমিশ্রণে এই রং তৈরি করা হয়।
এছাড়াও সম্পূর্ণ সুতির এবং খাদির কাপড় দিয়েই তৈরি করা হয়েছে এই ধুতি এবং
উত্তরীয়।
প্রধান উদ্যোগী
সুমন শী আজ থেকে বেশ কয়েক মাস আগে,
উদ্যোগ নিয়েছিলেন গৌরবান্বিত ইতিহাস ফিরিয়ে আনতে। তিনি বলেন,
“এই সমগ্র কাজটি করেছেন শান্তিপুরের একাধিক শিল্পী। তার মধ্যে
অন্যতম কলকাতা গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের টেক্সটাইল ডিজাইনার সৌরভ সাহা এবং তাঁত
বিশেষজ্ঞ রতন বিশ্বাস, অজয় দেবনাথ, বাপ্পাদিত্য
খাঁ, সুরজিৎ খাঁ আরও অনেকে। আপাতত ৫০ পিস করে ধুতি এবং
উত্তরীয় বানানো হয়েছে বলে জানা যায়। এই ধুতি এবং উত্তরীয় সাধারণ মানুষের কাছে
সহজেই পৌঁছে দেওয়ার জন্য এর দামও রাখা হয়েছে সাধ্যের মধ্যেই। ধুতির দাম ধার্য
করা হয়েছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে, উত্তরীয় দাম ধার্য
করা হয়েছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে। এই সমস্ত ধুতি ও উত্তরীয় গুলি সকলেই কিনতে
পারবেন শান্তিপুর হ্যান্ডলুম ইনোভেশন প্রোডিউসার কোম্পানি লিমিটেডের অধীনে।