নিউজ ডেস্ক: সাল তখন ১৭৬০। পলাশীর যুদ্ধের মাত্র তিন বছর পেরিয়েছে। সেই সময় কলকাতার বুকে গড়ে উঠল এক কালী মন্দির। সতীপীঠ হিসেবে কালীঘাটের পরিচিতি থাকলেও এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কলকাতার বিখ্যাত এক জমিদার বাড়ির ইতিহাস। টালিগঞ্জের করুণাময়ী কালী মন্দির। ১৭৬০ সালের বৈশাখ মাসের শেষ শনিবার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে স্বমহিমায় এখানে পুজিতা হয়ে আসছেন মা করুণাময়ী। এ বছর ২৬৪ তম বর্ষে পা দিল এই মন্দির।
কলকাতার ইতিহাসের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে সাবর্ণ রায়চৌধুরির জমিদারির নাম। রায়চৌধুরি পরিবারের ২৭তম পুরুষ নন্দদুলাল রায়চৌধুরি। তিন পুত্রের পর অনেক আশা করে পেয়েছিলেন এক কন্যা। কালী মায়ের কৃপায় কন্যা সন্তান জন্মালে মেয়ের নাম রাখেন করুণা। তবে ভাগ্যের পরিহাসে মাত্র সাত বছর বয়সে অকাল প্রয়াণ হয় তাঁর। মেয়ের মৃত্যুর শোকে কাতর হয়ে নন্দদুলাল সিদ্ধান্ত নেন সন্ন্যাস নেবেন তিনি। আর তার পরেই স্বপ্নাদেশ পান মা কালীর।
সাত বছরের মেয়ে হিসেবেই মায়ের পুজো হয় এখানে। ঠিক জন্মদিনে যেমন মেয়েকে আদর করে পাত সাজিয়ে দেওয়া হয় এখানেও ঠিক তেমন ভাবেই লুচি, পোলাও, ভাত, নিরামিষ তরকারি, ফল মিস্টি দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়ে থাকে। বিশেষ তিথিতে জনসমাগম হয় এখানে। এমনকি পুলিশের সাহায্যে ভিড় নিয়ন্ত্রন করতে হয় মন্দির চত্বরে।
তবে শুধুমাত্র মন্দিরে পুজোই নয় আরো সামাজিক কাজ হয়ে থাকে মন্দিরের তরফে। শ্রীরামকৃষ্ণের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আশ্রমে বাচ্চাদের লালনপালন, দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে টিউশন দেওয়া, আবাসিক বৃদ্ধদের খাবারের আয়োজন করা, মন্দির প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করা, বস্ত্র বিতরণ ইত্যাদি সেবামূলক কাজেও জড়িত এই করুণাময়ী কালীমন্দির।