নিউজ ডেস্ক: ক্ষমতাসীন হয়েই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগকে নিজের রাজনৈতিক কৌশল
করে তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক দশক ধরে বাঙালিকে শুনতে
হচ্ছে করের টাকা রাজ্য থেকে নিয়ে গেলেও পশ্চিমবঙ্গকে থাকতে হচ্ছে
ফাঁকা হাতেই। অথচ রাজ্যের আর্থিক নথিতেই স্পষ্ট, বিগত কয়েক বছরে রাজ্যের নিজস্ব কর আদায় যা হয়েছে, তার
থেকে শতাধিক শতাংশ বেশি এসেছে কেন্দ্রের বরাদ্দ। তাঁদের মতে, শিল্পে ততটা এগোতে না পারায় কর আদায় প্রয়োজনের তুলনায় কম হচ্ছে।
রাজ্যের
নিজস্ব বাজেট তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ আর্থিক বছর থেকে ২০২২-২৩
পর্যন্ত রাজ্যের নিজস্ব আয়ের তুলনায় কেন্দ্রীয় তহবিল উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১৮-১৯ আর্থিক
বছরে যা ছিল ১২৭%। ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে পৌঁছেছে ১৩৯%-এ। মাঝে ২০২১-২২
অর্থবর্ষে সেই হার ছিল ১৪৫%। অর্থাৎ, রাজ্যের নিজস্ব আয়ের ক্ষেত্রগুলির
সম্মিলিত অঙ্কের তুলনায় বেশি ছিল কেন্দ্রের থেকে আসা অর্থের পরিমাণ (সবিস্তার
সারণিতে)। আবার জিএসটি-র তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ আর্থিক
বছরে এ রাজ্যের জিএসটি-অবদান ছিল ৪.৩৯%। সেখানে
মহারাষ্ট্র, কর্নাটক,
গুজরাত এমনকি, তামিলনাড়ুর মত রাজ্যে তা ছিল তুলনায় অনেকটাই বেশি। অথচ কেন্দ্রীয় করের যে ভাগ (ডেভলিউশন) এ রাজ্য
পেয়েছে, তা ৭.৫২% যা পিছনে ফেলেছে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে।
ফলে নথি অনুসারে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ শুধুমাত্র রাজনৈতিক মঞ্চের ভাষণের
কৌশল মাত্র তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আর্থিক
বিশেষজ্ঞদের মতে ট্যাক্স রেভিনিউএবং নন-ট্যাক্স
রেভিনিউ এই দু’টিকে রাজ্যের নিজস্ব আয়ের মধ্যে ধরা হয়। নিজস্ব আয় ছাড়াও থাকে
কেন্দ্রের থেকে পাওয়া কর ও অনুদান (গ্রান্ট-ইন এড)। মজবুত অর্থনীতির স্বার্থে এই
দু’য়ের মধ্যে ভারসাম্য থাকাটা জরুরি। আবার কোনও রাজ্যের শিল্প বা উৎপাদন ক্ষেত্রের
অগ্রগতিও অনেকাংশে বোঝা যায় রাজ্যের নিজস্ব আয়ের ছবি দেখে। ফলে শিল্প সম্মেলনের
মঞ্চ থেকে পাওয়া বিনিয়োগ-প্রতিশ্রুতির নয় জরুরী তা কার্যকর
হওয়া। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের থেকে রাজস্ব ঘাটতি বাবদ অনুদান বাকি রাজ্যগুলির তুলনায়
সবচেয়ে বেশি পাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ, ৪০,১১৫
কোটি টাকা। আর্থিক
পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, সামগ্রিক ভাবে উৎপাদন
ক্ষেত্রকে আরও মজবুত করা না গেলে নিজস্ব আয় বাড়ানোর পথ অপ্রশস্তই থেকে যেতে পারে।
তাতে আগামী দিনে কেন্দ্র-নির্ভরতা থেকেই যাবে।