নিউজ ডেস্ক: ২০ ঘণ্টা তল্লাশি শেষে রাত দেড়টার সময় খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়ি থেকে বের হন ইডি আধিকারিকরা। বেরোনোর সময় তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কর্মীরা। কটুক্তি ও ধিক্কার স্লোগান দেওয়া হয়। তার আগে অবশ্য এক বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিক উপর চড়াও হয় স্থানীয় এক কাউন্সিলর ও তার অনুগামীরা।
কিন্ত ২০ ঘন্টার তল্লাশি শেষে ইডি পেল টা কী? সূত্রের খবর মধ্যমগ্রাম পুরসভার পুরপ্রধান থাকাকালীন ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অয়ন শীলের সংস্থা মারফত ৮০ জনের চাকরি হয় মধ্যমগ্রাম পুরসভায়। এরা সকলেই অয়ন শীলকে বিপুল অংকের ঘুষ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। কাদের ইশারায় চাকরি হয়েছে সে ব্যাপারে ইঙ্গিত পেয়েছেন তদন্তকারীরা। রথীন ঘোষের ২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলেছে। সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল টাকার লেনদেন হয়েছে। সেই লেনদেন উদ্দেশ্য কী ছিল তা খতিয়ে দেখছে ইডি। খাদ্যমন্ত্রীর বাড়ি ও তার দুটি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে ইডি।
এদিন ইডি আধিকারিকরা মন্ত্রীর বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তাঁদের ঘিরে স্লোগান দেওয়া হয়। পরে মন্ত্রী নিজে বেরিয়ে এসে সমর্থকদের শান্ত হতে বলেন। ততক্ষণে অবশ্য ইডি আধিকারিকরা রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন ঘটনাস্থল থেকে। পুলিশের সামনেই ইডি আধিকারিকদের ঘিরে স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি কটুক্তি করা হয়। ইডি আধিকারিকদের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টায় ক্ষুব্ধ রাজ্যের বিরোধীরা। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য সল্টলেকে বলেন, “ তৃণমূল তদন্তে বাধা দেওয়ার যথাসম্ভব চেষ্টা করছে। দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে মা মাটি সরকারের উঁচু থেকে নীচুতলার বহুসংখ্যক সততার ঝান্ডা নিয়ে ঘুরে বেরানো কর্মীরা। মন্ত্রী থেকে কাউন্সিলর সকলের লুটের বাজারে চেটেপুটে খাচ্ছে”।
বৃহস্পতিবার রাত দেড়টোয় ইডির দল তাঁর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রথীন বলেন, “ইডি আধিকারিকেরা আমার সঙ্গে কোনও খারাপ ব্যবহার করেননি। তবে পুরসভায় নিয়োগ নিয়ে তাঁদের ধারণায় অনেক গন্ডগোল আছে।” তিনি নিজে একটি বই দিয়ে ইডির তদন্তে সহযোগিতা করেছেন বলে দাবি রথীনের। তিনি আরও বলেন, “সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই তল্লাশি। আমাকে হেনস্থা করতেই বাড়িতে এসেছিলেন ইডি আধিকারিকেরা।” নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও নথি তাঁর বাড়ি থেকে পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার সকাল ছটা নাগাদ রথীন ঘোষের মধ্যমগ্রামের মাইকেল নগরের বাড়িতে হানা দেয় ইডি আধিকারিকরা এদিনের হানার উদ্দেশ্য ছিল ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত নথি ও তথ্য সংগ্রহ করা। বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ ইডি আধিকারিকদের মন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। তাদের প্রশ্ন করা হয় মন্ত্রী তদন্তের সহযোগিতা করছেন কি না। এক ইডি আধিকারিক ঘাড় নেড়ে উত্তর দেন, “হ্যাঁ করছেন”। তবে এক্ষেত্রে প্রশ্ন অভিযুক্তরা ঘটনাক্রম সামনে আসার পর থেকেই বাইরে রয়েছেন। অয়ন শীলের বাড়ি থেকে ওএমআর শিট উদ্ধার হয়েছে ৬ মাস হতে যায়। এতদিন কি তথ্য-প্রমাণ গুছিয়ে বাড়িতে রেখে দিয়েছেন অভিযুক্তরা। এক্ষত্রে আদালত আগেই তদন্তকারী সংস্থার কচ্ছপ গতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। আদালতের সন্দেহ অভিযুক্তরা তথ্যের একটা বড় অংশ নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করে থাকতে পারে। আদালতের ধমক খেয়ে ফের ময়দানে নামে ইডি। সূত্রের খবর পুরনিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শীলের সংস্থা এবিএস ইনফোজেনের অফিস থেকে বাজেয়াপ্ত করা বিভিন্ন নথিতে রথীন ঘোষের নামের বার বার উল্লেখ রয়েছে। এমনকি রথীন ঘোষের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেশ কয়েকটি সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। এই টাকা কাদের কাছে কিভাবে পৌঁছেছে তা খতিয়ে দেখায় এজন্য তদন্তের উদ্দেশ্য ছিল বলে দাবি ইডি সূত্রের।