নিউজ ডেস্ক: ফের নক্ষত্র পতন বাংলা ছবির দুনিয়ায়। প্রয়াত হলেন সত্যজিৎ রায়ের চিত্রগ্রাহক সৌমেন্দু রায়। মৃত্যুর সময় বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। অনেকদিন ধরেই ভুগছিলেন বার্ধক্যজনিত সমস্যায়। বুধবার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে নিজ বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সিনেম্যাটোগ্রাফার হিসেবে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করেছিলেন বহুদিন ধরেই। শুধুমাত্র সত্যজিৎ রায়ই নয়, বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে একাধিক তাবড় তাবড় পরিচালকের সঙ্গেও কাজ করেছিলেন তিনি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য তরুণ মজুমদার, তপন সিংহ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, রাজা সেন প্রমুখ। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলা চলচ্চিত্র জগত।
১৯৩২ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সৌমেন্দু রায়। আরকিছুদিন বাদেই আসছে তাঁর জন্মদিন। তার আগেই চিরঘুমে নিদ্রা গেলেন তিনি। ১৯৫৪ সালে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় তাঁর। একসঙ্গে কাজ করেছিলেন সত্যজিতের প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী’তে। সেই সময় সুব্রত মিত্রের সহকারী ছিলেন সৌমেন্দু। তবে পথের পাঁচালির পরেই সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে সিনেম্যাটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছিলেন আরো ১৫টি সিনেমায়। ১৯৬১ সালে তিন কন্যা ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি ও ছবির হাত ধরে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। বিভিন্ন ছবির জন্য পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার-সহ বহু সম্মানও।
জানা গিয়েছে যে, ২০১৪ সাল থেকেই অস্টিওআর্থারাইটিসে ভুগছেন তিনি। প্রথম প্রথম চলাফেরা করার ক্ষমতা থাকলেও ধীরে ধীরে পুরোপুরি শয্যাশায়ী হয়ে যান তিনি। তবে বিগত কয়েকদিন ধরেই কথা বলাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। যদিও মস্তিস্ক সচল ছিল। অসুখের প্রভাবে গুটিয়ে ছোট হয়ে গিয়েছিল শরীরও। একপ্রকার জীবন্মৃত অবস্থায় বেঁচে ছিলেন তিনি। বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
দীর্ঘদিন রূপকলা কেন্দ্রের সিনেম্য়াটোগ্রাফি বিভাগের প্রধান ছিলেন সৌমেন্দু রায়। দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধর কাজ করেছিলেন তিনি। সত্যজিৎ রায় সহ অন্যান্য পরিচালকের সঙ্গে কাজের সময়কার খুঁটিনাটি তথ্য সংবলিত ডায়েরি, কয়েকটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের কপি, শুটিং স্টিলের ডিজিটাল কপি তিনি ‘জীবনস্মৃতি’ নামের একটি সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে যাতে তা গবেষকদের কাজে লাগে সেই কথা মাথায় রেখেই এই কাজ করেন তিনি। ‘সৌমেন্দু রায়’ নামক এক তথ্যচিত্রও রয়েছে তাঁর উপর। ২০০৭ সালে ৭২ মিনিটের ওই তথ্যচিত্র নির্মান করেছিলেন অরিন্দম সাহা সরদার।